‘শান্তিপূর্ণ’ উপজেলা নির্বাচনে সন্তুষ্ট ইসি
৩১ মার্চ ২০১৯ ২০:১৩
ঢাকা: পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে ভোটগ্রহণ মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইস)। এ জন্য কমিশন সন্তোষ প্রকাশও করেছে। রোববার (৩১ মার্চ) ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।
ইসি সচিব জানান, ‘অনিয়মের কারণে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার সব কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এর বাইরে ১২টি কেন্দ্র স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত কেন্দ্রগুলো হলো মুন্সীগঞ্জের তিনটি, ঢাকার ধামরাইয়ের একটি, কুমিল্লার চান্দিনায় চারটি, কুমিল্লার মেঘনায় দুটি ও কুমিল্লার হোমনার দুটি কেন্দ্র। বাকি কেন্দ্রগুলোয় মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় সাতজন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে উল্লেখ করে ইসি সচিব বলেন, ‘সেই সঙ্গে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে তাদেরকে আইনের আওতায় সাজা দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমরা প্রায় ৪৯টি উপজেলাতে প্রায় ১২০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করেছিলাম। ঢাকা ও স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকে তিন শতাধিক ম্যাজিস্ট্রেট আমরা নিয়োগ করেছিলাম। তার পাশাপাশি র্যাব, পুলিশ, আনসার, ভিডিপি, এমন কি গ্রাম পুলিশও আমরা নিয়োগ করেছিলাম।’
হেলালুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি ভালো হওয়ার কারণে চার ধাপের নির্বাচনে আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, একটি লোকও নিহত হয়নি। হয়তো কিছু আহত হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য আমরা অনেক উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করেছি। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এমনকি আমরা পুলিশ সুপারকে (এসপি) প্রত্যাহার করেছি। কয়েকজনকে সাময়িক বরখাস্তও করেছি।’ তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে আমাদের যেসব কেন্দ্র বন্ধ হয়েছে, সেসব কেন্দ্র তদন্ত করে নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করবে। আর যেসব উপজেলা স্থগিত করা হয়েছে, সেসব উপজেলা নির্বাচন বন্ধের বিষয়েও তদন্ত করা হবে। পরবর্তী সময়ে এর তারিখ নির্ধারণ করা হবে। ১৮ জুন ৩০ থেকে ৪০টি উপজেলায় নির্বাচন হবে।’
চার ধাপের ভোটগ্রহণে ভোটের হার নিয়ে নির্বাচন কমিশন কতখানি সন্তুষ্ট-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। আহত, নিহত যেন না হয়, সেটার ওপরে আমরা সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছি। আপনারা আমাদের শতকরা হারের কথা বলেছেন, শতকরা হার বাড়াতে গেলে অনিয়মের মধ্যে পড়তে হয় আমাদের। এ জন্য আমরা ভোটাররা যে পরিমাণ আসুন না কেন, আমরা ওটার ওপরে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা যদি ভোটার হার বাড়াতে চাই, তাহলে আবার সেই স্থানীয় প্রশাসন বা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা অনিয়মের দিকে ঝুঁকে পড়বে।’
আরও পড়ুন: ১০৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাহলে ৮০শতাংশ ভোট কীভাবে পড়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের তুলনা করলে চলবে না। জাতীয় নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। কিন্তু উপজেলায় নির্বাচনে সব দল অংশ নেয়নি। আমরা চেয়েছি যেন স্বতঃসস্ফূর্তভাবে ভোটাররা অংশ নেয়।’
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির ব্রাশফায়ারের ঘটনার বিষয়ে ইসি বলেন, ‘এটা তো নির্বাচনকালীন সংহিসতা নয়। আপনারা কি এটাকে তাই বলবেন? আপনারা জানেন, সেখানে পাহাড়িদের বিভিন্ন গ্রুপ কাছ করে। সেখানে ভোটকেন্দ্র দখলের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আঞ্চলিক দলের প্রাধান্য বিস্তারের জন্য এমন হতে পারে। এটাকে আমরা নির্বাচনি সহিংসতা বলতে নারাজ।’ তিনি বলেন, ‘কড়াকড়ি সব সময় ছিল। সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ নিয়েছে। তখন সেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, এখনো তাই নেওয়া হয়েছে। বিএনপির সমর্থকরা কিন্তু আসেনি। আমাদের অনুমান ৪০ শতাংশ ৪১ ভোট পড়েছে, তা একটা দল যে অংশগ্রহণ করেছে, তাদেরই।’
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আসতে দেরি হয়। তৃতীয় ধাপে ইভিএমের ফল রেজাল্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (আরএমএস) আনতে চেয়েছিলাম। ইন্টারনেট ডাউন থাকার থাকার কারণে আমরা পারিনি। চতুর্থ ধাপে আমরা সেটা বাদ দিয়ে দিয়েছি। ম্যানুয়্যালিই ফল আনা হচ্ছে। সংসদ নির্বাচনেও ইন্টারনেটের গতি কম থাকায় ফল প্রকাশে দেরি হয়েছিল।’
হেলালুদ্দীন আহমদ আরও বলেন, ‘প্রথম থেকে চতুর্থ ধাপ পর্যন্ত ৪৬৫টি উপজেলা নির্বাচন করা হয়েছে। পঞ্চম ধাপে ১৮ জুন ৪০টির মতো উপজেলায় ভোটগ্রহণ করা হবে। যেসব উপজেলার ভোট আদালত ও ইসি নির্দেশে স্থগিত করা হয়েছে, সেগুলোতে তদন্ত সাপেক্ষে ভোটের দিন ঠিক করা হবে। পঞ্চম উপজেলায় পরিষদ নির্বাচন পাঁচ ধাপে সম্পন্ন করছে নির্বাচন কমিশন। ’ এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ভোট শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলেও দাবি করেন ইসি সচিব।
সারাবাংলা/ জিএস/এমএনএইচ