গণতন্ত্রের আশায় থাইল্যান্ডে হচ্ছে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ নির্বাচন
২৪ মার্চ ২০১৯ ১৩:০৯
থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাধারণ নির্বাচন। ২০১৪ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পর হওয়া এই নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন ৫ কোটি ভোটার। রোববারের (২৪ মার্চ) এই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদে লড়ছেন ৬৮ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে নারী রয়েছেন ৮ জন।
নির্বাচন শুরু আগেই থাই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের নেওয়া বিভিন্ন বিতর্কিত ভূমিকার কারণে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। থাইল্যান্ডের গণতন্ত্রে বারবার হস্তক্ষেপ করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এছাড়া, রয়েছে দেশটির রাজপরিবারের প্রভাব। দুই মুখী থাই রাজনীতির ধারায় রয়েছে, রাজতন্ত্র ও সেনা সমর্থিতরা অপরদিকে প্রভাবশালী সিনাওয়াত্রা পরিবারের অনুসারী ও সরকারের বিরোধীরা।
থাইল্যান্ডের পার্লামেন্ট ৭৫০ সদস্যের এবং দুই কক্ষ বিশিষ্ট। ক্ষমতা দখলের পর সেনাবাহিনীর শাসন ব্যবস্থায় কিছু মৌলিক পরিবর্তন এনেছে। ২০১৬ সালে জারি করা নিয়মে ২৫০ আসনের উচ্চ কক্ষ সিনেটের সদস্যরা সেনাবাহিনীর নিয়োগকৃত। অপরদিকে ৫০০ আসনের নিম্ন পরিষদের সদস্যরা ভোটে নির্বাচিত। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে হলে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের মিলিতভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন পাওয়ার নিয়ম। সুতরাং সামরিক সমর্থিত প্রার্থী নিম্ন পরিষদে মাত্র ১২৬ জন সদস্যের সমর্থন পেলেই নির্বাচিত হতে পারবেন।
এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সেনা ও রাজতন্ত্র সমর্থিত ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর পিস অ্যান্ড অর্ডারের (এনসিপিও) প্রার্থী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রাউত চান-ওচা। তার সঙ্গে লড়বেন, প্রধান বিরোধী ফিউ থাই পার্টির (পিটিপি) নারী প্রার্থী সুদারাত কিউারপাহান। তিনি নির্বাসিত সাবেক জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্তার অনুসারী। নির্বাচনে আরও আলোচনায় রয়েছে, ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টির থানাথ্রন জংগাগুরাঙ্কিত এবং দ্যা ডিমোক্রেটিক পার্টির অভিজিৎ বিজয়ভাব।
এর আগে, রাজকন্যা উবলরতানাতে প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দেওয়ায় নির্বাচন কমিশন নিষিদ্ধ করে থাইল্যান্ডের অন্যতম বিরোধী দল থাই রাকসা চাক পার্টিকে। কারণ কমিশনের মতে, রাজপরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে জড়ানো ঠিক নয়। পাশাপাশি দলের নির্বাহী বোর্ডের সদস্যদের ১০ বছরের জন্য রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ উবলরতানা বর্তমান থাই রাজা মাহা ভাজিরালংকর্নের বড় বোন এবং প্রয়াত রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজের প্রথম সন্তান। উবলরতানাও থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে সমর্থন করেন। রাকসা চাক পার্টিকে নিষিদ্ধ করায় বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকার সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হয়েছে। দল নিষিদ্ধ করায় থাই রাকসা চার্ট দলের প্রধান প্রিচাপোল পংপানিচ প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, আদালতের রায় মেনে নিয়েছেন কারণ তারা সবাই দেশের ভালো চান৷
আরও পড়ুন: থাই রাজকুমারীর প্রার্থিতা বাতিল
সিনাওয়াত্রা সমর্থিত জোটরা লাল শার্ট নামে পরিচিত। তারা অধিকতর দরিদ্র ও গ্রামীণদের প্রতিনিধি। অপরদিকে রাজতন্ত্র ও সেনা সমর্থিতরা পরিচিত ইয়োলো শার্ট নামে। উভয় মেরুর সংঘাত থাই রাজনীতিতে দশকের পর দশক আধিপত্য বিস্তার করে আছে।
এই নির্বাচনে বিরোধীদের নির্বাচনি প্রচারণায় বাধা দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জেনারেল প্রাউত চান-ওচার পাঁচ বছর আগে এক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। ক্ষমতা নেয়ার পর পরই তিনি কয়েক মাসের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রাখেননি। তার সামরিক জান্তা দুর্নীতি দমন, ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি পালন করেনি বরং সামরিক জান্তারা একটি দল গঠন করে। সেই দলের প্রার্থী হিসেবে প্রাউত চান-ওচার নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন ফের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য।
বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সেনা সমর্থিত শাসন থেকে মুক্তি চায় থাইল্যান্ডের তরুণ প্রজন্ম। তাই ফিউ থাই পার্টির সুদারাত কিউারপাহানের নির্বাচনে ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও থাই রাজনীতিতে নারীরা প্রায় অবহেলিত। বর্তমান পার্লামেন্টের মাত্র ৫.৪ ভাগ নারী। এই হারে বিশ্বের ১৯৩ দেশের মধ্যে থাইল্যান্ড ১৮২ তম। এছাড়া মন্ত্রী পদমর্যাদায় কোনো নারী নেই থাইল্যান্ডে।
রাজতন্ত্র বিলোপের পর ১৯৩২ সাল থেকে থাইল্যান্ডে ২৫ বার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিপরীতে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে ১৯ বার এবং সেনারা ক্ষমতা দখল করে ১২ বার। থাই সেনারা দেশটির রাজনীতি সংস্কারে ২০ বছরের পরিকল্পনা নিয়েছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে বেঁধে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা।
২০০১ সাল থেকে থাইল্যান্ডে হওয়া সবগুলো নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন সিনাওয়াত্রা পরিবার। তবে ২০০৬ সালে থাকসিন ও ২০১৪ সালে ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে ক্ষমতাচ্যুত করে থাই সেনাবাহিনী।
খবর, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ানের।
সারাবাংলা/এনএইচ