সিটি করপোরেশন শুধু টাকা নেয়, তদারকি করে না: অভিযোগ ব্যবসায়ীদের
৩০ মার্চ ২০১৯ ১০:৫১
ঢাকা: ‘সিটি করপোরেশন শুধু টাকা নেয় কিন্তু আমাদের কি লাগবে সেটার তদারকি করে না। আজ তো আমার সব পুড়ে শেষ হয়ে গেল। ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে কি খাওয়াব?’ এভাবেই সারাবাংলার কাছে ক্ষোভ জানাচ্ছিলেন গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটের আগুনে সব হারানো রিপন।
শনিবার (৩০ মার্চ) ভোর ৫টা ৪৮ মিনিটে আগুন লাগে গুলশান-১-এর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেটে। কাঁচাবাজার ও সুপার মার্কেট অংশে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিস জানায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে সকাল সাড়ে ৮টায়। এর আগে, ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি আগুন লেগে পুড়ে যায় ডিএনসিসি মার্কেটের অন্তত ২৫০টি দোকান।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত রিপনের বাড়ি চাঁদপুর। তিনি বলেন, ‘আমার ৪টা মসলার দোকান আর আমার ভাইয়ের ২টা ফুডের দোকান ছিল। ৬টা দোকানে মালামাল ছিল প্রায় ৯০ লাখ টাকার। গতবার (২০১৭ সালে) আগুন লাগলো। এক বছর ত্রিপল টানিয়ে বাইরে দোকান দিয়ে ব্যবসা করলাম। এরপর ব্যবসায়ী আর সিটি করপোরেশন মিলে কাঁচা মার্কেট আর সুপার মার্কেট হলো। ভাই, আমার যে সব শেষ হয়ে গেল। সিটি করপোরেশন শুধু টাকা নেয় আমাদের খোঁজও নেয় না। কি দরকার সেটাও দেখে না।’
দোকান ভাড়া কতো ছিলো জানতে চাইলে রিপন বলেন, সিটি করপোরেশন ভাড়া ২ হাজার করলেও মালিকপক্ষ (যারা মার্কেটটি লিজ নিয়েছে) ১০ হাজার টাকা করে ভাড়া নিত। কেউ কেউ ৯ হাজার টাকাও নিতো। গত গত সপ্তাহে নতুন করে কাঁচা মাকের্ট ও সুপার মাকের্টে বিদ্যুৎ এর মোটা তার দিয়ে লাইন টানা হয়। এরপরই ঘটলো এই ঘটনা। আমার ৩৬ বছরের সব শেষ হয়ে গেল।
স্থানীয় দোকানদাররা আরও অভিযোগ করেন, ডিনসিসি মার্কেটে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। এর আগে আগুন লাগার ঘটনার পরও এ বিষয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
একই মার্কেটের মুরগির দোকানদার মো. মফিজ আলী সারাবাংলাকে বলেন, আমার ছোট একটা মুরগির দোকান ছিল। সারাজীবনের সম্বল বলে এই ব্যবসাটাই। কিন্তু আগুন আমার সব স্বপ্নগুলো কয়লা করে দিল। সম্বল বলতে ছিল এখানে বিনিয়োগ করা ৫ লাখ টাকা। এখন আমি কি করব? ঘরে অসুস্থ বউরে গিয়ে কি বলব। আল্লাহ তুমি আমার ক্যান এই ক্ষতি করলে!
মফিজ আক্ষেপ করে বলেন, আমরা ব্যবসা করি, ভাড়া দেই। সিটি করপোরেশন যদি আগুন লাগলে কি দরকার, সেটার ব্যবস্থা আগেই করতো তাহলে আজ আমরা নিঃস্ব হতাম না।
ডিএনসিসি মার্কেটে আরও একজন মাছের ব্যবসায়ী বকুল মিয়া। তার ছিল বিদেশি মাছের ব্যবসা। ৪২ বছর ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। ২০১৭ সালের আগুনে তার ৩টা ফ্রিজ পুড়ে কয়লা হয়। এবার কয়লা হয়েছে ২টি। সব মাছ পুড়ে গেছে।
বকুল মিয়া বলেন, আমি এখন কি করব! বারবার আগুন লাগছে আর আমরা নিঃস্ব হচ্ছি। সরকার কি কিছুই দেখে না। সিটি করপোরেশন ভাড়া নিতে পারে কিন্তু আগুন লাগলে প্রাথমিক কি লাগবে সেটার ব্যবস্থা করতে পারে না।
ডিএনসিসি কাঁচা বাজার মালিক সমিতির সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ সারাবাংলাকে বলেন, মাকের্টে ২৯১টি দোকান ছিল। সব পুড়ে কয়লা হয়েছে। আমরা সবাই মিলে এই মাকের্টটি করেছিলাম। টিন দিয়ে নতুন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ এর লাইনও গত সপ্তাহে দেওয়া হয়। আমরা ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
আরও পড়ুন: সন্তানদের মুখে কি তুলে দেব?
সারাবাংলা/এসজে/এনএইচ