একনজরে লোকসভা নির্বাচন
৪ এপ্রিল ২০১৯ ১৫:০৩
পুরো বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রতি ছয় জনের মধ্যে একজনের বসবাস ভারতে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চীনকে টপকিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্রে পরিণত হতে চলেছে দেশটি। বর্তমানে দেশটিতে নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯০ কোটি। আর কয়েকদিনের মধ্যেই সেখানে শুরু হতে যাচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় নির্বাচন।
সম্প্রতি চীনকে পেছনে ফেলে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বর্ধমান অর্থনীতির দেশ হিসেবে নাম লিখিয়েছে ভারত। বিশ্বের সেরা অর্থনীতির তালিকায় দেশটি ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বজায় থাকলে ২০২০ সালের মধ্যে তারা যুক্তরাজ্যকে টপকে যেতে পারে।
এদিকে, সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা বিশ্ববাসীর নজর ভারতের ওপর স্থির করে রেখেছে। দু’টি দেশই পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন। তাদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বের বৃহৎ একটি অংশ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, পাকিস্তান হামলা চালালে তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।
সব মিলিয়ে এইবার ভারতের নির্বাচন, পুরো বিশ্বের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আগামী ১১ এপ্রিল থেকে এই লোকসভা নির্বাচন শুরু হতে যাচ্ছে।
ভোট গ্রহণ
ভারতের লোকসভা নির্বাচন ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র চর্চা’র সুযোগ হিসেবে পরিচিত। এর পেছনে সঙ্গত যুক্তিও রয়েছে।
প্রায় ৯০ কোটি ভোটার ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের জন্য দেশজুড়ে ৫৪৩ জন প্রার্থী নির্বাচিত করবেন। সাধারণত এই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় কয়েকটি ধাপে। এই বছর লোকসভা নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হবে মোট সাতটি ধাপে।
পুরো দেশজুড়ে বসানো হবে ৯ লাখ ৩০ হাজার ভোটকেন্দ্র। ভোট গ্রহণ করা হবে ইভিএম মেশিন ব্যবহার করে।
নির্বাচন শেষ হবে ১৯ মে। এরপর ভোট গণনার জন্য কয়েকদিন বিরতি নেওয়া হবে। ২৩ মে ভোট গণনা শেষ হবে। এরপর যে দল বা জোট অন্তত ২৭২টি আসনে জয়ী হবে তারা একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠন করতে পারবে। পুরো প্রক্রিয়াটি দেখাশোনার দায়িত্বে থাকবে ভারতের নির্বাচন কমিশন।
কোথায়, কবে?
এইবারের লোকসভা নির্বাচন সাত ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। কোনো কোনো রাজ্যে দুই দিনব্যাপী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নিচে রাজ্যগুলোর ভোট গ্রহণের দিন ও আসন উল্লেখ করা হলো:
১১ এপ্রিল- অন্ধ্র প্রদেশ (২৫), অরুণাচল প্রদেশ (২), আসাম (৫), বিহার (৪), ছত্তিশগড় (১), জম্মু ও কাশ্মীর (২), মহারাষ্ট্র (৭), মনিপুর (১), মেঘালয় (২), মিজোরাম (১), নাগাল্যান্ড (১), উড়িষ্যা (৪), সিকিম (১), তেলেঙ্গানা (১৭), ত্রিপুরা (১), উত্তর প্রদেশ (৮), পশ্চিমবঙ্গ (২), আন্দামান ও নিকবার (১), লক্ষদ্বীপ (১)
১৮ এপ্রিল: আসাম (৫), বিহার (৫), ছত্তিশগড় (৩), জম্মু ও কাশ্মীর (২), মহারাষ্ট্র (১০), কর্ণাটক (১৪), মনিপুর (১), উড়িষ্যা (৫), তামিল নাডু (৩৯), ত্রিপুরা (১), উত্তর প্রদেশ (৮), পশ্চিমবঙ্গ (৩), পুদুচেরি (১)
২৩ এপ্রিল: আসাম (৪), বিহার (৫), ছত্তিশগড় (৭), গুজরাট (২৬), গোয়া (২), জম্মু ও কাশ্মীর (১), কর্ণাটক (১৪), কেরালা (২০), মহারাষ্ট্র (১৪), উড়িষ্যা (৬), উত্তর প্রদেশ (১০), পশ্চিমবঙ্গ (৫), দাদার ও নগর হাবেলি (১), দামান ও দিউ (১)
২৯ এপ্রিল: বিহার (৫), জম্মু ও কাশ্মীর (১), ঝাড়খন্ড (৩), মধ্য প্রদেশ (৬), মহারাষ্ট্র (১৭), উড়িষ্যা (৬), উত্তর প্রদেশ (১৩), পশ্চিমবঙ্গ (৮), রাজস্থান (১৩)
৬ মে: বিহার (১), জম্মু ও কাশ্মীর (২), ঝাড়খন্ড (৪), মধ্য প্রদেশ (৭), উত্তর প্রদেশ (১৪), পশ্চিমবঙ্গ (৭), রাজস্থান (১২)
১২ মে: বিহার (৮), হরিয়ানা (১০), ঝাড়খন্ড (৪), মধ্য প্রদেশ (৮), উত্তর প্রদেশ (১৪), পশ্চিমবঙ্গ (৮), দিল্লি (৭)
১৯ মে: বিহার (৮), ঝাড়খন্ড (৩), মধ্য প্রদেশ (৮), পাঞ্জাব (১৩), উত্তর প্রদেশ (১৩), পশ্চিমবঙ্গ (৯), চণ্ডীগড় (১), হিমাচল প্রদেশ (৪)
২৩ মে: ভোট গণনা শেষ
হেভিওয়েট প্রার্থী কারা?
লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার জন্য লড়বেন নরেন্দ্র মোদি। ২০১৪ সালে ব্যাপক ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন তিনি ও তার নেতৃত্বাধীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।
আসন্ন নির্বাচনে বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে রাহুল গান্ধী নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস ও আঞ্চলিক দলগুলোর জোট ‘মহাগতবন্ধন’ (মহাজোট)। মোদীর বিপক্ষে অবস্থান নিতে এই জোটে অংশ নিয়েছে ভারতের অত্যন্ত প্রভাবশালী কিছু আঞ্চলিক দল। এসব দলের মধ্যে রয়েছে, দলিত নেত্রী মায়াবতীর নেতৃত্বাধীন সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও বাহুজান সমাজ পার্টি (বিএসপি)। দলটি উত্তর প্রদেশ থেকে নির্বাচন করবে। একক প্রদেশ হিসেবে এখান থেকেই নির্বাচিত হয় পার্লামেন্টের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক এমপি।
জোটটিতে আরও রয়েছে, তৃনমূল কংগ্রেস। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দলটি। অপর দিকে অরবিন্দ কেজরিওয়াল নেতৃত্বাধীন দিল্লির ক্ষমতাসীন দল আম আদমি পার্টিও (এএপি) জোট বেধেছে কংগ্রেসের সাথে। (বিবিসি অবলম্বনে)
সারাবাংলা/আরএ