Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

থামছে না এসি বিস্ফোরণ, বাড়ছে প্রাণহানি


২ এপ্রিল ২০১৯ ১০:১৭

ঢাকা: যতই দিন যাচ্ছে, ততই বাড়ছে এসি বিস্ফোরণের ঘটনা। এসব ঘটনায় বাড়ছে প্রাণহানির সংখ্যাও। বিদেশ থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ আমদানি করে রাজধানীর অনুমোদনহীন বিভিন্ন কারখানায় দামি ব্র্যান্ডের নাম-লোগো লাগিয়ে সেগুলো বাজারজাত করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যন্ত্রণাংশ নিম্নমানের হওয়াসহ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব এসির কম্প্রেশার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, বিভিন্ন সময়ে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের জব্দ করা নকল এসি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, এসব এসিতে নামি ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। মূলত এসব নিম্নমানের এসিতে বিস্ফোরণ হচ্ছে।

গত ১৮ মার্চ রাজধানীর উত্তরায় এসি বিস্ফোরণের দগ্ধ হন আলমগীর ভূঁইয়া ও বিলকিস ফারজানা দম্পতি। বিস্ফোরণের এক সপ্তাহ পর ২৫ মার্চ দুপুর ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন মারা যান বিলকিস ফারজানা। তার আগের দিন ২৪ মার্চ দুপুরে মারা যান স্বামী আলমগীর ভূঁইয়া।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শংকর পাল জানিয়েছেন, ‘ফারজানা ও আলমগীরের শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। দুজনই বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন।’

এর আগে, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ হন তাছলিমা বিনতে আজিজ ও তার চার বছরের ছেলে শেখ নাসির উল আল তানজিম।

২০১৭ সালেই ৩০ এপ্রিল এলিফ্যান্ট রোডের এক ভবনে প্রকৌশলী উৎপল চক্রবর্তী এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ হন। এরপর তাকে ঢামেক বার্ন ও পরে সিটি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। প্রায় একমাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ২০ মে তিনি মারা যান।

২০১৬ সালের ২৭ আগস্ট টিপু সুলতান রোডের অবস্থিত নিজ বাড়িতে এসি বিস্ফোরণে আহত হন শিশু নাতি ফাহিমসহ পারুল বেগম। এ ঘটনার পরপরই দু’জনকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ওইদিনই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফাহিম মারা যায়। আর ২ সেপ্টেম্বরে মারা যান পারুল বেগম।

একই বছরের ১৮ জুলাই রাজধানীর খামারবাড়িতে একটি অফিসের এসি মেরামতের সময় বিস্ফোরণে দগ্ধ হন টেকনেশিয়ান নাদিম ও হাসান। ঘটনার পরপরই তাদের ঢামেকে ভর্তি করা হয়। সেখানে তারা সাংবাদিকদের জানান, ‘দীর্ঘদিন অচল থাকা এসি মেরামত করে চালুর সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে।’

বিজ্ঞাপন

৫ জুলাই রাজধানীর গুলশানের নর্দা এলাকায় একটি সেলুনে এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ হন ১৪ জন। এর মধ্যে ৯ জন গুরুতর দগ্ধ হন। দীর্ঘদিনে চিকিৎসায় তারা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন।

ঢামেক বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শংকর পাল বলেন, ‘ঢামেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে আসা রোগীর সংখ্যা প্রায় ২৫ থেকে ২৭ জনের মতো। তাদের ভেতরে মারা গিয়েছেন ১১ জন।’

নিজের অভিজ্ঞতার সূত্র ধরে পার্থ শংক পাল জানান, কয়েক বছর আগেও এসি বিস্ফোরণের কোনো রোগী তারা পেতেন না। কিন্তু এখন দগ্ধ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

এর কারণ জানতে চাইলে এলজি বাটার ফ্লাই কোম্পানির হাতিরপুল শাখার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার উম্মে কুলসুম সুইটি বলেন, ‘ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এসি বিস্ফোরণের ঘটনা বেশিরভাগ সময় ঘটে থাকে। এছাড়া, কম্প্রেশারের ভেতরে জ্যাম লেগে থাকে, গ্যাস লিক হয়ে যায়। এসব কারণে এসি ঘরে থাকলে সচেতন হতে হবে। সার্ভিসিং করাতে হবে সময়মতো, নয়তো বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটবে।’

একনাগাড়ে ৮ ঘণ্টার বেশি এসি চালানো উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন উম্মে কুলসুম সুইটি। তিনি বলেন, ‘এর চেয়ে বেশি সময় ধরে এসি চালালে কম্প্রেশারে চাপ পড়ে। তাছাড়া আউটডোর ইউনিট ও আউটডোর বিল্ডিংয়ের মধ্যে যথেষ্ট ফাঁকা স্থান রাখা উচিত, যেন কম্প্রেশারে বাধাহীনভাবে বাতাস চলাচল করতে পারে। ত্রুটিপূর্ণ ইনস্টলেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসি বিস্ফোরণ ঘটে বেশি।’

পুরান ঢাকার বিশ্বজৎ চৌধুরী উত্তাধিকার সূত্রেই ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের ব্যবসা করেন। তিনি বলেন, ‘এসি বিস্ফোরণের অন্যতম কারণ বৈদ্যুতিক ভোল্টেজের ওঠানামা।‘ তার মতে, সাধারণত হাই ভোল্টেজের কারণেই এসব ঘটনা ঘটে। হাই ভোল্টেজের কারণে যেকোনো ইলেকট্রিক মেশিনের ওপর চাপ তৈরি হলেই সেখানে সমস্যা হবে। এ জন্য প্রতিটি ভবনে সার্কিট ব্রেকার, ভালো মানের আর্থ-ইন লাইন থাকতে হবে।

আবার অনেক সময় দাহ্য গ্যাসের কারণেও এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে বলে মন্তব্য এলজি বাটারফ্লাইয়ের ডেপুটি ম্যানেজার (সার্ভিস) এমডি জাহাঙ্গীর উদ্দীনের। আবার এসির প্রেশার বেড়ে গেলেও কম্প্রেশার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে জানান তিনি। জাহঙ্গীর বলেন, ‘এ কারণে নিয়ম করে ভালো টেকনিশিয়ান দিয়ে এসির সার্ভিসিং করাতে হবে, যেন এসির সংযোগস্থলে কোনো ধরনের ধুলোবালি বা ময়লা জমতে না পারে।‘

এসি বিস্ফোরণের জন্য বজ্রপাতও একটি কারণ বলে উল্লেখ করেন জাহাঙ্গীর উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘বজ্রপাতের সময় অবশ্যই এসি বন্ধ করে দিতে হবে।‘ আর এ থেকে রক্ষা পেতে বাসার ছাদে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

সারাবাংলা/জেএ/এমএনএইচ

এসি বিস্ফোরণ প্রাণহানি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর