Thursday 23 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘একটু পানি’ খাওয়াও হলো না ইরামের


৫ এপ্রিল ২০১৯ ২১:৩৪

ঢাকা: ‘আমরা সবাই ক্রিকেট খেলা শেষে মাঠের এক কোনায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। এসময় ইরাম বললো তোরা বস, আমি একটু পানি খেয়ে আসি। এটা বলেই এক ছোট ভাইয়ের সাইকেল নিয়ে মোস্তমাঝির দোকানের দিকে যাচ্ছিল। তখন আমরা মাঠ থেকেই দেখছিলাম রমজান আর স্বাধীন পরিবহনের দুটো বাস একটা আরেকটারে ওভারটেক করার চেষ্টা করতেছে। আমাদের বন্ধুও সেসময় রাস্তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। ঠিক তখনি ইরামকে রমজান বাস ধাক্কা দেয়। ধাক্কা খেয়ে সে পড়ে গেলে রজমান বাস তার গায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। এসময় ওভারটেক করতে যাওয়া স্বাধীন বাসও চাপা দেয় তাকে।’

বিজ্ঞাপন

দুর্ঘটনার বর্ণনায় কথাগুলো বলছিলেন গোলাম মোস্তফা মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও প্রতক্ষ্যদর্শী মো. রাকিব হোসেন। শুক্রবার (৫ এপ্রিল) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর অদূরে রামপুরা-ডেমরা সড়কে বাসচাপায় নিহত হয় রাকিবের বন্ধু ইবনে মো. ইরাম ব্যাপারী। নিহত ইরামও একই কলেজের একাদশ শ্রেণির কমার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন।

রাকিব সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সবাই একসঙ্গেই চলতাম। সব কিছুতেই আমাদের সঙ্গে থাকতো ইরাম। আজ সকালেও একসঙ্গে খেলতে আসলাম। কিন্তু যদি জানতাম পানি খেতে গিয়ে সে আর আমাদের মাঝে আসবে না, তাইলে তারে যাইতে দিতাম না।’

নিহত ইরামের অপর বন্ধু নোমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সে খুব ভালো ক্রিকেট খেলতো, পড়াশোনায়ও ভালো ছিল। তার স্বপ্ন ছিল আর্মির অফিসার হবে। আমাদের প্রায় সময়ই সে কথা বলতো। কিন্তু আজ বাসের প্রতিযোগিতায় তার জীবনটাই চইলা গেলো। এ রাস্তায় (রামপুরা-ডেমরা) দিনরাত ২৪ ঘণ্টা বাস-ট্রাক চলে বেপরোয়া। এদের এখনি না থামালে আরও বহু মানুষ মারা যাবে। এর আগেও অনেক লোক মারা গেছে। আমরা আর কোনো মৃত্যু চাই না, সমাধান চাই।’

নিহত ইরামের বড় ভাই আব্দুল সাত্তার লিখন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল আর্মি অফিসার হবে। কিন্তু বেপরোয়া বাসের চাপায় তার স্বপ্নটা পূরণ হলো না। তাক আমাগো কাছ থেইক্যা কাইড়া নিলো নিষ্ঠুর বাস। আমাদের স্বপ্নটাও চুরমার করে দিলো। এটার বিচার চাই।’

শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যান গোলাম মোস্তফা মডেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। আমরা দায়ী চালক ও হেলপারসহ সংশ্লিষ্ট যারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার কাছে। আর এ বিচার অবিলম্বে করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

ডেমরায় কলেজ ছাত্র নিহতের ঘটনায় চালক-হেলপার আটক

এদিকে, সড়ক দুর্ঘটনায় কলেজ শিক্ষার্থী নিহতের খবর পেয়ে গোলাম মোস্তফা কলেজ ও আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী একং স্থানীয়রা ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার চৌরাস্তা এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে দুপুর দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ওই সড়কের সকল যানবাহন চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। এসময় কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করেন তারা।

পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ডিএমপির ওয়ারি জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ফরিদ উদ্দিন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থী নিহতের খবর পেয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিল। আমরা তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তাদের দাবি-দাওয়া শুনে সেগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেই। এরপর তারা বিকেল পাঁচটার দিকে সড়ক ছেড়ে চলে যান।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় রমজান পরিবহনের চালক ও হেলপারকে আটক করা হয়েছে। বাসটিও আটক রয়েছে। এ দুর্ঘটনার পর এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে আমরা ডেমরা-রামপুরা সড়কে যেসব স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ সেসব স্থানে স্পিড বেকার (গতিরোধক) স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করেছি।’

সারাবাংলা/এসএইচ/এমও

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর