‘নদীরক্ষায় আমাদের কিছুটা নির্দয় হতে হবে’
২১ মার্চ ২০১৯ ১৭:৩৭
ঢাকা: নদীরক্ষার জন্য প্রয়োজনে কিছুটা নির্দয় হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে উচ্চ আদালত তুরাগ নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করেছেন। এখন নদীর প্রাণ বাঁচানোর জন্য নির্দয় হলেও আমাদেরকে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এই এলাকায় কিন্তু আগেও উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে। আবার লোকজন এসে বসতি করেছে। এবার আর তেমনটা হবে না। কারণ আমরা এবার কোনো মানবিকতা দেখাব না। নদীরক্ষার প্রয়োজনে নির্দয় হতে হবে আমাদের।’
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) তুরাগ নদীর দুই তীরে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সময় সারাবাংলার কাছে এই মন্তব্য করেন তিনি।
তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা নদীর দুই তীরকে দখলমুক্ত করতে জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে উচ্ছেদ অভিযান। দ্বিতীয় ধাপের নবম দিন পর্যন্ত গাবতলী সেতু থেকে দিয়াবাড়ি জোহরাবাদ পর্যন্ত নদী তীরের অবৈধ স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিআইডাব্লিউটিএ। নদী খরস্রোতা করে তুলতে মার্চের ২৮ তারিখ পর্যন্ত চলবে এই অভিযান।
অভিযান প্রসঙ্গে এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, ‘এক পাশে বেড়িবাঁধ, এক পাশে নদী। মাঝখানে লোকজন বসতি বানালো কিভাবে? বাঁধ তো নদীর পাড়েই দেওয়া হয়েছিল! এখানে যারা বাড়িঘর বানিয়েছে, তারা জলসীমা ভরাট করে নদীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। তারা বলছে, এটা তাদের পৈতৃক ভিটা। এই দাবি মোটেও সত্য নয়। পৈতৃক ভিটা এমন বালি দিয়ে ভরাট থাকে!’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বালি কিসের বালি, সেটা সবাই জানে। কয়েকদিন আগে নদীর জমি ভরাট করে এখনও ভবন নির্মাণ করছে! দখলদারদের কারণে নদীর সৌন্দর্য কেউ দেখতে পারছে না। এরা দুই পাশ থেকে ভরাট করতে করতে জীবন্ত একটা নদীকে মেরে ফেলেছে। এটা চলতে দেওয়া যায় না।’
রাজধানীর গাবতলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা এসে তুরাগ নাম নিয়ে চলে গেছে গাজীপুর পর্যন্ত। এই নদীকে কেন্দ্র করেই মিরপুর, আশুলিয়া, সাভার ও গাজীপুর অঞ্চলে গড়ে উঠেছে অসংখ্য জনপদ। তবে কালের বিবর্তনে এক সময়ের স্রোতস্বিনী এই নদী এখন মৃতপ্রায়। মিল-কারখানার আবর্জনা বুকে ধারণ করে নষ্ট হয়ে গেছে এর পানিও। সেই সুযোগে নদীর দুই তীরকে ভরাট করে বসতি নির্মাণ করেছে দখলদাররা।
তবে তুরাগ তীরের উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর বেশ কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন, পৈতৃক ভিটা থেকে তাদেরকে সরিয়ে দিচ্ছে বিআইডাব্লিউটিএ। সারাবাংলার কাছে অভিযোগ করে তারা বলেন, আমরা ব্রিটিশদের সময় থেকে এখানে বসবাস করছি। যে জমিতে আমরা আছি, সেই জমির জন্য নিয়মিত খাজনাও পরিশোধ করছি। তারপরও বিনা নোটিশে আমাদেরকে এখান থেকে তুলে দিচ্ছে তারা। এমনকি কোনো ক্ষতিপূরণও দেয়নি। আমরা এখন কোথায় যাব? রাস্তায় বসা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। এ সময় নিজেদের দাবির পক্ষে জমির দলিলসহ বিভিন্ন কাগজপত্রও দেখান অভিযোগকারীরা।
এদিকে, ২০০০ সালের জলাধার সংরক্ষণ আইনে নদী তীরের প্রাকৃতিক জলাশয় বা নিম্নভূমি ভরাট করাকে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। রাখা হয়েছে এক থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধানও। এই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই গাবতলী এলাকার জোহরাবাদ, বড়বাজার, পালপাড়া, আমিনবাজার থেকে দিয়াবাড়ি আশুলিয়া পর্যন্ত নদীর মাঝ পর্যন্ত দখল করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রয়োজন পড়লে আমরা অবশ্যই আইনের আশ্রয় নেব। তবে এখনও আমরা সেটা নিয়ে ভাবছি না। যদি বাধা আসে কিংবা আবার নতুন করে এই স্থান দখলের পাঁয়তারা করা হয়, তখন আমরা অবশ্যই জলাধার সংরক্ষণ আইনে ব্যবস্থা নেব।’
২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক বৈঠকে ঢাকার চার পাশের নদী ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দূষণ বন্ধ ও নাব্য ফিরিয়ে এনে নদীরক্ষায় টাস্কফোর্স গঠন করে দেন। তারই ধারাবাহিকতায় এ উচ্ছেদ কার্যক্রম চলছে।
ছবি: সুমিত আহমেদ
সারাবাংলা/টিএস/টিআর