‘সরু সিঁড়ি, ছাদে তালা’
৩১ মার্চ ২০১৯ ২২:০২
ঢাকা: বনানীর এফআর টাওয়ার ২৩ তলা। অথচ এতবড় ভবনের সিঁড়িটা ছিল খুবই ছোট, তিনজন পাশাপাশি হাঁটা যায় না। গত বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) অগ্নিকাণ্ডের দিন ছাদে ছিল তালা মারা। যে কারণে অধিকাংশ মানুষই ছাদে যেতে পারেনি। ভেতরে থাকায় তারা কেউ আগুনে পুড়ে, কেউবা বিভিন্ন তলা থেকে লাফ দিয়ে বাঁচতে গিয়ে মারা গেছেন।
ভবনটির অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তদন্ত কমিটি ভবনটি পরিদর্শন করে। তদন্ত কমিটির সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেছেন, ‘ভবনে জরুরি নির্গমন পথ ছিল খুবই অপ্রশস্ত। মাত্র একটি ফ্লোরে ফায়ার ডোর ছিল। আরও বেশ কিছু জায়গায় ত্রুটি রয়েছে। এগুলো সংশোধন ছাড়া ভবনটি ব্যবহার করা যাবে না।’
কমিটির আরেক সদস্য বুয়েটের অধ্যাপক রাকিব আহসান জানান, ‘পরিদর্শনের সময় তারা দেখতে পান, জরুরি নির্গমন পথটি কোনো কোনো জায়গায় বন্ধ ছিল।’
গণশুনানি শেষে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফয়জুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আট তলা (সেভেন ফ্লোর) থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ওই ভবন থেকে যারা কষ্ট করে বের হয়ে আসতে পেরেছে তারা জানিয়েছেন, আগুন লাগার পরে তারা ফায়ার এলার্ম শুনতে পাননি। তারা বের হতে গিয়ে দেখেন, জরুরি বহির্গমন পথ (ইমার্জেন্সি এক্সিট) সরু। সেই পথও কোনো কোনো ফ্লোরে বন্ধ ছিল। পথটি সোজা ছিল না এবং কোন দিকে যেতে হবে, সেই নির্দেশনাও ছিল না। শুনানিতে তারা বলেছেন, এক্সিট ডোরের কোনও নির্দেশনা না থাকায় তারা সেটি ব্যবহার করতে পারেননি, ভবনে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা থাকলেও নিরাপত্তাকর্মীরা সেটি ব্যবহার করতে পারেননি, বলেছেন ফয়জুর রহমান। এমনকী তারা এক্সিট ডোরের কথা জানতেনও না।’
ফয়জুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা পুরো ভবন ঘুরে দেখেছি। আগুন লাগার পর কোনো তলায়ই হোস পাইপ ব্যবহার করা হয়নি। কোনো কোনো তলায় অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র পাওয়া গেলেও তা ব্যবহার করা হয়নি।’
আরও পড়ুন: তারা শোনালেন বেঁচে ফেরার গল্প
এদিকে, বনানীর কামাল আতার্তুক অ্যাভিনিউর এই ভবনের বিভিন্ন তলায় কাজ করা একাধিক ব্যক্তি সারাবাংলাকে ভবনের ছোট ও সরু সিঁড়ির কথা বলেছেন। আরও বলেছেন, ভবনের ছাদে নিরাপত্তারক্ষীদের থাকার জায়গা। যে কারণে সবসময় ছাদে তালা মারা থাকতো। সেদিনও ছাদের গেটে তালা থাকার কারণে আগুন লাগার শুরুতেই অনেকেই চাইলেও ছাদে যেতে পারেননি। যদিও পরে কীভাবে এই তালা খোলা হয়েছে, সেটা তারা জানেন না। একই কথা বলেছেন, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। তিনি বলেছেন, আগুন লাগার সময়ে ভবনটির ইমার্জেন্সি গেইট বন্ধ ছিল, ভবনের সিঁড়িও ছিল সরু।’
এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ভবনটির অষ্টম তলার স্পেক্ট্রা এসএন নামের একটি বায়িং হাউস থেকে প্রাথমিকভাবে শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি জানালেও একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে বলছে ভিন্ন কথা। সূত্র বলছে, ওই অফিসেরই পুরনো এয়ারকন্ডিশন্ড থেকে এই আগুন লাগে।
যদিও ফয়জুর রহমান বলেছেন,‘প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন আগুন আট তলা থেকেই লেগেছে, যদিও এখনই আমরা সিদ্ধান্তে যাচ্ছি না, আগামীকাল আট তলার কর্মরত ব্যক্তিদের বক্তব্য শুনব। এরপর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’।
একটি আমদানি-রফতানিকারক অফিসে কাজ করা মেহেদী হাসান ইমন সারাবাংলাকে বলেন, ‘তাদের অফিস নয় তলায়। গত চার বছর ধরে কাজ করছেন এই অফিসে। অফিসের কাজে সেদিন তিনি এয়ারপোর্টে ছিলেন কিন্তু ঘটনার দিন তাদের অফিসের ৩০ জনের ভেতরে ৩ জন মারা গেছেন। বাকি ২৭ জন বেঁচে আছেন। এর মধ্যে আহত হয়েছেন পাঁচজন।’
মেহেদী হাসান ইমন বলেন, ‘এই ভবনের সিঁড়ি ছোট। পাশাপাশি তিনজন হাঁটতে পারবে না। আর ভেতরে খুবই অন্ধকার। দুই পাশে দুটি বড় বিল্ডিং। পুরোটা আটকা। আর ছাদ খোলা থাকে না, সেদিনও খোলা ছিল না।’
ছাদের গেট খোলা থাকলে অনেকেই ছাদ দিয়ে পাশের দুই বিল্ডিংয়ে চলে যেত পারতেন বলেও মন্তব্য করেন ইমন।
সারাবাংলা/জেএ/এমএনএইচ