Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে এখনই কথা বলা জরুরী’


২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ১৯:২৪

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ‘মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী এখনো রাখাইন অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। প্রাণ বাঁচাতে এখনো রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছে। এখন সময় এসেছে মিয়ানমারের উপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের। বিশেষ করে ভারত, চীন এবং রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলা জরুরী, যাতে এই দেশগুলো মিয়ানমারের সঙ্গে অস্ত্র ব্যবসা এখনই বন্ধ করে। কেননা, এসব দেশের তৈরি অস্ত্র দিয়েই মিয়ানমারের নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

আসিয়ান পার্লামেন্ট ফর হিউম্যান রাইটস (এপিআরএইচ) এর চেয়ারপারসন ও মালয়েশিয়ান রাজনীতিবিদ চার্লস সেন্টিয়াগো, এমপি বুধবার দুপুরে ঢাকায় এসব কথা বলেন। চলমান রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো পরিদর্শন শেষে বুধবার ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে এপিআরএইচ। এ সময় সিঙ্গাপুরের সাবেক এমপি রিচারডা ডিনাডায়েরেক ও থাইল্যান্ডের এমপি লুইস নিগ উপস্থিত ছিলেন।

এপিআরএইচের চেয়ারপারসন চার্লস সেন্টিয়াগো, এমপি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার দুই দেশই চুক্তি করেছে। অথচ এখনো রাখাইনে নির্যাতন চলছে। প্রতিদিনই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গারা বাঁচার তাগিদে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তার মানে হচ্ছে, রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে মিয়ানমার সরকারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। তাই এখন সময় এসেছে বৈশ্বিকভাবে মিয়ানমারকে চাপ দেয়া, যাতে তারা এই সমস্যার সমাধান সৎভাবে করতে বাধ্য হয়।’
কী ধরনের চাপ প্রয়োগ করা উচিত, গণমাধ্যম কর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারপারসন চার্লস সেন্টিয়াগো বলেন,

বিজ্ঞাপন

‘এখনই মিয়ানমারে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করা প্রয়োজন। বিশেষ করে ভারত, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে এখনই কথা বলা উচিত। এই তিন দেশই মিয়ানমারে সর্বোচ্চ সংখ্যক অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে। আবার চীন ও ভারত মিয়ানমারের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গেও জড়িত। তাই এই তিন দেশের সঙ্গে এখনই কথা বলা প্রয়োজন, যাতে তারা মিয়ানমারে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তিনজন জেনারেল রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনায় চিহ্নিত হয়েছে। এই তিন জেনারেলের বিদেশে যতো সম্পদ আছে তা বাজেয়াপ্ত করা প্রয়োজন। তাদের পরিবার ও ছেলেমেয়েরা বিদেশে বসবাস করছে। তাদেরকে সেখান থেকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠানো উচিত।’

থাইল্যান্ডের এমপি লুইস নিগ বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য দুই দেশ চুক্তি করেছে। অথচ যাদের জন্য এই চুক্তি করা, তারা কিন্তু কিছুই জানে না। দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভুক্তভোগীদের কোনো প্রতিনিধি নাই। তাই প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত দুই দেশের বৈঠকগুলোতে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। চুক্তির বিস্তারিত বিষয়গুলোও রোহিঙ্গাদের জানানো প্রয়োজন।’

সিঙ্গাপুরের সাবেক এমপি রিচারডা ডিনাডায়েরেক বলেন, ‘কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। মানুষ মানুষের উপর এমন নির্যাতন করতে পারে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়, অথচ বাস্তবে অনেক ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হচ্ছে।’

কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি বিচার বিশ্লেষণ শেষে এপিএইচআরের প্রতিনিধিরা পাঁচটি সুপারিশ করেন। এগুলো হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়ার ব্যবস্থা করা, তাদের সম্পদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, নিজ দেশে নাগরিকত্ব দেওয়া, রোহিঙ্গারা যখন দেশে ফিরে যাবে তখন সেখানে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের অথবা ইউরোপের শান্তিরক্ষা সেনা মোতায়েন করা এবং তাদের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা দেওয়া।

রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে সেন্টিয়াগো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনের সময় তিনি অত্যন্ত— সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমরা তার সাহসের প্রশংসা করি এবং তার পাশে থাকতে চাই।’

সারাবাংলা/জেআইএল/এমএ

এপিএইচআর রোহিঙ্গা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর