সোনালী ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ, ১২ জনের নামে দুদকের চার্জশিট
২৫ মার্চ ২০১৯ ২০:১০
ঢাকা: সোনালী ব্যাংকের ৩৮ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ব্যাংকটির সাবেক মহাব্যবস্থাপক (জিএম), উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এবং ব্যবসায়ীসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (২৫ মার্চ) কমিশনের সভায় এ অভিযোগপত্র অনুমোদন দেওয়া হয় বলে সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন কমিশনের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য।
তিনি জানান, ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কালিয়কৈর থানায় অর্থ আত্মসাতের এ ঘটনায় কমিশন মামলা করে। মামলায় আসামি করা হয় ফেয়ার কেমিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম, পরিচালক ফাতেমা ইসলাম ও লালবাগের বাকের হোসেন, জামির হোসেন, জরিনা আক্তার ও ওমর ফারুককে। তদন্ত শেষে সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল স্থানীয় কার্যালয়ের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক ও ডিজিএম শওকত আলী, ডিজিএম আবদুল কাদির খান, সাবেক গোডাউন কিপার কাম ক্লার্ক, বর্তমানে কৃষিভিত্তিক প্রকল্প অর্থায়ন বিভাগের কর্মকর্তা আবদুল মতিন, ফেয়ার কেমিক্যালসের সাবেক গোডাউন চৌকিদার, বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের সাপোর্টিং স্টাফ মো. সরওয়ার্দি, কালিয়াকৈর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক মো. সানোয়ার হোসেন ও মো. আবদুল ওহাবকেও এ ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়।
দুদকের তদন্ত সূত্র বলছে, ফখরুল ইসলাম গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার কৌচাকুড়ি মৌজায় ফেয়ার কেমিক্যাল নামে একটি নারকেল তেল উৎপাদন কারখানা স্থাপন করেন। তিনি নিজেই এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তার স্ত্রী ফাতেমা ইসলাম পরিচালক। এই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ধাপে ধাপে সোনালী ব্যাংকের মতিঝিলের স্থানীয় কার্যালয় (লোকাল অফিস) থেকে ২২ কোটি ৩০ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ঋণ মঞ্জুর করা হয়, যা প্রতিষ্ঠানটি উত্তোলন করে। ২০০৪ সাল নাগাদ ওই ঋণ সুদে-আসলে ৩৭ কোটি ২২ লাখ ৩ হাজার ৯৬৮ টাকায় দাঁড়ায়।
ঋণের বিপরীতে বিভিন্ন সময়ে কালিয়াকৈর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের পাঁচটি বন্ধকি দলিলের মাধ্যমে ৮৩ দশমিক ২৫ শতাংশ জমি, ওই জমির ওপর স্থাপিত/স্থাপিতব্য দালান, কারখানা, যন্ত্রপাতিসহ সবকিছু সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ের অনুকূলে বন্ধক রাখা হয়, যা এখনও বলবৎ রয়েছে। ঋণের টাকা পরিশোধ না করে অথবা ওই জমি বন্ধকি দলিলের শর্ত ও আমমোক্তারনামা দলিলের শর্ত অনুসারে ঋণ পরিশোধ ছাড়া বিক্রয়, হস্তান্তর, রূপান্তর, পরিবর্তন কিছুই করার অধিকার নেই।
এরপরও ফখরুল ইসলাম কালিয়াকৈর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-কবলা দলিলমূলে মো. বাকের হোসেন, বাকের হোসেনের স্ত্রী জরিনা আক্তার, ছেলে জমির হোসেন ও ভাগনে ওমর ফারুকের কাছে দেড় কোটি টাকায় ওই জমি বিক্রি করেন। জমি বিক্রি করার সময় ওই জমিতে ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা পাঁচ কোটি টাকারও বেশি যন্ত্রপাতি ছিল। এ ছাড়া কারখানার প্রায় ১৩ কোটি টাকার কাঁচামাল ছিল, যা বিক্রি করে দেওয়া হয়।
দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, ওই সব মালামাল তদারকির কাজে ব্যাংকের নিয়োজিত আবদুল মতিন ও মো. সরওয়ার্দি ব্যাংকের স্বার্থ অক্ষুণ্ন না রেখে ফখরুল ইসলামকে ওই সব পণ্য বিক্রি করে আত্মসাতে সহযোগিতা করেন। একইসঙ্গে বন্ধক মালামাল তদারকির জন্য শাখা ব্যবস্থাপক ও উপমহাব্যবস্থাপককে প্রতি তিন মাস পর পর সরেজমিনে পরিদর্শন করার নির্দেশনা থাকলেও তারা তা করেননি। দায়িত্বপ্রাপ্ত শাখা ব্যবস্থাপক ও জিএম শওকত আলী এবং আইসিডি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক আবদুল কাদির খান বন্ধককৃত জমি, স্থাপনা ও প্লেজ মালামাল কখনও পরিদর্শন করেননি। কাউকেও পরিদর্শনের নির্দেশ দেননি এবং আসামিরা ওই সম্পদ বিক্রি করে আত্মসাৎ করার পরও কোনো আইনি ব্যবস্থা নেননি। তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে ফখরুল ইসলাম ও ফাতেমা ইসলামকে ওই সম্পদ বিক্রি করে আত্মসাতে সহযোগিতা করেছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ব্যাংকে বন্ধক রয়েছে জেনেও বাকের হোসেন, জামির হোসেন, জরিনা আক্তার ও ওমর ফারুক ওই জমি কিনে ফখরুল ইসলাম ও ফাতেমা ইসলামকে ওই জমি আত্মসাতে সহযোগিতা করেছেন। একইসঙ্গে ব্যাংকের কাছে বন্ধককৃত জমি বিক্রি করে আত্মসাতের সঙ্গে দলিল লেখক সানোয়ার হোসেনও জড়িত। তিনি জমির মালিকানাসংক্রান্ত ২৫ বছরের ধারাবাহিকতা তল্লাশি করে জমি ব্যাংকের কাছে বন্ধকের বিষয়টি জেনেও ‘ওই জমি কোথাও দায়বদ্ধ নয়’ মর্মে মুসাবিদা লেখেন এবং নিজে স্বাক্ষর করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি বন্ধককৃত জমি বিক্রি করে আত্মসাতের বিষয়ে ফখরুল ইসলামকে সহযোগিতা করেছেন। দলিলে জমির শনাক্তকারী আবদুল ওহাব জমিটি ব্যাংকের কাছে বন্ধক আছে জেনেও তা গোপন করে ফখরুল ইসলামকে জমি বিক্রি করে আত্মসাতে সহযোগিতা করেছেন।
তদন্তে মামলার দুই তদন্ত কর্মকর্তা, দুদকের সহকারী পরিচালক ইকবাল হোসেন ও মুজিবুর রহমান মোট ৩৮ কোটি ৭২ লাখ ৩ হাজার ৯৬৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনেছেন আসামিদের বিরুদ্ধে।
সারাবাংলা/এসজে/টিআর