Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম ওয়াসার ‘গ্রাহক সমাবেশ’, জানেন না গ্রাহকরাই!


২৯ মার্চ ২০১৯ ০৭:১০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে ওয়াসার গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। তাদের অভাব-অভিযোগ শুনতে নগরীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে গ্রাহক সমাবেশের আয়োজন করেছিল ওয়াসা। কিন্তু শখানেক মানুষের এই জমায়েতে গ্রাহক ছিল মাত্র ১৫ থেকে ২০ জন। বক্তব্য রাখতে পেরেছেন ছয় জন, যার মধ্যে পাঁচ জনই ওয়াসার বর্তমান কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেছেন। মাত্র একজন বক্তা বিভিন্ন সমস্যার কথা জানাতে থাকলে তাকে মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

এর চেয়েও বড় বিষয়, গ্রাহক প্রতিনিধি হিসেবে যিনি ওয়াসার বোর্ড সদস্য, তিনিই সমাবেশে ছিলেন না। ওয়াসার ১৩ জন বোর্ড সদস্যের মধ্যে মাত্র দু’জন ছিলেন সমাবেশে। এর ফলে ওয়াসার গ্রাহক সমাবেশ পরিণত হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমাবেশে। গ্রাহক সমাবেশের নামে ভুরিভোজও চলে সেখানে।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর হোটেল র‌্যাডিসন ব্লু বে ভিউ’য়ে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

গ্রাহকদের অভিযোগ, তাদের অভাব-অভিযোগ জানতে আয়োজিত সমাবেশের কথা ওয়াসা প্রচার করেনি। পত্রিকায় কোনো বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি। পাড়া-মহল্লায় সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের এ বিষয়ে জানানো হয়নি। এর ফলে কার্যত সাধারণ গ্রাহকরা ওয়াসার এই সমাবেশের কথা জানতেই পারেননি। কেবল ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন গ্রাহক, যারা সমালোচনা করবেন না, তাদের খবর দিয়ে সমাবেশে নেওয়া হয়েছে।

সমাবেশে গ্রাহকদের মধ্যে বক্তব্য দেন ইঞ্জিনিয়ার শহীদুল আলম, আবু তাহের চৌধুরী, চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এ কে ফয়জুল্লাহ, কাট্টলী চৌধুরীপাড়ার মাহিরুল আলম চৌধুরী, খোকন চৌধুরী এবং চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বি-ব্লকের একজন বাসিন্দা।

সমাবেশে উপস্থিত সংশ্লিষ্টকরা জানিয়েছেন, ছয় জনের মধ্যে একমাত্র মাহিরুল আলম ছাড়া বাকি সবাই ওয়াসার কর্মকর্তাদের অকুণ্ঠ প্রশংসা করে বক্তব্য দিয়েছেন। পানি সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় তারা ওয়াসাকে ধন্যবাদও দিয়েছেন।

মাহিরুল আলম চৌধুরী বক্তব্য দিতে উঠে মঞ্চে থাকা ওয়াসার কর্মকর্তাদের দেখিয়ে বলেন, ‘গত দুই মাস ধরে আমার বাসায়সহ এলাকার অনেক লোক ঠিকমতো পানি পাচ্ছে না। এই মঞ্চে যারা বসে আছেন, তারা সবাই বিষয়টি জানেন। আমি সবার কাছে অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। পানি না পেলেও প্রতিমাসে আমাদের হাজার হাজার টাকা বিল দিতে হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

এই বক্তব্যের মাঝপর্যায়ে ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন) গোলাম হোসেন তাকে থামিয়ে দেন। মাহিরুলকে নামিয়ে দিয়ে তড়িঘড়ি করে গ্রাহক খোকন চৌধুরীকে বক্তব্য দিতে মঞ্চে নেওয়া হয়।

এদিকে ওয়াসার ১৩ জন বোর্ড সদস্যের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দু’জন কাউন্সিলর আবিদা আজাদ ও এফ কবির আহমেদ মানিক এবং শওকত ইসলাম ও জাফর সাদেক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বাকি ৯ জনই সমাবেশে যাননি।

সমাবেশে অনুপস্থিত বোর্ড সদস্যদের কয়েকজন জানিয়েছেন, তাদের কাউকে অনুষ্ঠানের মাত্র ২-৩ ঘণ্টা আগে, কাউকে এর আগের রাতে ফোন করে সমাবেশে যাওয়ার জন্য বলা হয়। তা-ও ওয়াসার দ্বিতীয় সারির কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ফোন করে দাওয়াত দেওয়া হয়। এতে বোর্ড সদস্যরা অপমানিত বোধ করেন।

জানতে চাইলে ওয়াসার বোর্ড সদস্য ও বিএমএ নেতা ডা.শেখ শফিউল আজম সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেকোনো সরকারি অথবা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বোর্ড হচ্ছে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। ব্যবস্থাপনার পরিচালক পদাধিকার বলে বোর্ডের সদস্য, কিন্তু কোনোভাবেই সদস্যদের ঊর্ধ্বে নন। আমাদের ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহেবের এমন অহমিকাবোধ, বোর্ড সদস্যদের তিনি একটি ফোনও করতে পারেন না। কখনো ডেপুটি সেক্রেটারি, কখনো অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি দিয়ে ফোন করান।’

‘আমরা যারা বোর্ড সদস্য, আমরা তো সেখানে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মনোনীত হয়ে গ্রাহকদের প্রতিনিধিত্ব করি। আমাদেরই যেখানে সঠিকভাবে জানানো হয় না, সেখানে সাধারণ গ্রাহকরা কিভাবে জানবে? সাধারণ মানুষ পানির জন্য এত কষ্ট পাচ্ছে, তাদের কষ্ট লাঘব না করে মিলনমেলা-সমাবেশের নামে তামাশা করার অর্থ কী! এই তামাশায় তো আমরা যোগ দিতে পারি না,—’ বলেন শফিউল আজম।

ওয়াসার বোর্ড সদস্য, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে অনুষ্ঠানের কয়েকঘণ্টা আগে একজন উপ-সচিব ফোন করে গ্রাহক সমাবেশের কথা জানান। একজন এমডি, দু’জন ডিএমডি আছেন, তাদের কেউ ফোন না করে উপসচিব দিয়ে ফোন করানো হয়। তাদের ন্যূনতম ভদ্রতাজ্ঞান নেই। প্রাপ্য সম্মান না পেলে শুধু শুধু ভাত খাওয়ার জন্য তো আমরা সমাবেশে যেতে পারি না।’

গ্রাহক প্রতিনিধি হিসেবে ওয়াসার বোর্ড সদস্য হিসেবে আছেন জাতীয় পার্টির নেতা সোলায়মান আলম শেঠ। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শেঠ অবশ্য জানিয়েছেন, তাকে সমাবেশের কার্ড পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় তিনি যেতে পারেননি।

গ্রাহকদের কম উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ৭০ হাজার গ্রাহক। আমরা তো নোটিশ দিয়ে ঢালাওভাবে সবাইকে দাওয়াত দিতে পারি না। আমাদের চারটা ডিভিশনের কর্মকর্তারা বাছাই করে গ্রাহক এনেছেন। সব গ্রাহকের উপস্থিতিও বাধ্যতামূলক নয়।’

বোর্ড সদস্যদের সঠিকভাবে অবহিত না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবাইকে নিয়ম মেনে সঠিকভাবে জানানো হয়েছে। এটা যদি না করতাম, তাহলে ৪ জন সদস্য কিভাবে আসলেন? অভিযোগ করতেই পারেন, কিন্তু এর সত্যতা নেই।’

ওয়াসার গ্রাহক সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। আরও বক্তব্য রাখেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ, সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, দুই বোর্ড সদস্য কাউন্সিলর আবিদা আজাদ ও এফ কবির আহমেদ মানিক, ওয়াসার ব্যবস্থাপক পীযূষ দত্ত এবং সংশ্লিষ্ট একটি প্রকল্পের পরিচালক আরিফুল ইসলাম।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

গ্রাহক সমাবেশ চট্টগ্রাম ওয়াসা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর