Monday 07 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আগুনের ঝুঁকিতে গাউছিয়া মার্কেটের নূর ম্যানশন


৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:০৭ | আপডেট: ৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:০৮
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজধানীর এ্যালিফেন্ট রোডের গাউছিয়া মার্কেটের নূর ম্যানশন শপিং সেন্টারকে অতি-ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শন টিম। মার্কেটটিতে অগ্নিনির্বাপণে ব্যবহৃত হাইড্রেন্ট, হোসপাইপ, ফায়ার এলার্ম, এক্সটিংগুইশার এবং রিজার্ভার ওয়াটারসহ কোনো কিছুরই ব্যবস্থা নেই। তাই মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ৬ তলায় ভবনের প্রবেশ মুখে লাল রঙের ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছে ফায়ারের পরিদর্শন টিম। তারা জানিয়েছে, অগ্নি নিরাপত্তার সরঞ্জাম মার্কেটটিতে স্থাপন করা হলে তবেই ব্যানার সরিয়ে নেয়া হবে।

শুক্রবার (০৫ এপ্রিল) সকাল দশটার দিকে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের পলাশী সাব-স্টেশনের পরিদর্শন টিম ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। মার্কেটের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সতর্কতার জন্য ব্যানারে লেখা হয়েছে, ‘অগ্নি নিরাপত্তার দিক থেকে নুর ম্যানশন মার্কেটটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক হওয়ার অনুরোধ করা হল।’ একই রকম লেখা ব্যানার গত ৩১ মার্চ একবার টাঙানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু একদিন পরই ০১ এপ্রিল সেই ব্যানার ছিঁড়ে ফেলায় আজ আবারও ব্যানার টাঙানো হয়েছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের পলাশী সাব-স্টেশনের এক কর্মকর্তা।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু মার্কেট ঝুঁকি-মুক্ত করতে যারা উদ্যোগ নিবে খোদ তারাই বলছে মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। এমনকি মার্কেটে আগুন লাগার সম্ভাবনাও তেমন নেই বলে দাবি করছে মার্কেট ব্যবসায়ী মালিক সমিতি। সমিতির দাবি, ফায়ার সার্ভিস মার্কেটটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও মার্কেটটি কোনো ঝুঁকির মধ্যেই নেই। এমনকি ৭০ বছর ধরে মার্কেটটিতে কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেনি বলে দাবি তাদের। তাই ফায়ার সার্ভিসের সতর্কতা তারা কতটা আমলে নিবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যায়।

পলাশী সাব-স্টেশনের স্টেশন অফিসার সাইফুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, গাউছিয়ার নূর ম্যানশন মার্কেটটিতে ৫ দিন আগেও অগ্নি ঝুঁকির কথা বলে ব্যানার টাঙানো হয়েছিল। কিন্তু সেই ব্যানার একদিন পর খুঁজেই পাওয়া যায়নি। আমাদের মনিটরিং টিম একদিন পর গিয়ে দেখে ব্যানারটা নেই। তাই আমরা আজ আবারও ব্যানার টাঙিয়েছি। যাতে সবাই সতর্ক হতে পারে এবং দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদেরকে দোষারোপ করতে না পারে।

তিনি আরও বলেন, আমরা মার্কেটটি পরিদর্শনকালে অগ্নি নিরাপত্তার কোনো সরঞ্জামাদি খুঁজে পাইনি। ৬ তলার মার্কেটটির ১ থেকে ৪ তলা পর্যন্ত ৩৯১টি কাপড়-চোপড় ও ফেব্রিক্সের দোকান আছে। কিন্তু এতোগুলো দোকানের জন্য ফায়ার এক্সটিংগুইশার (অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র) আছে মাত্র ১৬টি। যা কোনোভাবেই পর্যাপ্ত নয়। অথচ প্রত্যেকটা দোকানে একটা করে হলেও অন্তত ৩৯১টি এক্সটিংগুইশার রাখার উচিত ছিল।

সাইফুল ইসলাম বলেন, আবার ৫ ও ৬ তলা পর্যন্ত আবাসিক গার্মেন্ট কারখানা করা হয়েছে। সেখানে কোনো কিছুই নেই অগ্নি নির্বাপণের জন্য। অথচ মার্কেটটিতে আগুনের ঝুঁকি অনেক বেশি। কারণ, মার্কেটের চারপাশে বৈদ্যুতিক যে তার রয়েছে সেগুলোর সবগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। আবার পুরো মার্কেটটি কাপড় চোপড়ে ভরা। আগুন লাগলে বেঁচে ফেরার কোনো উপায় নেই মার্কেটে কর্মরত প্রায় ৫ হাজার জীবনের।

তিনি বলেন, আবার প্রতিদিন হাজার ক্রেতাও আসে এখানে। অথচ এর জরুরি বহির্গমনের কোনো সিঁড়ি না থাকলেও সাধারণ যে দুটি সিঁড়ি আছে, সেগুলোতেও ছোটখাটো দোকান খুলে বসেছে। যে কারণে জরুরি অবস্থায় দ্রুত বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া আরও বেশ কিছু অনিয়ম থাকায় আমরা এটিকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সতর্কতার জন্য ব্যানার দিয়েছি। তারা এগুলোর সমাধান করলে ব্যানার সরানো হবে।

সিঁড়ি দখল করে চলছে ব্যবসা

মার্কেটটিতে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পুরো মার্কেটের চলাচলের পথ একেবারেই সরু হয়ে আছে দোকানের মালামাল রাখায়। আবার মার্কেটটির সিঁড়ির সামনে এবং এর পাশ ধরেও ছোট ছোট দোকান ও মালামাল রাখা হয়েছে। এতে দুজন মানুষ একসঙ্গে চলাচল করা প্রায় অসম্ভব। আবার মার্কেটের বাহিরের অংশে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক তার এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে কোনটি কিসের তার সেটি নির্ণয় করাও সম্ভব নয়। এছাড়া, নেই কোনো পানি সরবরাহের হোসপাইপ। লাইন থাকলেও তাতে নেই পানি। পাঁচ ও ছয় তলার গার্মেন্টে গিয়ে দেখা যায় সেখানে নেই কোনো এক্সটিংগুইশার। আবার যারা সেখানে কাজ করছেন তারা সিগারেট খাচ্ছেন নিশ্চিন্তে। এতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি থাকলেও তাতে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কেটের ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, তারা (ফায়ার সার্ভিস) ব্যানার দিয়ে গেছে হয়তো আমাদের ভালোর জন্য। মার্কেটের পাঁচ তলা-ছয় তলায় কয়েকটা গার্মেন্টস থাকায় হয়তো এটা করেছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমাদের মার্কেট কোনো ঝুঁকির মধ্য নেই। আমরা প্রায় সত্তর বছর ধরে ব্যবসা করতেছি। আগুনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা সার্বক্ষণিক তদারকি করি। তাই ঝুঁকি হওয়ার কোনো কারণ নেই।

তাহলে কি ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শন ভুল ছিল এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভুল ছিল কিনা জানি না। তবে তারা যেভাবে অতি-ঝুঁকি বলছে তেমন ঝুঁকি নেই। সব দোকানে ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখা কি সম্ভব। যেটুকু রাখা দরকার ততটুকু আছে আমাদের। তবুও গার্মেন্টগুলোর সদস্যা সমাধান করার আশ্বাস দিলেন তিনি।

এ বিষয়ে ফায়ার এন্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) এ কে এম শাকিল নেয়াজ সারাবাংলাকে বলেন, আমরা আপাতত অতি-ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার ভবনগুলোতে ব্যানার টাঙিয়ে সবাইকে সতর্ক করার চেষ্টা করছি। যদি তারা সমস্যা সমাধান না করে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চালাবো। তখন কিন্তু কেউ কোনো ছাড় পাবে না।

সারাবাংলা/এসএইচ/এনএইচ

আগুনের ঝুঁকি গাউছিয়া মার্কেট