Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দ্বিতীয় শ্রেণির মিশুর এক চিঠিতেই সেই ইটভাটা বন্ধ


২৭ মার্চ ২০১৯ ২২:৫৪

ঢাকা: দিনাজপুর জেলার শিশুশিক্ষার্থী মায়িশা মনাওয়ারা মিশু স্কুলের পাশের ইটভাটা সরাতে চিঠি লেখে দিনাজপুর জেলার জেলা প্রশাসককে। মিশু পার্বতীপুর উপজেলার হয়বতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলের পাশের সে ইটভাটার কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসককে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মায়িশার লেখা চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। জেলা প্রশাসককে সালাম দিয়ে চিঠিতে মায়িশা লিখেছে, ‘আমাদের স্কুলের পাশে বিপ্লব নামে একজন লোক ইটের ভাটা দিয়েছে। ভাটার কালো ধোয়ায় (ধোঁয়া) আমাদের শ্বাসকষ্ট হয়। পরিবেশে খতি (ক্ষতি) হয়। চোখ জালা (জ্বালা) করে। এখন আবার স্কুলের পাশে মুক্তা নামের এক লোক আরেকটা ভাটা দিতেছে। তাহলে আমাদের আরও কষ্ট হবে। আমরা কীভাবে বাঁচবো? আপনি আমাদের বাঁচান।
ইতি, মায়িশা মানওয়ারা মিশু, দ্বিতীয় শ্রেণি, রোল-২। ’

বিজ্ঞাপন

চিঠির সঙ্গে মায়িশা তার বাবার মোবাইল নাম্বারও দিয়ে দিয়েছে।

মায়িশার বাবা মমিনুল ইসলাম নিজেও গোবিন্দগঞ্জের একটি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। সারা বাংলাকে মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘গত তিনদিন আগে মায়িশা এ চিঠি লেখে। ‘

এর পেছনের গল্প জানতে চাইলে মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘একদিন স্কুল থেকে ফিরে মেয়েটা বলে, বাবা, আমার চোখ জ্বালা করছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। ‘ ইটভাটার কালো ধোঁয়ার জন্য এমনটা হতে পারে জানালে মেয়ে বলে, ‘তাহলে এটা বন্ধ করো।’ মেয়েকে বললাম, ‘আমাদের তো সে ক্ষমতা নেই। এটা করতে পারেন ডিসি স্যার। তখন মেয়ে এ চিঠি লেখে, যদিও পরে আমি সেটা দেখেছি। কিন্তু চিঠি আমার মেয়েটা নিজের হাতে, নিজের বুদ্ধিতে লিখেছে।’’

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে অ্যাড্রেস করে লিখলেও চিঠিটি আমাকে দেওয়া হয়নি। তবু চিঠিটি পড়ার পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি, এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার জন্য। পরে খোঁজ নিতে দেখা যায়, এই ইটভাটা দুই বছর আগে নির্মাণ করা হলেও তারা পরিবেশ অধিদফতর থেকে কোনো ছাড়পত্র নেয়নি। পরিবেশ অধিদফতর থেকে এ বিষয়ে খোঁজ নিলে তারা উচ্চ আদালতে রিট করে। সেই রিটের আদেশে বলা আছে, তারা যে অবস্থায় রয়েছে, সেই অবস্থাতেই থাকবে।’

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘‘আমরা এই ভাটাটি ভাঙার জন্য কয়েকবার পদক্ষেপ নিলেও রিটের জন্য সেটি করা যায়নি। তারপরও আজ মায়িশার চিঠির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ভাটার মালিককে ডেকেছি। তাকে ‘মোটিভেশনাল ওয়ার্ক’-এর মাধ্যমে তার এই ইটভাটার ‘অ্যাক্টিভিটিস’ বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি আপাতত।’’

মাহমুদুল আলম বলেন, ‘এই জেলায় প্রায় ২৫৪টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ৪৭টি ইটভাটা নিয়মিতভাবে পরিবেশগত ছাড়পত্র নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। বাকিগুলো উচ্চ আদালতে রিটের মাধ্যমে চালায়। কিছুদিন পরপর উচ্চ আদালতের এই নির্দেশ নবায়ন করে নিয়ে আসে। এভাবেই চলছে এখানে। ‘ তিনি বলেন, ‘তবে এই রিটের বিষয়ে এখন সরকারকে এখন চিঠি লিখবো। আইন মন্ত্রণালয়, কেবিনেট বিভাগ ও উচ্চ আদালতের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হবে, তারা যেন পদক্ষেপ নিতে পারে।’

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘মায়িশার স্কুলের পাশের ইটভাটার বিষয়টি আমরা নজরে নিয়েছি। কাজ করছি, তার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।’

রাত সাড়ে দশটায় এ প্রতিবেদন লেখার সময়ে মোবাইল ফোনে কথা হয় শিশু মায়িশার সঙ্গে। কেমন আছ, জিজ্ঞেস করতেই তার উত্তর, ‘ভালো নেই। ‘কেন ভালো নেই? এমন প্রশ্নে মায়িশা বলে, ‘ইট ভাটার ধোঁয়ার কারণে আমার শ্বাসকষ্ট হয়, নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, চোখ জ্বালা করে, বমি হয়।’

ডিসি স্যারকে চিঠি লিখতে কে বলেছে? জানতে চাইলে মায়িশা বলে, ‘বাবাকে বলেছিলাম। বাবা বলেছে, আমাদের ক্ষমতা নেই, কেবল ডিসি স্যারের ক্ষমতা রয়েছে। তখন এ চিঠি লিখেছি, বাবা কেবল দেখে দিয়েছেন।’

ডিসি স্যার ব্যবস্থা নিয়েছে, কাল থেকে ইটভাটা বন্ধ হয়ে যাবে। এমন খবরে মায়িশা বলে, ‘খুব ভালো হলো।’ এখন ধোঁয়া থেকে শিশুরা বেঁচে যাবে বলেও সে মন্তব্য করে।

সারাবাংলা/জেএ/এমএনএইচ

ইটভাটা শিশু মিশুর চিঠি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর