চমেকে নওফেলকে দেখে আ জ ম নাছিরের নামে ছাত্রলীগের স্লোগান
৩০ মার্চ ২০১৯ ১৯:৩৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: এলাকার সংসদ সদস্য হিসেবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। কয়েক দশক ধরে চমেকের নিয়ন্ত্রণে আছে চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী ছাত্রলীগ। ডাক্তারদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) চট্টগ্রামের নেতাকর্মীদের বড় অংশও মেয়রপন্থী। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রামের নির্বাচিত নেতাদের অধিকাংশও মেয়রের অনুসারী।
নওফেলকে চমেকে যাবার খবরে শুরু থেকেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেন মেয়রের অনুসারীরা। বিএমএ, চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা.ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী ফেসবুকে বিভিন্ন ইঙ্গিতপূর্ণ স্ট্যাটাস দেন। নওফেল হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে বের হবার সময় দূরে দাঁড়িয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মেয়রের নামে স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় নওফেল গাড়িতে বসে হাতের ইশারায় তাদের কাছে আসতে বলেন। কিন্তু ছাত্রলীগ নেতারা না এসে দূরে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে নওফেল নিজেই গাড়ি থেকে নেমে তাদের কাছে যান। পাল্টে যায় দৃশ্যপট। বন্ধ হয়ে যায় স্লোগান।
শনিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে এসব ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নওফেল দুপুরে প্রথমবারের মতো চমেক পরিদর্শনে যান। তিনি চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান।
শুরুতে শিক্ষা উপমন্ত্রী চমেকের শাহআলম বীরউত্তম মিলনায়তনে মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। সেখান থেকে নওফেল হাসপাতালের গাইনি, হৃদরোগ ও মেডিসিন ওয়ার্ড ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং রোগী ও চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় উপমন্ত্রীর সঙ্গে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসীন উদ্দিন চৌধুরী এবং চমেকের অধ্যক্ষ সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ছিলেন।
পরিদর্শন শেষে নওফেল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এসময় তিনি হাসপাতাল ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে কাউকে রাজনীতি না করার আহ্বান জানান।
হাসপাতালের সমস্যা সমাধানে পদাধিকারবলে এর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করবেন জানিয়ে নওফেল বলেন, ‘আমরা কেউই চাই না, এই হাসপাতালকে ঘিরে কেউ রাজনীতি করুক। এটা চিকিৎসা সেবার জায়গা। এটা চিকিৎসা শিক্ষার জায়গা। আমি এখানে রাজনীতি করতে আসিনি। কেউ যদি এটাকে ঘিরে রাজনীতি করে, তাহলে আমি বলব এটা খুবই অসৎ উদ্দেশ্য হবে।’
‘জনসেবার উদ্দেশে এই হাসপাতালের সৃষ্টি। চিকিৎসক, নার্স, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি, সবাই জনসেবা দেওয়ার জন্য এখানে এসেছেন। এই হাসপাতালকে যাতে বাণিজ্যিকীকরণ এবং রাজনীতিকরণ করা না হয়, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। জনসেবার মাধ্যমেই যাতে রাজনীতিটা প্রতিষ্ঠিত হয়, আমরা সেটাই চাই।’
নওফেল আরও বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক নেতারা জনসেবার মানসিকতা নিয়েই এখানে রাজনীতি করবেন, সেটাই আমরা চাই। কারণ জনগণের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। জনপ্রতিনিধি হিসেবে, এমপি হিসেবে আমাদের দায়বদ্ধতা আছে জনগণের প্রতি। জনগণ আমাদের কাছে চাইবে তারা হাসপাতালে এসে কি সুযোগ-সুবিধাটা পাচ্ছে ? কারণ তারা সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছে। আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতাকে মাথায় রেখেই জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে চাই।’
চট্টগ্রামে চার হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে বলেও জানিয়েছেন নওফেল। তবে এর আগে চমেক হাসপাতালের সেবার মান উন্নয়নে জরুরি ভিত্তিতে যেসব সুযোগ-সুবিধা দরকার, সেগুলো নিশ্চিতের বিষয়ে তিনি কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।
নওফেল বলেন, ‘চার হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল হবে। সেটি একটি বৃহৎ এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। সেটা বাস্তবায়নে সময় লাগবে। তবে ইমিডিয়েটলি যে ফ্যাসিলিটিজগুলো লাগবে, সেটা আমরা জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করার চেষ্টা করব।’
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগিদের হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ইমিডিয়েট কোনো নির্দেশনা দিতে চাই না। কেউ যদি দায়িত্বে অবহেলা করে সেক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পদ্ধতি আছে। তবে ইমিডিয়েট সেই মন্তব্য বা সমাধান আমি দিতে চাই না। তার আগে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে কাজ করতে চাই।’
হাসপাতালে পরিদর্শন শেষে হেঁটে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় নিচতলায় শ’খানেক নেতাকর্মী দাঁড়িয়ে ‘মেডিকেল কলেজের মাটি, আ জ ম নাছিরের ঘাঁটি’- এই ধরনের বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। নওফেল গাড়িতে বসে তাদের ডাকলেও তারা সেখানে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তিনি গাড়ি থেকে নেমে সামান্য এগিয়ে যান। তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও স্লোগান বন্ধ করে কাছে আসেন।
এসময় নওফেল তাদের বলেন, ‘আমি এখানে রাজনীতি করার জন্য আসিনি। নির্বাচনে তোমরা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছ। তোমাদের ধন্যবাদ। যে কোনো প্রয়োজনে আমার কাছে আসবে। ভালো করে পড়ালেখা করবে।’
পরে নওফেল গাড়িতে উঠে চলে যান। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও স্লোগান দিতে দিতে কলেজের দিকে চলে যান।
এদিকে বিএমএ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ও নগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক মেয়রপন্থী ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী শনিবার সকালে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি লিখেন, ‘চট্টগ্রামের চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের অভিভাবক একজন-ই আছেন। দ্বিতীয় কেউই হওয়ার অপচেষ্টা করবেন না।’ এরপর দুপুরে আরেকটি স্ট্যাটাসে তিনি স্বাচিপের নেতাকর্মীদের হাসপাতালে দায়িত্ব পালন না করে কোথাও যেতে নিষেধ করেন।
বিএমএ ও স্বাচিপের নেতাদের কয়েকজন বলেছেন, চমেকে নওফেলের আসার খবরে অস্বস্তি থেকে ফয়সাল ইকবাল ফেসবুকে সোচ্চার হয়েছেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্ট্যাটাসগুলো আমি উনাকে (নওফেল) নিয়ে দিইনি। আমাদের ডাক্তারদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে দিয়েছি। তবে উনি যে আসবেন, সেটা বিএমএ এবং স্বাচিপকে জানানো হয়নি। আমরা কেউই জানতাম না। আমাদের জানিয়ে আসা উচিৎ ছিল।’
সারাবাংলা/আরডি/এসএমএন