সেশন জটে অধিভুক্ত সাত কলেজের ২ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী
৬ এপ্রিল ২০১৯ ১০:১৪
ঢাকা: ২০১৬-১৭ সেশনে ইডেন মহিলা কলেজে সম্মান প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন রুমানা হক। তখন পর্যন্ত কলেজটি ছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন। তবে ওই সেশনের মাঝামাঝি সময়ে রাজধানীর বাকি ছয় সরকারি কলেজের মতো ইডেনকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করে নেওয়া হয়।
২০১৬-১৭ সেশনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা এখন তৃতীয় বর্ষের মাঝামাঝি সময়ে আছে। তবে রুমানা এখনো দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষাই দিতে পারেননি। এমনকি এখনো জানেনই না দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় কবে বসবেন তারা!
সারাবাংলাকে রুমানা বলেন, ‘গতবছরের এপ্রিলে প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছি। রেজাল্ট পেয়েছি ডিসেম্বরে। জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত পরীক্ষার তারিখই জানি না। এর মধ্যে মে মাস থেকে শুরু হবে রোজা। মনে হচ্ছে এক বছরের সেশন জটিলতায় পড়ে গেছি আমরা।’
শুধু রুমানাই নয় অধিভুক্ত সাত কলেজের প্রায় দুই লাখ তিরিশ হাজার শিক্ষার্থী এখন আছেন সেশন জটে। ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থীদের সম্মান শেষ বর্ষের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছিল ২০১৬ সালে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে মৌখিক পরীক্ষা দিতে তাদেরকে অপেক্ষা করতে হয়েছে এক বছরেরও বেশি সময়। ২০১২-১৩ সেশনের শিক্ষার্থীরাও সম্মান শেষ করতে একবছর অতিরিক্ত সময় ব্যয় করেছেন।
২০১৩-১৪ সেশনে ভর্তি হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেখানে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে ক্যারিয়ার গোছাচ্ছেন, সেখানে একই সেশনের সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সম্মান শেষ বর্ষের পরীক্ষাই শেষ করতে পারেননি!
ঢাকা কলেজের ১৩-১৪ সেশনের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য হতাশার। শিক্ষাজীবনে কখনো কোথাও আটকাইনি। কোনো ক্লাসে ফেল নেই। কিন্তু উচ্চশিক্ষা নিতে এসে প্রায় দেড় বছরের জটিলতায় পড়ে গেছি। বন্ধুরা অনেকদূর এগিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা পিছিয়ে আছি। পরিবার থেকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, আর কতদূর? তখন সত্যিই মন খারাপ লাগে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের মাধ্যমে যারা সাত কলেজে ভর্তি হয়েছে তাদের পরীক্ষা আমরা নিয়মিত নিতে পারছি। কিন্তু যেসব সেশন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল সেগুলো নিয়ে একটু দেরি হচ্ছে। কারণ তাদের কাগজপত্রগুলো আমাদের সেখান থেকে আনতে হয়েছে। নিজেদের ডাটাবেজে সেগুলো যুক্ত করতে হয়েছে। এ কারণেই কিছুটা দেরি হচ্ছে। সেটাও দ্রুত মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।’
সেশনজট, সময়মতো পরীক্ষা, রুটিন প্রকাশ, ফলাফল না হওয়ায় যেমন শিক্ষার্থীদের জীবন অনিশ্চয়তায় পড়েছে। তেমনি নতুন অধিভুক্ত সাত কলেজ সামলাতেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। কর্মকর্তাদেরকে প্রতিদিনই নতুন নতুন সমস্যার সমাধান করতে হচ্ছে। খাতা পুনঃমূল্যায়ন, ভর্তি-প্রক্রিয়ার ভুল, ফরম পূরণে ভুলসহ ছোট খাট অনেক সমস্যা বেড়ে যাওয়ার কারণেও পুরো বিষয়টি এখনো হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে পারছে না তারা।
এই বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের যে সক্ষমতা রয়েছে তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি বোঝা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেখানে চল্লিশ হাজার শিক্ষার্থীর কাজ করতাম, এখন প্রায় তিন লাখ শিক্ষার্থীর কাজ করতে হচ্ছে। এজন্য চাইলেও আমরা সাত কলেজের বিষয়ে দ্রুত সমাধানে যেতে পারছি না! তবে চেষ্টা চলছে।’
ওই কর্মকর্তা জানান, অধিভুক্ত কলেজগুলোর জন্য একাডেমিক ক্যালেন্ডার, নতুন সিলেবাস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানের পরীক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান পুরো বিষয়টি ‘অগোছালো তবে গোছানোর চেষ্টা চলছে’ উল্লেখ করে আর কোনো মন্তব্য করতে তিনি রাজি হননি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে অভিভুক্ত হওয়া সাত কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
সারাবাংলা/টিএস/একে