ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ভবনের নয়তলায় ভর্তি ১৬ বছর বয়সী হাবিব। গায়ে হলুদ-কালো হাফ শার্ট আর স্টাইপ লুঙ্গি। বাম হাতে তখনো চলছে স্যালাইন। কিশোর বয়সের উচ্ছ্বলতা হারিয়ে গেছে অনেক আগেই, চোখে-মুখে তার মুখে রাজ্যের বিষাদ।
চিকিৎসক রাউন্ডে এসে কথা বলছেন আফরোজা বেগমের সঙ্গে। জানাচ্ছেন, তার ছেলের শারীরিক অবস্থা। জানতে চাচ্ছেন, কেমন ছিল রাতে। আফরোজার চোখ ভিজে যায়। হাবিব তখন মায়ের দিকে তাকিয়ে। রাউন্ড শেষে হাবিব মাকে পাশে বসতে বলে। হাত ধরে। আফরোজা চোখ মুছে হাবিবের কপালে হাত রাখেন।
আফরোজা জানেন, তার ছেলে ক্যানসারে আক্রান্ত। চিকিৎসায় প্রয়োজন লাখ লাখ টাকা। কিন্তু এই মা এখনো জানেন না, কিভাবে যোগার হবে এত টাকা।
অসুস্থ ভাইয়ের পাশেই রয়েছে, সাবিদ আর আমিনা। আছেন হাবিবের বাবা হাবুল সরদারও। হাবুলের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায়। হাবিব পড়ালেখা করে বরিশালের টর্কীবন্দর ভিক্টোরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এখন সে দশম শ্রেণির ছাত্র।
কথায় কথায় জানায়, গত দুই মাস ধরে স্কুলে যেতে পারেনি হাবিব। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় না। বন্ধুদের খুব মনে পড়ে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাবিব। তারপর বলে, ‘আল্লায় যদি বাঁচায়ে রাখে তাইলে আবার স্কুলে যাব।’
হাবিব বোঝে না তার কতটা কঠিন রোগ হয়েছে। তবে শরীরের অসুবিধা তার চেয়ে বেশি কেউ বোঝে না। এখন কেমন আছো? জানতে চাইলে বলে, কেমোথেরাপি দিলেই মাথা ঘোরে। বমি আসে। কিছু খেতে ভালো লাগে না- সব তিতা লাগে।
ফুটপাতে তেল-লবণ-মশলা বিক্রি করে সংসার চালান হাবুল সরদার। জানালেন, ক্ষুদ্র ব্যবসা, ভালোই চলছিল। হাবুল বলেন, গতবার আমি আর হাবিব ইস্তেমায় এসেছিলাম। সঙ্গে এলাকার আরও দু‘জন ছিল। সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়ে হাবিব। জ্বর, বুকে ব্যথা। এক পর্যায়ে নাক আর দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত বের হতে শুরু করে, তখন আমরা বাড়ি ফিরে আসি। স্থানীয় চিকিৎসকরা বললেন ‘রক্তস্বল্পতা’। সেই অনুযায়ী, ওষুধ দিলেন তারা। কিন্তু উন্নতি হচ্ছিল না। বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর অনেক পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানালেন, হাবিবের ব্লাড ক্যানসার হয়েছে।
কথা শেষ করতে পারেন না হাবুল সরদার। আফরোজা বললেন, ছেলেকে বলিনি। কিন্তু ও বুঝতে পেরেছে। আমাদের যখন বলা হলো, ‘ছেলের চিকিৎসা এখানে হবে না, ঢাকায় নিতে হবে। খরচ হবে অনেক’- আমরা অথৈ সাগরে পড়ে গেলাম।
তারা বললেন, ‘মুখে ওষুধ খাওয়ালে খরচ কম হবে। কিন্তু ছেলে বাঁচবে না বেশি দিন। আর কেমোথেরাপি দিলে ছেলে বাঁচবে। তাতে অনেক খরচ।’ আত্মীয়-স্বজন যে যেখানে আছে, সবাইকে জানালাম। অধিকাংশদের পাশে পেলাম না। কেউ কেউ বললো, আরও দুইটা সন্তান আছে। এক ছেলের পেছনে সব খরচ করলে বাকিদের কী থাকবে? কিন্তু আমিতো মা। এক সন্তান চোখের সামনে মরে যাবে আর আমি টাকা রেখে দেবো অন্য সন্তানের জন্য- এটা কোনো মা করতে পারেন? বরিশাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে সেদিনই ঢাকায় রওনা হই। মহাখালীর ক্যান্সার হাসপাতাল জানায়, ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা লাগবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে জানালো ১২ লাখ টাকা লাগবে। আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো- বলেন আফরোজা।
বলেন, এত টাকা আমরা কোথায় পাব? আফরোজা বেগম কাঁদেন, কাঁদেন হাবুল সরদার। তারপর এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। এখন পর্যন্ত তিনটা কেমো হয়েছে, দুই লাখের বেশি টাকা খরচ হয়ে গেছে। ছয় মাস চিকিৎসা করাতে হবে। চারটা থেরাপি দেওয়ার পর ছুটি পাওয়া যাবে। এরপর বিরতি দিয়ে দিয়ে দিয়ে ছয় মাস চিকিৎসা দিতে হবে।
হাবুল বলেন, ছেলেটা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, কিছু বলে না। ওতো জানে, আমাদের এত টাকা নেই। মাঝে মাঝে বলেও, তোমরা এতো টাকা কোথায় পাবে? আমি আমার সন্তানকে কথা দিয়েছি, ওকে সুস্থ করে তুলবোই।
এই দেশে অনেক মানুষ আছেন, যারা আমাদের মতো গরিবের পাশে দাঁড়ান। আমি তাদের কাছে আমার সন্তানের প্রাণ ভিক্ষা চাই। আমি আমার সন্তানকে কথা দিয়েছি, মা হয়ে আমি সেই কথা রাখতে চাই। আমাদের, মা-ছেলের জন্য যদি কারও একটু মায়া হয়, তাহলে আমাদের পাশে দাঁড়ান, বলেন আফরোজা বেগম।
সাহায্য করার মাধ্যম
নাম: আফরোজা বেগম
বিকাশ নম্বর: ০১৭৫৯৭০৬৫০৪ (ব্যক্তিগত)।
নাম: মো. হাবুল সরদার।
সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর: ২০৫০২৭১০২০২০৫৫৩১৩।
শাখা: টর্কী বন্দর, ইসলামী ব্যাংক।
সারাবাংলা/জেএ/এটি