Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে গুলি ও বোমা ছোড়ে সন্ত্রাসীরা’


২৭ মার্চ ২০১৯ ১৫:০২

ঢাকা: রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার সময় আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করেছিল সন্ত্রাসীরা। সেই সময়ের গুলশান থানার ওসি (বর্তমানে শাহ আলী) সালাউদ্দিন মিয়া আদালতে এমনই সাক্ষ্য দিয়েছেন।

বুধবার (২৭ মার্চ) দুপুরে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে এ সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

সালাউদ্দিন মিয়া জানান, ‘২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনা স্থানে চলে যাই। সেখানে এসআই ফারুখসহ অনেক পুলিশ সদস্যকে দেখতে পাই। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে গুলি ও বোমা নিক্ষেপ শুরু করে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ আশেপাশের এলাকা ঘিরে ফেলে। রাত সাড়ে ১০ টার দিকে ৭৯/২০ নম্বর বাড়ীর পাশে গ্রেনেড ও গুলিবর্ষণ করতে থাকে সন্ত্রাসীরা। ওই সময় গুলশান থানার ওসিসহ ৩০/৩৫ জন গুরুতর আহত হয়। এরপর আহতদের পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরকিছু সময় পর বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিনের মৃত্যুর খবর শুনতে পাই। ডিপ্লোম্যাটিক ও বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দেশি-বিদেশিদের উদ্ধারে অভিযান চালাই।’

তিনি আরও বলেন, হামলার ঘটনায় নিহত দেশি-বিদেশি নাগরিকদের মরদেহগুলি সুরতহালের জন্য ব্যবস্থা নেই। এরপর গত ৪ জুলাই গুলশান থানার এসআই রিপন কুমার দাস বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। আমি উক্ত মামলার বক্তব্য রেকর্ড করি।

এরপর আসামি পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ ওসি সালাউদ্দিনকে জেরা করেন। জেরা শেষে আদালত পরবর্তী সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য আগামী ৩ এপ্রিল দিন ঠিক করেন।

বিজ্ঞাপন

এ মামলায় এখন পর্যন্ত ২৬ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

মামলাটিতে ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ওই বছরেরই ২৯ আগস্ট পলাতক আসামি মো. শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদের সম্পত্তি ক্রোক এবং তাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেন আদালত।

আসামিরা হলেন—অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশিদ ও শরিফুল ইসলাম।

গত বছরের ২৩ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির মামলাটির চার্জশিট ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম (সিএমএম) আদালতে দাখিল করেন। এরপর ২৬ জুলাই সিএমএম আদালত মামলাটি ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দেন।

অন্যদিকে, চার্জশিটে ২১ জন আসামির নাম থাকলেও তাদের মধ্যে ১৩ জন বিভিন্ন সময় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হয়। এই ১৩ জনকে অব্যাহতি দিয়ে বাকি আট জনকে অভিযুক্ত করা হয় চার্জশিটে।

মামলাটিতে গত ৮ আগস্ট আট আসামির বিরুদ্ধে দাখিল করা চার্জশিট গ্রহণ করেন আদালত। চার্জশিটে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমের বিরুদ্ধে ওই ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় ইতালির ৯ জন, জাপানের সাত জন, ভারতীয় একজন ও বাংলাদেশি দুজন নাগরিক নিহত হন। রাতভর সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলার পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর অপারেশন থান্ডারবোল্ড মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে। পরে সেখান থেকে পাঁচ জঙ্গির সঙ্গে রেস্তোরাঁর প্রধান শেফ সাইফুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার হয়। আর সাইফুলের সহকারী জাকির হোসেন শাওন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

একই ঘটনায় সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের গ্রেনেডের আঘাতে রেস্তোরাঁর বাইরে নিহত হন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন খান। পাঁচ জঙ্গিসহ শেফ সাইফুল ইসলাম ও সহকারী শেফ শাওনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে দীর্ঘদিন পরে থাকার পর বেওয়ারিশ ঘোষণা করে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সারাবাংলা/এআই/জেএএম

হলি আর্টিজান হামলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর