আবরার হত্যা: মালিকের নির্দেশে বেপরোয়া চালক
৫ এপ্রিল ২০১৯ ১২:৩৮
ঢাকা: বাসের মালিকের নির্দেশেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল সুপ্রভাত পরিবহনের স্টিয়ারিংয়ে থাকা কন্ডাক্টর ইয়াছিন। আর সেই বেপরোয়া বাসের চাপাতেই প্রাণ হারান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী। মালিক তার বাসকে বাঁচাতে এতটা বেপরোয়া হওয়ার নির্দেশ না দিলে হয়তো এই দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন। সুপ্রভাত পরিবহনের ওই বাসটির মালিক ননী গোপালকে বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাতে গ্রেফতারের বিষয়ে এই ব্রিফিং করেন তিনি।
ব্রিফিংয়ে মাসুদুর রহমান বলেন, ওই বাসটির চালক সিরাজুল একটি তরুণীকে চাপা দিয়েছিল। এরপর বাসটিকে বাঁচাতে মালিক ননী গোপাল মরিয়া হয়ে ওঠেন। তিনি জানতেন, বাসের কন্ডাক্টর বা হেলপারের তো গাড়ি চালানোর মতো কোনো লাইসেন্স নেই। তারপরও তিনি গাড়িকে রক্ষা করার জন্য কন্ডাক্টরকে গাড়ি চালিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বাসমালিকের এই নির্দেশের ফলেই আবরার নিহত হয়েছেন। তিনি একটু সংযত হলে, একটু বিবেক-বিবেচনা প্রয়োগ করলে দ্বিতীয় এই দুর্ঘটনাটি নাও ঘটতে পারত।
উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, আমরা এ ঘটনার তদন্তে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। এরই মধ্যে ওই বাসের মালিক, চালক, কন্ডাক্টর ও হেলপারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চালক, কন্ডাক্টর ও হেলপারকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এবার মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তিনি জানান, সুপ্রভাত পরিবহনের ওই বাসের মালিক ননী গোপালকে আজ (শুক্রবার) আদালতে পাঠানো হবে। আমরা আদালতে রিমান্ড আবেদন করব। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করলে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তার কাছ থেকে তথ্য জানার চেষ্টা করব। এরপর সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আমরা অভিযোগপত্র দাখিল করব।
উল্লেখ্য, ১৯ মার্চ সকালে রাজধানীর বসুন্ধরা গেট এলাকায় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের নিচে চাপা পড়েন বিইউপি শিক্ষার্থী আবরার। এ ঘটনায় আবরারের বাবা মামলা দায়ের করলে পুলিশ চালক সিরাজুলকে মামলায় গ্রেফতার দেখায়। বলা হয়, এর আগে শাহজাদপুর এলাকায় এক তরুণীকে চাপা দেয় সিরাজুল। আতঙ্কিত হয়ে ফের আবরারকে চাপা দেয় সে।
পরে গোয়েন্দা পুলিশের তৎপরতায় বাসের কন্ডাক্টর ইয়াছিনকে চাঁদপুর ও হেলপার ইব্রাহিমকে রাজধানীর বাড্ডা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি জানায়, ওই তরুণীকে চাপা দেওয়ার পরই আটক হন সিরাজুল। ওই সময় বাসমালিকের নির্দেশে বাস বাঁচাতে চালকের আসনে বসে ইয়াছিন। বাসটি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার সময় আবরার বাসচাপা পড়ে মারা যান। বাস ফেলে কন্ডাক্টর ও হেলপার পালিয়ে যায়।
সড়কে আবরারের হত্যার শিকার হওয়ার এ ঘটনায় বিইউপি শিক্ষার্থীরা বসুন্ধরা গেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। দুর্ঘটনাস্থলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম একটি ওভারব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন পরদিন। পরে তার সঙ্গ বৈঠকের পর আশ্বাসের ভিত্তিতে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর
আবরার হত্যা বাসের ধাক্কায় বিইউপি শিক্ষার্থীর মৃত্যু সুপ্রভাত পরিবহন