‘লজ্জা লাগে যখন শুনি, অভিভাবকরা প্রশ্ন কিনতে টাকা নিয়ে বসে আছে’
২ এপ্রিল ২০১৯ ২০:২৯
ঢাকা: অভিভাবকরাও ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র কেনার জন্য টাকা নিয়ে বসে থাকেন— এমন কথা শুনলে নিজেই লজ্জা পান বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তবে টাকা খরচ করেও আর কিছু পাওয়া যাবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যখন শুনি যে পরীক্ষার্থী ও তার অবিভাবকরা টাকা নিয়ে প্রস্তুত থাকে কোথাও প্রশ্ন পাওয়া যায় কি না, এটা শুনে লজ্জা লাগে। তবে এখন আর ইচ্ছা করে টাকা খরচ করেও প্রশ্ন পাওয়া যাবে না। সব বন্ধ করা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) বিকেল ৫টার দিকে ডিআরইউ সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দীপু মনি এসব কথা বলেন। এসময় একজন ডিআরইউ সদস্যের সন্তানের অনুরোধে তিনি নিজের শিক্ষাজীবনের গল্প শোনান।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, আমি যে স্কুলে (কলাবাগান স্কুল) পড়তাম, তার পেছনে একটি বিল ছিল। বর্তমানে ওই এলাকা এখন পান্থপথ বলে পরিচিত। স্কুলের জানালা দিয়ে বরশি ফেলে মাছ ধরতাম। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ওই স্কুলে পড়েছি। সেই স্কুলজীবনের স্মৃতি কোনোভাবেই ভুলতে পারি না। সেখান থেকে হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হয়েছি। নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। হলিক্রসে পড়া অবস্থায় সব ধরনের কাজ করতে হয়েছে। স্কুল শিখিয়েছে, কোনো কাজ অসম্মানের নয়, ছোট নয়। যে কাজ নিজের, তাতে উঁচু-নিচু নেই।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমান জাতীয় সংসদে হলিক্রস স্কুলের চার জন সংসদ সদস্য আমরা প্রতিনিধিত্ব করছি। আমি, সাগুফতা ইয়াসমীন এমিলি, সুবর্ণা মোস্তফা ও মাননীয় স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী। কিছু দিন আগে ওই স্কুলের পক্ষ থেকে আমাদের সংবর্ধনা দেয়। আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। একটি হলরুমে সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষার্থী ছিল। বক্তব্য হয়েছে, অনেক কথা হয়েছে। কথার ফাঁকে ফাঁকে তালির শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ হয়নি। একদম পিনপতন নীরবতা। এই শৃঙ্খলা আমরা শিখেছি। সেই একই শৃঙ্খলা শিক্ষার্থীদের এখনো শেখানো হচ্ছে। শৃঙ্খলা তোমাদেরও শিখতে হবে। শৃঙ্খলা না শিখলে জীবনে উন্নতি করা যায় না।
ডিআরইউ সদস্যদের প্রতি শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিশুদের ভবিষ্যত তৈরির জন্য সবাইকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। যার যার জায়গা থেকে সততার মাধ্যমে কাজ করে যেতে হবে। আমি আমার জায়গা থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আপনাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
শিশুদের শিক্ষার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে এ প্লাসের যে প্রতিযোগিতা চলছে, তাতে মানসিক চাপে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এ প্লাসের মাঝখানে পড়ে শিশুদের শৈশব ও কৈশোরের আনন্দ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত ১০ বছরে শিক্ষা ব্যবস্থার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এখন শিক্ষার মানের দিকে যেতে হবে। তবে তার জন্য শিশুদের মনের আনন্দ যেন নষ্ট না হয়। শিশুদের সঙ্গে আমিও প্রতিদিন পরীক্ষা দিচ্ছি। টেনশন হয়, এই বুঝি কোথাও থেকে খবর আসছে— প্রশ্ন পাওয়া গেছে। এটা-সেটা নানা চিন্তা কাজ করে মাথায়।
এর আগে বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানের সভাপতি ডিআরইউ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন বলেন, শিক্ষামন্ত্রী শুধু একজন মন্ত্রীই নন, তিনি সরকারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিও বটে। আপনি সবসময় আমাদের পাশে থাকবেন। যেকোনো সহযোগিতা করবেন। সাগর-রুনি হত্যার বিচারের বিষয়ে আপনি সোচ্চার হবেন, এটিও আমরা প্রত্যাশা করি। কারণ এই ক্ষতটা আমাদের ভোলার নয়। সবসময় কাঁদায়।
ডিআরইউ সাংগাঠনিক সম্পাদক আফজাল বারির সঞ্চালনায় সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ খান তার বক্তব্যে বলেন, ২০১৩ সাল থেকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্যদের মেধাবী ছেলে-মেয়েদের বৃত্তি দিয়ে আসছে। এ বছর প্রাথমিক ও জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৫০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর