Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষার মানে কোনো ছাড় নয়: শিক্ষামন্ত্রী


৩১ মার্চ ২০১৯ ১৭:৪১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মানসম্মত শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

রোববার (৩১ মার্চ) চট্টগ্রামের বেসরকারি পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আচার্যের পক্ষে সভাপতির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত এই সমাবর্তনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরের জন্য সরকার মানসম্মত শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সুশিক্ষা ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবশ্যই ২০১০ সালে প্রণীত আইন মেনে চলতে হবে।’

শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার মানকে দিতে হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ক্যাম্পাসে গঠনমূলক পরিবেশ, সহশিক্ষা কার্যক্রম ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সুযোগ্য নাগরিক ও আলোকিত মানুষ তৈরি করা হোক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্রত। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহযোগিতা করবে।’

এছাড়া শিক্ষকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষকের দায়িত্ব অভিভাবকের মতো। কখনো কখনো তার চেয়েও বেশি। শিক্ষার মানোন্নয়নের চেষ্টায় আপনারা কোনো ছাড় দেবেন না। শিক্ষার্থীদের স্বাধীন চিন্তা ও সৃজনশীলতার পাশাপাশি শৃঙ্খলাবোধ খুবই জরুরি। তাদের দেশপ্রেম, মানবিকতা, নৈতিকতার শিক্ষা দেবেন। আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলবেন।’

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের যুবসমাজ কখনো স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী অপশক্তির কাছে মাথা নত করেনি। বরং জাতির প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। আগামী দিনেও ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গঠনে তারা অবদান রাখবে বলে আমি আশা করি। বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় বিশাল যুবসমাজের সম্পৃক্ততা অপরিহার্য।’

যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থার গবেষণার তথ্য তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২৮তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, চীন, স্পেন, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিার মতো দেশকে অতিক্রম করে বিশ্বে ২৩তম বৃহত্তম অথনীতির দেশে উন্নীত হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, চিন্তায় অগ্রসরমান একটি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য এগিয়ে চলেছেন। এজন্যই আমরা দেখছি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে। এই চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল নির্মিত হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি হচ্ছে পদ্মাসেতু। ঢাকায় মেট্রোরেল হচ্ছে। এমনকি মহাকাশে স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।’

এই উন্নয়নের স্রোতধারায় যুবসমাজকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভুগলে হবে না। যেতে হবে আরও অনেকদূর। সেজন্য মানুষের সম্পৃক্ততা অনেক বেশি জরুরি।’

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার পর আমাদের মধ্যে একটা ধারণা জন্মায় যে, উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করলে আমাদের বোধহয় দাফতরিক কাজ ছাড়া আর কিছু করা উচিৎ নয়। কিন্তু কোনো অর্জনই ছোট নয়। কোনো ক্ষুদ্র প্রয়াসই ছোট নয়। একজন কৃষকের উৎপাদনের সঙ্গে যখন মেধা যুক্ত হয়েছে তখন বহুজাতিক কোম্পানি সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ব্যবহারিক শিক্ষার ওপরও যেন গুরুত্ব দিই। কোনো কাজকেই যেন ছোট মনে না করি। মনে রাখতে হবে, উচ্চশিক্ষা মানে কিন্তু শুধু দাফতরিক কাজ নয়।’

এতে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন- বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নুরুল আনোয়ার ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ড. এনামুল হক শামীম।

প্রথম সমাবর্তনে ২ হাজার ৮৮ জন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে। সাত জন শিক্ষার্থী আচার্য স্বর্ণপদক এবং ১২ জন শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্বর্ণপদক পেয়েছেন।

এদিকে সমাবর্তনে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে রোববার সকালে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে যান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মণি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সেখানে শিক্ষকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ক্যাম্পাসের পরিবেশ যেন সুন্দর ও সৌহার্দপূর্ণ হয়। রাজনীতি অবশ্যই হবে, কারণ এটি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। কিন্তু রাজনীতি হতে হবে আমাদের দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। কখনোই যেন অপরাজনীতি না হয়।’

‘আবার রাজনীতি করতে গিয়ে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যের পরিবেশ যেন বিঘ্নিত না হয়, সেটাও দেখতে হবে। শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীদের সম্পর্ক যেন ভালো হয়। কোনো ধরনের অপরাজনীতির প্রভাব যেন এখানে না থাকে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে যেন এই প্রতিষ্ঠান এগিয়ে যায়।’ বলেন শিক্ষামন্ত্রী

এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ।

সারাবাংলা/আরডি/এমআই

শিক্ষামন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর