Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘পেছন থেকে একজন এসে লাথি মারে ভাতের থালায়!’


২৬ মার্চ ২০১৯ ১৯:১০

ঢাকা: ‘‘পাকিস্তানি সেনারা ঘরে ঢুকেই প্রশ্ন করে, ‘দাক্ষী কোন হ্যায়?’ জবাবে ‘আমি’  বলেই নিজেকে দেখালেন ডা. অমলেন্দু দাক্ষী।  আর তখনই  ‘শালা শুয়ার কা বাচ্চা, তুম শুনা নেহি, ম্যায় তুমকো বুলাতা হ্যায়?’ চুপ থাকলেন ডাক্তার। পেছন থেকে একজন এসে লাথি মারলো ভাতের থালায়।  সামনের সেনাটি কষে চড় মারলো ডাক্তারের গালে। মাথা নিচু করে সহ্য করলেন ডাক্তার। এবার যেন আদেশ পেয়ে গেলো অন্য সেনারা। শুরু হলো কিল। লাথি।’’  ১৯৭১ সালে পাবনা শহরে বাসা  থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া শহীদ ডা. অমলেন্দু দাক্ষীর স্ত্রী শোভারাণী দাক্ষী এভাবে স্মৃতিচারণ করেন।  তার  তার এই স্মৃতিচারণ উঠে এসেছে রশীদ হায়দার সম্পাদিত ‘স্মৃতি ১৯৭১’ বইতে।

বিজ্ঞাপন

শোভারাণীর জবানি আরও বলেন, ‘ঘটনার সময় মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন ডাক্তার দাক্ষী।  চিৎকার করে ছুটে এলাম আমি, ছুটে এলো ছেলেমেয়েরা। সবাই মিলে জড়িয়ে ধরলাম ডাক্তারকে। একেবারে আড়াল করে। যেমন আড়াল করে রাখে তা-দেওয়া মুরগি তার ছানাদের।  রাইফেলের বাট উঁচু করলেন একজন সেনা। ঝনঝন শব্দে খান খান হয়ে গেলো কাঁচের আলমারি। …আঁকড়ে ধরলো কচি কচি ছেলেমেয়েদের ডানা। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হলো তাদের। হাত ধরে টেনে তোলা হলো ডাক্তারকে।’

বিজ্ঞাপন

ডাক্তার দাক্ষীর স্ত্রী আরও বর্ণনা করেন, ‘তারপর বের করার জন্য দরজার দিকে ধাক্কা। ছুটে এগিয়ে গেলাম আমি। পেছন থেকে শাড়ির আঁচল টেনে ধরলো একজন। তারপর সজোরে লাথি।  চিৎকার দিয়ে বসে পড়লাম আমি। বের করে নিয়ে যাওয়া হলো ডাক্তারকে। আমার হঠাৎ মনে হলো, উনি খালি গায়ে রয়েছেন। তাড়াতাড়ি উঠে কিছুক্ষণ আগেই খুলে রাখা জামা-গেঞ্জি নিয়ে জড়ো করে ছুড়ে দিলাম।’

শোভারাণীর জবানিতে জানা যায়, সেদিন ছিল ২৬ মার্চ, শুক্রবার। পাবনা শহর থমথমে। রাত ৯টার দিকে মাত্রই বাইরে থেকে ফিরে স্ত্রীকে নিয়ে খেতে বসেছিলেন ডা. অমলেন্দ দাক্ষী। শোভারাণী দাক্ষী বলেছেন, ‘তার সঙ্গে খাবার টেবিলে ওই আমার শেষ বসা। এমন সময় বাইরে জিপের শব্দ। তারপর বুটের আওয়াজ। সচকিত হলেন ডাক্তার। বুটের শব্দ আরও এগিয়ে এলো। মুখের ভাত মুখে রেখেই শুনছেন তিনি। চিবোতে পারছেন না। দাঁতগুলো যেন স্থবির হয়ে আসছে ডেন্টিস্টের। দরজায় অনবরত লাথির শব্দ…।  বুটের লাথি।  আমি এগিয়ে গেলাম দরজা খুলতে। তার আগেই পুব পাশের দেয়াল ভেঙে ফেলেছে পাক সেনারা। ঘরে ঢুকে পড়েছে চার-পাঁচজন। এরপরই ভাতের থালার সামনে থেকে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের সামনে থেকে পাক সেনারা ধরে নিয়ে যায় ডা. অমলেন্দু দাক্ষীকে।’

আরও পড়ুন: ১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি

শোভারাণী দাক্ষী এরপর বলেছেন, ‘ডাক্তার সাহেবের সঙ্গে পাবনা শহরের আরও অনেককেই সে রাতে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। সে গাড়িতেই ছিলেন আমিনুদ্দিন সাহেব। পাবনা পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান, বিচক্ষণ আইনজীবী, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আমিনুসদ্দিন সাহেবের এ কী অবস্থা! চোখে-ুমখে বিষণ্নতা।’

ডা. অমলেন্দু দাক্ষীর স্ত্রী শোভারাণী আরও বলেন, ‘হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া আবদুল খালেক তালুকদারের মাধ্যমে তার (ডা. অমলেন্দু দাক্ষী) মৃত্যুর ঘটনাটা অনুমান করতে পারি। শহরের টেলিফোন একচেঞ্জ ভবনে তাকে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালায় ২৮ মার্চ রাত ৮টা পর্যন্ত। ইতোমধ্যে মুক্তিবাহিনীর দামাল ছেলেদের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে প্রায় ৩০ জন সঙ্গীর মৃতদেহ ফেলে পাক হানাদারার আশ্রয় নেয় বিসিক শিল্প নগরীতে।  সেখানে ডা. অমলেন্দু দাক্ষী ছাড়াও আরও ছিলেন আমিনুদ্দিন, সাঈদ তালুকদার, খালেক তালুকদার ও রামেজ পাগল। মাঝে দীর্ঘ সময় পার হয়েছে, এর মধ্যে কোনো খাবার নেই, এমনকী জলও নেই। আমিনুদ্দিনই তাকে তার বরাদ্দ জল থেকে প্রথম জল খাওয়ান।’

শোভারাণী আরও বলেন, ‘২৯ মার্চ মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা বিসিক শিল্পনগরী আক্রমণ করলে পরাজয় আসন্ন জেনে পাক মেজর পাগল সবাইকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে। সবাইকে এক দড়িতে বেঁধে টেনে-হেঁচড়ে একটা ট্রেঞ্চের মধ্যে ফেলে দেয়। আহত খালেক তালুকদার বেঁচে যান অলৌকিকভাবে। তার কথা থেকেই মনে হয়, মৃত্যুর আগে তিনি ও সহবন্দিরা যে অত্যাচারের শিকার হয়েছেন।’

সারাবাংলা/জেএ/এমএনএইচ

মুক্তিযুদ্ধ

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর