পুলিশের নতুন তথ্য, আবরারকে সিরাজুল নয় চাপা দেন ইয়াছিন
২৭ মার্চ ২০১৯ ১৪:০৯
ঢাকা: সুপ্রভাত পরিবহনের বাসের চাপায় প্রাণ হারিয়েছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী। তবে এ ঘটনার নতুন তথ্য দিয়েছে পুলিশ। আবরারকে ওই বাসের চালক সিরাজুল ইসলাম চাপা দিয়েছিল বলে এতদিন জানা গেলেও এখন পুলিশ বলছে, ওই সময় বাসটি চালাচ্ছিলেন কন্ডাক্টর মো. ইয়াছিন আরাফাত। শুধু তাই নয়, ওই সময় সিরাজুল বাসেই ছিলেন না। আবরারকে চাপা দেওয়ার আগেই শাহজাদপুর এলাকায় অন্য এক শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়ার সময়ই সিরাজুলকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়।
সুপ্রভাত পরিবহনের ওই বাসের কন্ডাক্টর ইয়াছিন ও হেলপার মো. ইব্রাহীমকে গ্রেফতারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ এসব তথ্য জানতে পেরেছে। বুধবার (২৭ মার্চ) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন।
আরও পড়ুন- আবরারের আগে আরেক তরুণীকে ধাক্কা দেয় সুপ্রভাতের বাসটি!
কন্ডাক্টর ইয়াছিন ও হেলপার ইব্রাহীমকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে ওই দিনের ঘটনা বর্ণনা করেন ডিএমপির ডিবি শাখার অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন। তিনি বলেন, ‘ওই দিন ঘটনাস্থলের কিছু দূরেই সুপ্রভাত পরিবহনের ওই বাসটি গার্লস ল্যাবরেটরি কলেজের এক ছাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে গুরুতর আহত করে। সেখানে সাধারণ জনতার হাতে ধরা পড়ে বাসটির মূল চালক সিরাজুল। এসময় বাসটি রক্ষায় এর মালিকের নির্দেশে গাড়ির কন্ডাক্টর ইয়াছিন দ্রুত বাসটি নিয়ে পালিয়ে যেতে গেলে বেপরোয়া গতির কারণে আবরার খুন হয়’।
আব্দুল বাতেন বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি উত্তর ক্যান্টনমেন্টের একটি টিম চাঁদপুরের একটি ইটভাটা থেকে বাসটির কন্ডাক্টর ইয়াছিন আরাফাতকে ও মধ্যবাড্ডা থেকে হেলপার ইব্রাহিমকে গ্রেফতার করে। এরপর তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য।
গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে বাতেন বলেন, ওই দিন সকাল ৬টার দিকে সদরঘাট থেকে গাজীপুরার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে সুপ্রভাত পরিবহনের ওই বাসটি। বাসটি শাহজাহাদপুরের বাঁশতলা এলাকায় পৌঁছালে মিরপুর আইডিয়াল গার্লস কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সিনথিয়া সুলতানা মুক্তাকে ধাক্কা দিয়ে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় বাসটির যাত্রী ও সাধারণ জনতা চালক সিরাজুলকে আটক করে ট্রাফিক পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ তাকে গুলশান থানায় পাঠায়। পরে বাসটি চালিয়ে নিয়ে যান কন্ডাক্টর। যদিও পরে বসুন্ধরা গেট এলাকায় আবরারকে চাপা দেওয়ার সময় সবার ধারণা ছিল, সিরাজুলই চাপা দেন আরবারকে। তবে আমরা ঘটনার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পর অনুসন্ধান চালিয়ে ঘটনার মূল হত্যাকারী অন্যজনকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। আরে সে হলো বাসটির কন্ডাক্টর ইয়াসিন।
আব্দুল বাতেন বলেন, ইয়াছিনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, প্রথমে ছাত্রীটিকে ধাক্কা দেওয়ার পর সেখানে বাসটি আটকায় সাধারণ জনতা। এসময় হেলপার ও কন্ডাক্টর বাসের মালিক ননী গোপাল সরকারকে ফোন দিয়ে সাধারণ জনগণ বাসটি পুড়িয়ে ফেলতে পারে এমন আশঙ্কার কথা জানায়। এ সময় ননী গোপাল তাদের যেকোনো মূল্যে বাসটি বাঁচানোর কথা বলেন। এরপর কন্ডাক্টর দ্রুত বাসটি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় আবরারকে চাপা দেয়। তাই এ ঘটনায় মূল আসামি হিসেবে ইয়াছিনকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডের জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে।
অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন জানান, এ ঘটনায় কলেজছাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে আহত করার সময় আটক চালক সিরাজুল ও আবরারকে হত্যাকারী কন্ডাক্টর ইয়াছিনের বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করে আলাদা আলাদা তদন্ত চলবে। এ মামলায় একমাসের মধ্যেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে এবং ঘটনার মূল নির্দেশদাতা বাসটির মালিক ননী গোপালকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৯ মার্চ সকাল সাতটার দিকে রাজধানীর গুলশান থানাধীন বসুন্ধরা গেটের কাছে বেপরোয়া গতির সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের (মেট্টো-ব-১১-৪১৩৫) চাপায় নিহত হয় বিইউপির শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ।
সারাবাংলা/এসএইচ/জেএএম
আবরার আহমেদ চৌধুরী বাসের ধাক্কায় বিইউপি শিক্ষার্থীর মৃত্যু সুপ্রভাত পরিবহন