১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি
২৬ মার্চ ২০১৯ ১৮:৪০
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল রাত ও ‘গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘গণহত্যা প্রতিরোধ’ বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক প্যানেল আলোচনা। সোমবার (২৪ মার্চ) মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনায় মডারেটর, প্যানেলিস্ট ও বিষয় বিশেষজ্ঞগণ স্ব স্ব দেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণহত্যার উদাহরণ টেনে জানান, বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অবশ্যই হওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া, এই স্বীকৃতি এতদিনে না হওয়ায় দু:খ প্রকাশ করেন তারা।
আন্তর্জাতিক এই প্যানেল আলোচনার উদ্বোধনী ভাষণ দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন তিনি। তার বক্তব্যে উঠে আসে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কাল রাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ এর নামে রাজধানী ঢাকায় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত নির্মম ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত গণহত্যার কথা।
রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ২৫ মার্চ রাজধানী ঢাকাকে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করার সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানী বাহিনী বাংলাদেশে জেনোসাইড শুরু করে। তাই এটি শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, বিশ্ব ইতিহাসের জন্যও এক কালো দিন। একারণে এই দিনটিকেই ২০১৭ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, এরপর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয় ৩০ লাখ মানুষ। এত কম সময়ে কোথাও এত মানুষকে হত্যা করার ঘটনা পৃথিবীতে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর একারণেই এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহতম জেনোসাইডের ঘটনা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষজ্ঞ, ইতিহাসবিদ, কূটনীতিক ও বিদেশী সাংবাদিকগণ তথ্য-প্রমাণসহ পরিষ্কারভাবে এটিকে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছেন। এ কারণে এই গণহত্যার তথ্য প্রমাণের কোনো অভাব নেই।
স্থায়ী প্রতিনিধি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যাকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘের প্রতি জোর আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত মাসুদ আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী ও গোহত্যাকারীদের বিচারের ব্যবস্থা করেছেন। মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটসহ বিশ্বের কোথাও যেন গণহত্যা ও নৃশংসতার মত জঘন্য অপরাধের আর কোনো পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দৃঢ় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, গণহত্যা প্রতিরোধে বাংলাদেশ সবসময়ই বিশ্ব সম্প্রদায়ের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আর সেলক্ষ্যেই বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রত্যাশা করে মর্মে অভিমত ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিবের জেনোসাইড প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা অ্যাডামা দিয়েং বাংলাদেশ সফরে থাকায় আন্তর্জাতিক এই প্যানেল আলোচনাতে ভিডিও বক্তব্য প্রদান করেন, যা প্যানেল আলোচনা শুরুর আগে প্রচার করা হয়।
প্যানেলিস্টদের আলোচনায় উঠে আসে অতীতের সংঘটিত জেনোসাইডের তথ্য প্রমাণ ও উপাদান থেকে শিক্ষা নিয়ে কিভাবে সামনের দিনগুলোতে গণহত্যার মতো ভয়াবহ ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায় সে বিষয়গুলো। এছাড়া গণহত্যা সংগঠনকারী কোনো অবস্থায়ই যেন আইনের হাত থেকে পার পেতে পারেন না তার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জোনোসাইডের পুনরাবৃত্তি বন্ধে সকলকে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তারা।
আলোচনায় আর্মেনিয়া, কম্বোডিয়া, রুয়ান্ডা, বসনিয়া ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত গণহত্যা বন্ধে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের ব্যর্থতার বিষয়টিও উঠে। মিয়ানমার কর্তৃক সংঘটিত মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধন ও গণহত্যার কথা উল্লেখ করেন আলোচকগণ। এক্ষেত্রে উদার মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য তাঁরা বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
সারাবাংলা/এনএইচ