Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘র‌্যাংকিং-পদকে সব খেলায় আমরাই এগিয়ে, মূল্যায়ন নেই’


৩১ মার্চ ২০১৯ ২৩:২৬

ঢাকা: গেল বছরে এশিয়ান গেমসে আর্চারিতে নিজের সর্বোচ্চ স্কোরিং করেছিলেন। ৭২০ এর মধ্যে করেছিলেন ৬৭৭। সাত মাসের মাথায় নিজের সেরাটা বের করে আনলেন রোমান সানা। আগের সর্বোচ্চ স্কোরিং পেরিয়ে করলেন ৬৮১। যদিও এই আনন্দটা রাঙানো যায়নি স্বর্ণের লড়াইয়ে। এশিয়া কাপ ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিং আর্চারি টুর্নামেন্টের স্টেজ-১ ফাইনালে হেরে রৌপ্য নিয়েই দেশে ফিরতে হয়েছে দেশ সেরা খুলনার এই ক্রীড়াবিদকে।

যদিও ২০১৪ সালে এই ব্যাংককে এশিয়ান গ্রাঁপ্রিতে সোনা জেতেন রোমান সানা। সেই টুর্নামেন্ট এখন বদলে হয়েছে এশিয়া কাপ আর্চারি আর পাঁচ বছর বাদে সেই সোনা বদলে হয়ে গেল রুপা! তাতে আক্ষেপের থেকে নিজের সেরাটা দিয়ে অভিজ্ঞতা নিয়ে অলিম্পিকের স্বপ্নে বিভোর রোমান। আর এক বছর পরেই টোকিওতে অলিম্পিক। মুখিয়ে আছেন সামনে হল্যান্ডে বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ ও চায়নায় আর্চারি বিশ্বকাপের দিকে।

বিজ্ঞাপন

সবশেষ টুর্নামেন্টের অভিজ্ঞতা, সামনের চ্যালেঞ্জ, আর্চারির দুঃখসহ নানা বিষয়ে সারাবাংলাকে সাক্ষাৎকারে কথাগুলো জানিয়েছেন রোমান সানা।

সারাবাংলা: টানা চার ম্যাচ জিতে ফাইনালে হেরে গেছেন একটুর জন্য স্বর্ণ হাতছাড়া করেছেন। সবমিলে কেমন কাটলো টুর্নামেন্ট?

রোমান সানা: ২৩টা দেশের সঙ্গে লড়াই করে একটা সিলভার ও একটা ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছি। এটা কম বড় অর্জন নয়। পাঁচটা ইভেন্টে সেমি ফাইনাল খেলেছি। একই ইভেন্টে দুইটা পদক পেয়েছি। সব মিলে ভালোই কেটেছে।

সারাবাংলা: ক্যারিয়ার সেরা স্কোর করেছেন। কিন্তু অল্পের জন্য স্বর্ণ হাতছাড়া হলো। খারাপ লাগছে কি?

রোমান: দশ বছরের ক্যারিয়ারে সেরা স্কোর করেছি যেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে কেউ করতে পারেনি এবং এক নম্বর র‌্যাংকিং হয়েছি। এসবের পরেও আমাদের কষ্ট হয়।

সারাবাংলা: কেমন?

রোমান: মনে কিছু করবেন না। ছোট মুখে একটা কথা বলি। ক্রিকেটে যদি বাংলাদেশ জেতে তাদের বাড়ি-গাড়ি সবকিছুই দেয়া হয়। আর আমরা ফ্লাইট জার্নি নিয়ে ২৩টা দেশের সঙ্গে লড়াই করেছি। ফাইনাল যেতে ছয়টা ম্যাচ খেলতে হয়েছে। তাও আবার নক আউট পর্ব। ক্রিকেটে সিরিজে একটা হারার পর ব্যাক করার সুযোগ আছে। কিন্তু আর্চারিতে সেই সুযোগ নেই। এর মধ্যেই আমরা দুটো পদক নিশ্চিত করেছি। কিন্তু বিষয়টা একবারও কেউ উপলব্ধি করে না। সবাই শুধু গোল্ড চিন্তা করে। এতো কষ্ট করে সিলভার ও ব্রোঞ্জ পেয়েছি এর প্রাপ্য আমরা কী পাব? মাঝেমাঝে কষ্টে কান্না চলে আসে। দেশের জন্য রোদে পুড়ে প্র্যাকটিস করি। পদক পাই। অন্যদিকে ক্রিকেটে অনূর্ধ্ব-১৬-১৯ বা ডিভিশন খেলে লাখ লাখ টাকার মালিক হয় তাদেরকে আরও দেওয়া হয়। তারা তো এমনিতেই অনেক পায়।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: আর্চারিতে আর্থিক অস্বচ্ছলতার বিষয়ে বলছেন?

রোমান: যারা আমরা অন্য ডিসিপ্লিনে আছি, কথাটা শুনতে আপনার খারাপ লাগতে পারে, হিসেব করেন। ক্রিকেট থেকে আর্চারিতে রেজাল্ট ভালো। আমাদের বিশ্ব র‌্যাংকিং ভালো। সবদিক থেকে ভালো। আমাদের একটা বিশ্বকাপ খেলতে গেলে কতগুলো কান্ট্রি আসে জানেন? সর্বনিম্ন ৭০টা দেশ আসে। ক্রিকেটে আসে ১৪টা মাত্র।

সারাবাংলা: দেশে খেলোয়াড়দের মূল্যায়ন নিয়ে বলছেন?

রোমান: ইমদাদুল হক মিলন, সাজ্জাদুল ইসলাম, তামিমরা যারা আন্তর্জাতিক স্বর্ণ পেয়েছি এ পর্যন্ত তারা যদি হিসেব করেন ক্রিকেটের কোন খেলোয়াড় তাদের ধারে-কাছে যেতে পারবে না। ক্রিকেট কিন্তু অলিম্পিক খেলে না। আমাদের কয়েকটা দেশের ভেতরে মূল্যায়ন করা হয়। মূল প্রাপ্যটা আমরা পাই কি? চায়নায় দেখেন ক্রিকেট খেলে না। কয়টা দেশই ক্রিকেট খেলে। কিন্তু আর্চারি না হলেও দুইশ’ দেশ খেলে। অল চ্যাম্পিয়নশিপ যেখানে দেড়শোর উপরে দেশ অংশ নেয়। ক্রিকেটে যেখানে আদৌ সম্ভব না।

সারাবাংলা: দেশ সেরা আর্চার হিসেবে রোমান সানার উপরে অনেক প্রত্যাশা থাকে। সেটা কি চাপ হিসেবে কাজ করে?

রোমান: সবসময় চেষ্টা করি নিজের সেরাটা দিতে। আল্লাহ যা রেখেছে সেটাই হবে। আর ভাগ্য বলে একটা কথা আছে। কপালে না থাকলে কিছু হয় না।

সারাবাংলা: এই টুর্নামেন্টে খুবই কাছাকাছি সেটে হেরেছে কয়েকটি সেটে। ফাইনালে কি চাপ অনুভূত হয়?

রোমান: ফাইনালের খেলাটা একটু ভিন্ন হয়। আর আমার আপাতত টার্গেট অলিম্পিক। এই টুর্নামেন্টগুলো প্রস্তুতি পর্ব। আল্লাহর রহমতে বেস্ট স্কোরিং করতে পেরেছি। এটা নিয়ে খুশি।

সারাবাংলা: সেরা স্কোরিংয়ের পর ফাইনালে আগে কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখ কি নির্দেশনা দিয়েছিলেন?

রোমান: আগের টুর্নামেন্টগুলোতে যতটা নার্ভাস ছিলাম এবার তেমন হয়নি। সারাদিনই খেলার মধ্যেই ছিলাম। একটা শটেই প্রায় পিছিয়ে পড়েছি বেশ। ভাগ্য সহায় ছিল না। ভাগ্য দরকার হয় বড় বড় টুর্নামেন্টে।

সারাবাংলা: অলিম্পিকতো একবছর পরে। এর মাঝে কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে চান?

রোমান: মূল লক্ষ্যই অলিম্পিক। তার মাঝে বিশ্বকাপ আছে। অল চ্যাম্পিয়নশিপ আছে হল্যান্ডে।

সারাবাংলা: অলিম্পিক স্বপ্ন কতটা চ্যালেঞ্জিং?

রোমান: ওয়াইল্ড কার্ড ছাড়া সরাসরি অলিম্পিকে সুযোগ পেতে হ্যালেন্ডের অল আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে মূলত কোয়ার্টার ফাইনাল উঠলেই অলিম্পিকে অংশ নেয়ার সুযোগ হবে। তাছাড়া চায়না বিশ্বকাপেও কোয়ার্টার ফাইনাল উঠলে সে সুযোগ হতে পারে। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি।

সারাবাংলা: যদি এই দুইটা টুর্নামেন্টে ভাগ্য সায় না দেয় তাহলে?

রোমান: তাহলে নভেম্বরে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ আছে। সেখানে যদি ফাইনালে যেতে পারি তাহলে অলিম্পিকে সরাসরি যেতে পারবো।

সারাবাংলা: এই চ্যাম্পিয়নশিপেতো দক্ষিণ কোরিয়ার মতো বিশ্ব সেরা দলগুলো অংশ নেয়। কতটা সহজ হবে?

রোমান: ওখানে সব বড় দলগুলো আসে। কোরিয়ারা অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন। বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। শক্তিশালী দল। সবদিক থেকেই রাজত্ব করে। আমরা আমাদের সেরাটাই দিবো।

সারাবাংলা: শুভ কামনা রইলো…

রোমান: ধন্যবাদ। দোয়া করবেন।

সারাবাংলা/জেএইচ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর