‘দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যৎটা শেষ হতে দেখছিলাম’
৩১ মার্চ ২০১৯ ২০:৪৮
ঢাকা: ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর নিজের জমানো সামান্য কিছু টাকা নিয়ে গুলশান ডিসিসি মার্কেটে ব্যবসা শুরু করেন আখতার হোসেন। সেও প্রায় ৩০ বছর আগের কথা। স্বল্প পুঁজির ব্যবসা করে হাল ধরেছিলেন ১০ ভাই-বোনের সংসারের। একটু একুটু করে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন নিজের সংসারটা। স্বপ্ন দেখছিলেন একটু সচ্ছলতার। তবে ডিসিসি মার্কেটের প্রায় তিনশ ব্যবসায়ীর মতো ভেঙেছে তার স্বপ্নও।
২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো আগুনে পোড়ে আখতার হোসেনের দোকান। ক্ষয়-ক্ষতিও হয় প্রায় ২০ লাখ টাকার। সে ধাক্কা সামলে নিয়ে আবারও শুরু করেন ব্যবসা। তবে গত শনিবার ডিসিসি মার্কেটে লাগা আগুনে একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে সারাবাংলাকে বলেন, ‘দোকানটির সঙ্গে আমার সব স্বপ্ন, আমার ভবিষ্যৎটাও শেষ হয়ে গেল।’
‘প্রথমবার আগুন লাগার পর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে ঋণ নিয়েছিলাম। সেই ঋণের বোঝা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। এরই মধ্যে আবারও আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে গেল। দোকানটিতে যত পণ্য ছিল, গিয়ে দেখি শুধু ধোঁয়া আর ছাই। ফায়ার সার্ভিস কাজ করছিল, আর আমি নির্বাক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার ভবিষ্যৎটা শেষ হতে দেখছিলাম।’—বলেন আখতার হোসেন।
আখতার হোসেনের মতো সর্বস্ব হারিয়েছে অনেক ব্যবসায়ী। তাদের একজন সোহেল। বয়স ৬০-এর কাছাকাছি। জীবনের প্রায় ৪০টি বছর পার করেছেন গুলশানের ওই মার্কেটে। তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে যখন পাকা মার্কেটটিতে আগুন লাগে তখন আমার স্বপ্নগুলো পুড়ে ছাই হয়। সেই সময় প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল। ধকল কাটাতে ব্যাংকঋণ নিয়েছিলাম। সেই টাকা শোধ না হতে আবারও আগুন আমার সবকিছু তছনছ করে দিল। এবার চোখের সামনে পুড়ে, ছাই হলো ১২ লাখ টাকার মালামাল।’
তিনি বলেন, ‘আগেরবার আগুন লাগলে সরকার আমাদের স্থায়ী ব্যবস্থা করে দিতে চাইলেও করে দেয়নি। অবশেষে ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা মিলে অস্থায়ীভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই করলাম। সিটি করপোরেশন একটু সহযোগিতা করলো। মাসে মাসে টাকা নিয়ে যেত কিন্তু আমাদের কী লাগবে সেটা কখনো দেখেনি।’
গুলশান ডিএনসিসি মার্কেট ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘২৯১টি দোকান পুড়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের মাথা গোঁজার ঠাঁই দরকার। গতবার আগুনে মার্কেট পোড়ার পর সরকার থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হলো, স্থায়ী মার্কেট করার কথা বলা হলো। কিন্তু শেষে কোনো কিছুই হলো না। সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে আমাদের রুটি রুজির একটা ব্যবস্থা করে দিতে। যতদ্রুত হবে ততই আমাদের জন্য ভালো হবে।’
এদিকে গতকাল ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন লাগায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। সেই তদন্ত কমিটিকে তদন্তের জন্য রোববার ঘটনাস্থলপরিদর্শন করার কথা থাকলেও সেখানে যায়নি তদন্ত দল।
ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এর আগে যখন আগুন লাগে তখন সাবেক মেয়র আনিসুল হক তাদের জন্য অস্থায়ীভাবে ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। এরপর কিন্তু আবার আগুন লাগলো। সুতরাং এবার স্থায়ী সমাধান ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই। কারণ আবার যদি আগুন লাগে তাহলে কী হবে? সেজন্য আমরা স্থায়ী সমাধানের দিকে যাচ্ছি।
সারাবাংলা/এসজে/এমআই