থাইল্যান্ডের নির্বাচনে এগিয়ে রয়েছে সেনা সমর্থিত দল
২৫ মার্চ ২০১৯ ০৭:৩৪
থাইল্যান্ডের বহুল প্রতীক্ষিত নির্বাচনে এগিয়ে রয়েছে সেনা সমর্থিত রাজনৈতিক দল পালাং প্রাচারাত পার্টি (পিপিআরপি)। প্রাথমিক ফলাফল অনুসারে, দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসীন হতে যাচ্ছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা। খবর দ্য ব্যাংকক পোস্ট ও দ্য স্পেক’র।
রাজনৈতিক জটিলতায় ভুগবে থাইল্যান্ড
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৯৩ শতাংশ ভোট গণনা শেষ হয়েছে। থাইল্যান্ডের নির্বাচন কমিশন অনুসারে, প্রাথমিক ফলাফল হিসেবে ৭৫ লাখের বেশি ভোট নিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে পিপিআরপি। কিন্তু পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দাবি করার জন্য এই ভোট পর্যাপ্ত নয়।
এদিকে, পিপিআরপি’র পরেই রয়েছে নির্বাসিত সাবেক জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার দল ফিউ থাই পার্টি (পিটিপি)। বর্তমানে সুদারাত কিউরাপাহান নেতৃত্বাধীন দলটি পেয়েছে ৭০ লাখ ভোট।
প্রাথমিক ফল বিবেচনায় বিশ্লেষকদের ধারণা, সরকার গঠনে কয়েক সপ্তাহ রাজনৈতিক জটিলতায় ভুগবে থাইল্যান্ড।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পর হওয়া এই নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন ৫ কোটি ভোটার। রোববারের (২৪ মার্চ) এই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৬৮ জন। তাদের মধ্যে নারী রয়েছেন ৮ জন।
৬ শতাংশ ভোট বাতিল
থাইল্যান্ডের পার্লামেন্ট ৭৫০ সদস্যের এবং দুই কক্ষ বিশিষ্ট। ক্ষমতা দখলের পর সেনাবাহিনীর শাসন ব্যবস্থায় কিছু মৌলিক পরিবর্তন এনেছে। ২০১৬ সালে জারি করা নিয়মে ২৫০ আসনের উচ্চ কক্ষ সিনেটের সদস্যরা সেনাবাহিনীর নিয়োগকৃত। অপরদিকে ৫০০ আসনের নিম্ন পরিষদের সদস্যরা ভোটে নির্বাচিত। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে হলে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের মিলিতভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন পাওয়ার নিয়ম। সুতরাং সামরিক সমর্থিত প্রার্থী নিম্ন পরিষদে মাত্র ১২৬ জন সদস্যের সমর্থন পেলেই নির্বাচিত হতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশন অনুসারে, নতুন গঠিত সামরিক জান্তা-বিরোধী দল ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টি তরুণ ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। দলটি পেয়েছে প্রায় ৫২ লাখ ভোট। তবে সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছে দেশটির সবচেয়ে পুরনো দল দ্য ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। প্রাথমিক ফল ঘোষণার পর দলটির নেতা অভিজিত বিজয়ভাব পদত্যাগ করেছেন।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সবমিলিয়ে প্রায় ৬ শতাংশ ভোট বাতিল করা হয়েছ। তারা জানিয়েছে, সোমবার (২৫ মার্চ) ভোটের ফলাফল সম্পর্কে আরও তথ্য জানানো হবে।
অনিয়ম
এদিকে, নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন পিটিপি’র সাধারণ সম্পাদক ফুমথাম ওয়েচায়াচাই। তিনি জানিয়েছেন, তার দল পূর্ণাঙ্গ ফলাফলের অপেক্ষা করবে। তারা বাতিল করা ও নষ্ট হওয়া ব্যালট যাচাই করতে চায়।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত ফলাফলের সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন। এছাড়া আমাদের নিজস্ব হিসেবও রয়েছে। আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার পর সব পরিষ্কার হবে।
প্রসঙ্গত, থাইল্যান্ডের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জেনারেল প্রায়ুথ চান-ওচার পাঁচ বছর আগে এক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। ক্ষমতা নেয়ার পর পরই তিনি কয়েক মাসের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রাখেননি। তার সামরিক জান্তা দুর্নীতি দমন, ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি পালন করেনি বরং সামরিক জান্তারা একটি দল গঠন করে। সেই দলের প্রার্থী হিসেবে প্রায়ুথ চান-ওচা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন ফের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য।
রাজতন্ত্র বিলোপের পর ১৯৩২ সাল থেকে থাইল্যান্ডে ২৫ বার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিপরীতে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে ১৯ বার এবং সেনারা ক্ষমতা দখল করে ১২ বার। থাই সেনারা দেশটির রাজনীতি সংস্কারে ২০ বছরের পরিকল্পনা নিয়েছে।
২০০১ সাল থেকে থাইল্যান্ডে হওয়া সবগুলো নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন সিনাওয়াত্রা পরিবার। তবে ২০০৬ সালে থাকসিন ও ২০১৪ সালে ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে ক্ষমতাচ্যুত করে থাই সেনাবাহিনী।
সারাবাংলা/আরএ