ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া ব্রেক্সিট নিয়ে কোনো চুক্তিতে এখনও মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেন দেশটির সংসদ। এর মধ্যেই ব্রেক্সিটের বিরোধিতা করে নতুন গণভোটের দাবিতে রাজপথে নেমেছেন দেশটির সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, ব্রেক্সিটের বাস্তবায়ন না হওয়াটাই হবে সবচেয়ে ভালো চুক্তি। ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন পিছিয়ে দিতে ইইউয়ের সম্মত হওয়ার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত ‘জনগণের হাতে ছেড়ে দেওয়া’র দাবি জানান তারা। যদিও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে জানিয়েছেন, ব্রেক্সিট ইস্যুতে নতুন করে গণভোট দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তার নেই।
এদিকে, ব্রিটিশ সংসদের ওয়েবসাইটে আর্টিকেল ৫০ (এই আইনের বলেই ইইউ থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া ব্রেক্সিট বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল) প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে দাখিল করা এক অনলাইন পিটিশনে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে ৪১ লাখ ৮০ হাজার সই জমা পড়েছে এই পিটিশনের পক্ষে।
আরও পড়ুন- ইইউর শর্ত অনুসারে ব্রেক্সিট চুক্তিকে সমর্থনের আহ্বান মে’র
রয়টার্স ও বিবিসি’র খবরে বলা হয়, শনিবার (২৩ মার্চ) লন্ডনের পার্ক লেন থেকে ব্রেক্সিটবিরোধী মিছিল শুরু হয়। পরে তারা ব্রিটিশ সংসদ অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। আয়োজকরা বলছেন, ব্রেক্সিটের বিরোধিতা করে এত বড় প্রতিবাদ এর আগে অনুষ্ঠিত হয়নি।
এর আগে, একাধিক প্রচেষ্টাতেও ব্রেক্সিটের জন্য যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে কোনো চুক্তিতে একমত হতে পারেননি ব্রিটিশ সংসদ সদস্যরা। শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সংসদ এ বিষয়ে কোনো চুক্তিতে একমত হতে ব্যর্থ হলে আগামী ১২ এপ্রিল কোনো চুক্তি ছাড়াই যুক্তরাজ্যকে বেরিয়ে যেতে হবে ইইউ থেকে।
ব্রেক্সিটবিরোধী এই মিছিল থেকে বক্তারা বলছেন, তিন বছরেও ব্রেক্সিট নিয়ে কোনো চুক্তিতে উপনীত হতে পারেননি দেশটির নেতারা। এ অবস্থায় কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন হলে তাতে অর্থনৈতিকভাবে সংকটের মুখে পড়বে যুক্তরাজ্য।
মিছিলে অংশ নেওয়া আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সোফি ল্যাথাম বলছেন, ব্রেক্সিট ইস্যুতে নতুন করে গণভোটের আয়োজন হয়তো পুরোপুর গণতান্ত্রিক সমাধান নয়। কারণ তাতে যেকোনো গণভোটকেই প্রশ্নের মুখে ফেলা হয়। তারপরও আমি আমার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের জন্য আরেকটি গণভোট চাই। কারণ ব্রেক্সিট ঘিরে বিদেশি মানুষদের প্রতি অহেতুক ভীতি, বর্ণবাদ ও জাতীয়তাবাদী যে বাগাড়ম্বর গণমাধ্যমগুলো ছড়িয়ে যাচ্ছে, আমি এর বিপক্ষে ভোট দিতে চাই।
লিন ওয়ার্থি নামের একজন প্রশ্ন রাখেন, ইইউয়ের মধ্যে থেকে আমরা নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকি। ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে আমাদের সন্তানেরাও কি একই সুবিধা পাবে?
৬২ বছর বয়সী রব ওয়ার্থি বলেন, ৬২ বছর বয়সে এসে এই প্রথম আমি কোনো একটি পক্ষে মত দিতে চাই। কারণ, এই দেশের কিংবা আমার সন্তান বা নাতি-পুতিদের কোনো ভবিষ্যৎ আমি দেখতে পাচ্ছি না। সবকিছু জগাখিচুড়ি পাকিয়ে গেছে এবং আমাকে একটি অবস্থান নিতেই হবে।
আরও পড়ুন- চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, আজ নতুন ভোট
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রাজনীতিবিদদেরও কারও কারও সমর্থন রয়েছে ব্রেক্সিবিরোধী এই আন্দোলনে। লেবার পার্টির উপনেতা টম ওয়াটসন, স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন, লন্ডনের মেয়র সাদিক খান, কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক ও বর্তমান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আন্না সোউবরি, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ডমিনিক গ্রিভের মতো সব রাজনীতিবিদরাও এতে অংশ নেন।
এর মধ্যে নিকোলা স্টার্জন বলেন, চুক্তিহীন ব্রেক্সিট ঠেকানোর এটিই ‘সুবর্ণ সুযোগ’। অন্যদিকে, টেরিজা মে নতুন করে গণভোট আয়োজন করলে তাতে সমর্থন দেওয়ার কথা রয়েছে টম ওয়াটসনের। আন্না সোউবরি বলেন, এখনকার পরিস্থিতি অসহনীয়। এবং আমি বিশ্বাস করি, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে এটিই (গণভোট) এখন একমাত্র পথ।
এ পরিস্থিতির জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে’কেই দায়ী করছেন রাজনীতিবিদরা। তার অদূরদর্শিতার কারণেই যুক্তরাজ্যকে এই সংকটের মুখে পড়তে হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। তবে তাই বলে মে’র পদত্যাগের যে দাবি উঠেছে, তাতেও সমর্থন দিচ্ছেন না তারা। মে’র নিজের দল কনজারভেটি পার্টিরই সাবেক হুইপ অ্যান্ড্রু মিশেল যেমন বলছেন, তিনি বিষয়টি বিচার করতে ভুল করেছেন, এটা নিয়ে সন্দেহ কম। তবে তাই বলে তাকে বদলে ফেলাটা হবে আরও অনেক বড় ভুল। এতে করে সমস্যার সমাধান মিলবে না।
সারাবাংলা/টিআর