মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে
৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৯:৪৪
আর মাত্র ৯ দিন। তারপরই আপামর বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। নতুন বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিতে যেন এই মুহূর্তে মুখিয়ে গোটা জাতি। ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’— প্রতিপাদ্য নিয়ে সেই বরণের প্রস্তুতিতে মুখর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদও। আগামী ১৪ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য লোকজ সব মোটিফ তৈরি হচ্ছে এখানেই। তা দিয়ে বরণ করা হবে বঙ্গাব্দ ১৪২৬।
বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে গত ১৯ মার্চ থেকে চারুকলা অনুষদের একশ থেকে দেড়শ শিক্ষার্থী সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শিল্পকর্ম তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চারুকলা অনুষদে গিয়ে দেখা যায়, কেউ রংতুলি দিয়ে জলরং আঁকছেন, কেউ বাশ, বাত দিয়ে বাঘ, প্যাচা তৈরি করছেন কেউবা আবার তৈরিকৃত শিল্পকর্ম বিক্রির জন্য বসে আছেন।
বর্ষবরণে এবার মূল শিল্পকর্মের মধ্যে রয়েছে নানা লোক কাহিনী, বাঘের গলা থেকে বকের হাড় ছাড়ানোর দৃশ্যের আলোকে শিল্পকর্ম, কাঠ ঠোকরা, দুমোখওয়ালা ঘোড়া ও প্যাচা।
এছাড়া, বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ বরণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে শিল্পকর্মের মধ্যে রয়েছে পেপার ম্যাশ, প্যাচার মূর্তি, কাগজের বাঘের মুখোশ, বড় রাজা-রাণী, ছোট রাজা-রাণী, দুতিন ধরনের পাখি, মাটি কলসি, মাটির মাছ, ছোট সরা, মাটির ব্যাংক, কলস সেট, তুহিন পাখি, ফুল, বড় পায়রা ও বুলবুলি পাখি ইত্যাদি।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে চারুকলাতে গিয়ে দেখা যায়, চারুকলা অনুষদের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা শিল্পকর্ম তৈরি করছেন। আর অনুষদের জুনিয়র শিক্ষার্থীরা এগুলো তৈরিতে সাহায্য করছে। কেউ কেউ আবার তৈরিকৃত জিনিসগুলো বিক্রির জন্য রয়েছেন।
কেমন দামে বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে অদ্বিতি রায় নামে একজন শিক্ষার্থী জানান, বড় সরাগুলোর দাম ৪০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত, পাখাগুলো ১৫০-২০০ টাকা, প্রদ্বীপ সেট ৫০০ থেকে ৮০০ টকা পর্যন্ত। কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে প্রোডাক্টগুলোর দাম এবার একটু বেশি বলেও জানান তারা।
জাতিসংঘের সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা গত বছরের ৩০ নভেম্বর বাঙালির প্রাণের বর্ষ বরণের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে তাদের ‘রিপ্রেজেনটেটিভ লিস্ট অব ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। তবে শিল্পকর্ম তৈরি করার জন্য চারুকলা অনুষদ সরকারের মন্ত্রণালয় অথবা কোনো স্পন্সর গ্রহণ করে না।
শিল্পকর্ম বিক্রি করেই মূলত মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। কেমন বিক্রি হচ্ছে এ বিষয়ে অদ্বিতি রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম দিকে তো এখনো বিক্রি কম। আসলে আমাদের শিল্পকর্মের জন্য খরচ যতটা ততটা ফান্ড এখনো তৈরি হয়নি। প্রত্যেকটি স্থাপত্যের জন্য ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হয়, আমরা বাইরে থেকে স্পন্সর নেয় না। মাঝে মাঝে কাজ থেমে থাকে।তাছাড়া মাঝে মধ্যে ঝড় বৃষ্টি রয়েছে। তবে দিন দিন বিক্রি বাড়ছে।’
বর্ষবরণের প্রস্তুতির বিষয়ে চারুকলা অনুষদ বর্ষবরণ কমিটির আহ্বায়ক তন্ময় দেবনাথ সারাবাংলাকে বলেন, বর্ষবরণের মূল আকর্ষণ র্যালী তথা মঙ্গল শোভাযাত্রা। সেই শোভাযাত্রা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য যা যা আমাদের করণীয় স্টেপ বাই স্টেপ আমরা তার সবগুলোই করছি। সব ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়িয়ে আমরা মঙ্গল শোভা যাত্রাকে সুন্দর করতে চাচ্ছি।’
বর্ষবরণের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কাঠামোগুলো তৈরি হচ্ছে, প্রস্তুতি চলছে। দুতিন পর আরও দৃশ্যমান হবে। গতবার কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবকিছু চলছে ভালোই, এবার আমরা ডাকসুর সহযোগিতাও পাবো।’
ছবি: সুমিত আহমেদ
সারাবাংলা/কেকে/এমআই