Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা: ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতার শঙ্কা


৩ এপ্রিল ২০১৯ ১৯:৪৫

ঢাকা: ঋণখেলাপিদের দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সরল সুদে ১২ বছরে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ দেয়া সংক্রান্ত অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। তাদের মতে, ঋণখেলাপিদের এই ধরনের সুবিধা দেয়ার অর্থ হচ্ছে, নিয়মিত ব্যাংক ঋণ পরিশোধকারীদের নিরুৎসাহিত করা। এতে, যে সব ব্যবসায়ী ১১/১২ শতাংশ সুদে নিয়মিত ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করছেন, তাদের সুবিধা না দিয়ে ঋণখেলাপিদের পুরস্কার করা হচ্ছে। এই ধরনের প্রণোদনা ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা আরো বাড়বে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে কয়েকটি ব্যাংকের এমডির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে নাম না প্রকাশ করার শর্তে তারা শুধু জানান, সরকারের এ সিদ্ধান্তে ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।

এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, যে সব ব্যবসায়ী নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেন তাদের চেয়ে ঋণ খেলাপিদের বেশি সুবিধা দেয়া হলে ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে। নিয়মিত ব্যাংক ঋণ পরিশোধকারীরা যদি ঋণ পরিশোধ না করে খেলাপি হয়ে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করলে তখন কি হবে ?

মির্জ্জা আজিজ বলেন, বর্তমানে অনেক ব্যবসায়ী ১১/১২ শতাংশ সুদে নিয়মিত ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করছেন, আর ঋণখেলাপিরা ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধ করবে? এটা কিভাবে সম্ভব? তাহলে কাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে? তিনি বলেন, ঋণখেলাপিদের  ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টেসহ ১২ বছরে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের সুবিধা দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। ঋণখেলাপিদের এই সুবিধা দেয়া হলে নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারীরা কেন ১১/১২ শতাংশ সুদে ২/৩ বছরে ঋণ পরিশোধ করবে। বরং ঋণ পরিশোধ না করলে ৯ শতাংশ সরল সুদে ১২ বছরে তা পরিশোধ করার সুবিধা পাবেন।

সাবেক এই অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ঋণ খেলাপিদের সুবিধা দেয়ার পক্ষে আমি নই। বরং ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে কিভাবে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। একইভাবে ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে যে দীর্ঘসূত্রিতা রয়েছে তা সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। যেকোনো মূল্যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ উদ্ধার করতে হবে। এটা উদ্ধার করতে না পারলে ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণ দেওয়ার প্রবৃদ্ধি কমে যায়।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ঋণখেলাপিদের ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা দেয়ার অর্থ হলো যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করছেন তাদেরকে বঞ্চিত করা। ঋণখেলাপিরা যখন ঋণ নিয়েছিল তখন ১১/১২ শতাংশ সুদে নিয়েছিল। এখন এসে তাদের ৯ শতাংশ সরল সুদে ১২ বছরে পরিশোধ করার সুযোগ দেয়া হলে ব্যাংকের আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে করে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, নিয়মিত ১১/১২ শতাংশ সুদে নিয়মিত পরিশোধ করছেন তাদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হচ্ছে না। ফলে এইসব সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অনেক হিসাব নিকাশ করতে হবে। তবে, যারা ঋণ নিয়ে সত্যিকার অর্থে বিশেষ বিপদে পড়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে কেইস টু কেইস দুই/একটি ঘটনার ক্ষেত্রে কিছু বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। তবে, ঢালাওভাবে ঋণখেলাপিদের সুবিধার দেয়ার কোনো মানে হয় না।

অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আবু আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, খেলাপী ঋণ উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে কিছু ছাড়া দেয়া ভালো উদ্যোগ। তবে, খেয়াল রাখতে হবে এই ধরনের পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যেন ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

তিনি বলেন, ঋণখেলাপিদের সুবিধা দেয়ার আগে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধে করছেন তারাও যেন একই সুবিধা পায় সে দিকে নজর রাখতে হবে। নিয়মিত ব্যাংক ঋণ পরিশোধকারীরা ১২/১৩ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধ করছেন। আর ঋণ পরিশোধ না করার কারণে ৯ শতাংশ সুদে ১২ বছরে পরিশোধের সুযোগ দেয়া যুক্তিসঙ্গত নয়। তবে, একই সুবিধা আগে নিয়মিত পরিশোধকারীদের দিয়ে এটা করা যেতে পারে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে প্রণোদনা ঘোষণা করেন। ঘোষিত প্রণোদনায় বলা হয়, ঋণখেলাপিরা দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৭ শতাংশ সরল সুদে ১২ বছরে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ পাবেন। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর শের-ই বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী তার পূর্বের ঘোষণা থেকে কিছুটা সরে আসেন। তিনি বলেন, ঋণখেলাপিদের দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সরল সুদে ১২ বছরে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ পাবেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, এর আগে সাত শতাংশ ছিল, এটা এখন ফাইনালি ৯ শতাংশ করা হয়েছে। ৯ শতাংশ হলো বেঞ্চমার্ক, এখন কেউ আপত্তি করতে পারবে না। সাত শতাংশ কম ছিল, এখন ৯ করে দিয়েছি।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের শেষে দেশে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। তবে, এটি খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র নয়। এর বাইরেও প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা হিসাব থেকে বাদ দিতে অবলোপন করেছে ব্যাংকগুলো। এগুলোও খেলাপি ঋণ।

সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ৫৯টি ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংক ৪১টি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ৯টি এবং অবশিষ্ট বাকি ৯টি হলো বিদেশি ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয়ই মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেক রয়েছে। এই খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৮ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ৩০ শতাংশেরও বেশি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৮ হাজার ২২৫ কোটি টাকা বা বিতরণকৃত ঋণের ৫.৫৭ শতাংশ। এছাড়া, বিদেশি ব্যাংকগুলো বিতরণকৃত ঋণের ৬.৫৩ শতাংশ বা ২ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে।

সারাবাংলা/জিএস/জেএএম

ঋণ খেলাপী সুদের হার

বিজ্ঞাপন

আদানি গ্রুপের নতুন সংকট
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৩৬

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর