ঢাকাজুড়ে বাঙালির প্রাণহীন দেহ
২৭ মার্চ ২০১৯ ০১:৪১
২৭ মার্চ, ১৯৭১। সকালে সাময়িকভাবে কারফিউ তুলে নিয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থানরত সব বিদেশি সাংবাদিককে কড়া সেনাপ্রহরায় সরাসরি বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। বিশেষ বিমানে তাদের ঢাকা ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। সেনাবাহিনীর দৃষ্টি এড়িয়ে দু’জন সাংবাদিক অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় থেকে গিয়েছিলেন। তারা হলেন— ডেইলি টেলিগ্রাফের সাইমন ড্রিং ও এএফপির ফটোগ্রাফার মিশেল।
ঢাকা শহরজুড়ে তখন পাকহানাদার বাহিনীর নির্মমতার শিকার হাজার হাজার নিরীহ বাঙালির প্রাণহীন দেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে। আর বুড়িগঙ্গার ওপারে জিঞ্জিরায় মুক্তিযোদ্ধারা সমবেত হতে থাকেন। কারফিউ প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা শহর ছেড়ে দলে দলে নাগরিকরা অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে থাকে।
চট্টগ্রাম শহরের চারপাশসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড লড়াই শুরু হয়। দেওয়ানহাট থেকে পাকসেনাদের চারটি গাড়ি হালিশহরের দিকে এগোতে থাকলে ল্যান্স নায়েক আবদুর রাজ্জাক অতর্কিতে পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ করে বেশ কয়েকজনকে হত্যা করেন এবং গাড়িটি ধ্বংস করে দেন। ইপিআর সৈনিকরা এখান থেকে বেশকিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেন।
সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান ইংরেজিতে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। মেজর জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমাদের মহান জাতীয় নেতা এবং বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। আমি আরও ঘোষণা করছি যে, শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের বাংলাদেশের সাত কোটি জনগণের নির্বচিত প্রতিনিধিদের একমাত্র নেতা। আমি তাই আমাদের মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশ, বিশেষভাবে পরাশক্তিসমূহের কাছে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী পরিচালিত গণহত্যা বন্ধ করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’
ঘোষণায় আরও বলা হয়, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী দ্বারা আইনসম্মত নির্ধারিত প্রতিনিধিদের বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যা দেওয়া একটি নির্মম কৌতুক এবং এমন এক স্ববিরোধিতা যা কারো দৃষ্টি এড়াতে পারে না। আমাদের নতুন রাষ্ট্রের অনুসৃত নীতিমালা প্রথমত নিরপেক্ষতা, দ্বিতীয়ত শান্তি এবং তৃতীয়ত সবার প্রতি বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়। আল্লাহ্ আমাদের সহায় হোন। জয় বাংলা।’
এদিকে, ভারতীয় লোকসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ প্রতিরোধ যুদ্ধ সম্পর্কে বলেন, পূর্ববঙ্গের সমগ্র জনগণ একবাক্যে গণতান্ত্রিক কর্মপন্থা গ্রহণ করেছে। একে আমরা অভিনন্দন জানাই। ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ভারত সরকার পূর্ববঙ্গের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে সজাগ রয়েছে এবং যথাসময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
সারাবাংলা/টিআর