Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মার খাচ্ছেন চিকিৎসক, কর্মসূচিতেই ‘একাত্মতা’ অ্যাসোসিয়েশনের


৬ এপ্রিল ২০১৯ ১৭:২২

ঢাকা: কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধর, কক্ষ ভাঙচুর করায় সাধারণ চিকিৎসকরা ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, চিকিৎসকদের সুরক্ষার জন্য কোনো আইন নেই। যার কারণে চিকিৎসকরা বারবার মার খাচ্ছে। তবে এসব ঘটনায় প্রতিক্রিয়া নেই বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ)। মারধরের ঘটনা ঘটলে চিকিৎসকদের নেওয়া যেকোনো কর্মসূচিতে ‘একাত্মতা’ প্রকাশ করেই দায় এড়ানোর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

বিজ্ঞাপন

চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম একাধিকবার বলেছিলেন, হাসপাতালে রোগী ও চিকিৎসকদের সুরক্ষার লক্ষ্যে আইন প্রয়োজন। সেজন্য তখন একটি কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের সুরক্ষার জন্য যে আইন, সেটা আর হয়নি। এ কারণে বারবার চিকিৎসকরা হাসপাতালে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের একাধিক চিকিৎসক সারাবাংলাকে জানান, সেদিন (৪ এপ্রিল) কক্সবাজার সদর (মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালে একিউট প্যানক্রিয়াটাইটিসে আক্রান্ত এক রোগী মারা যান। হঠাৎই রোগীর অবস্থা খারাপ হলে স্বজনদের মৌখিক অনুমতি নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সিপিআর (কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন) শুরু করেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তারপরও পর তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এর জেরেই কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. রাসেল আল মাহমুদ, ডা. জ্যাকসন ত্রিপুরাতে মারধর করেন রোগীর স্বজনরা।

এসময় ইন্টার্ন চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্স, স্টাফদের প্রায় ৮ জনের মতো মারধরের শিকার হন। এর মধ্যে চার মতো গুরুতর আহত। এছাড়া ডা. ফাহিমের কক্ষেও হামলা চালান রোগীর স্বজনরা। ভেঙে ফেলেন তার কক্ষের প্রতিটি আসবাব।হামলায় মাথায় গুরুতর আঘাত পান সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. ফাহিম মো. তাজনুন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হয়েছে।

এ ঘটনায় বিএমএ কক্সবাজার জেলা শাখা শিগগিরই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। হামলাকারীদের শাস্তি এবং আইনের আওতায় আনতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা শনিবার (৬ এপ্রিল) বিএমএ’র কর্মসূচি হিবেসে মানববন্ধন করেছেন। তবে এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা করা হয়নি। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে জানিয়েছে, আজ (৬ এপ্রিল, শনিবার) এ বিষয়ে মামলা করা হবে।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ছোটন চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘হামলাকারীদের এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। তবে আমাদের কাছে ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। তারা সংখ্যায় অনেক ছিল, চিকিৎসককে মারার পর তারা ডা. ফাহিমের কক্ষেও ভাঙচুর করে।’

ইন্টার্ন চিকিৎসদ পরিষদের সহ-সভাপতি ডা. তাহমিদ আশরাফ জানান, আগামীকাল রোববার এ ঘটনার প্রতিবাদে তারা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি করবেন। একইসঙ্গে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হবে।

এদিকে, কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এসময় তারা হামলাকারীদের শাস্তির দাবি জানান।

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আশিক রেজা রিয়াদ বলেছেন, ‘পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

বাংলাদেশে চিকিৎসক নির্যাতন প্রতিরোধে আলাদা কোনো আইন নেই, শাস্তি হবে কিভাবে প্রশ্ন রেখে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘প্রশাসন এমনকি গণমাধ্যমও চিকিৎসক নির্যাতনের বিপক্ষে প্রতিবাদ করে না। বরং বিভিন্ন কায়দায় জনগণকে উল্টো ডাক্তারদের বিরুদ্ধে উসকে দেয়। তাই সবার আগে প্রশাসন এবং গণমাধ্যমের এই মনোভাব বদলাতে হবে। শক্ত আইন করে সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে।’

ডা. জাহিদুর রহমান আরও বলেন, ‘কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সন্ত্রাসী হামলার যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ থাকার পরও কোনো অজ্ঞাত কারণে একজনের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ এর চেয়ে অনেক ছোট ইস্যুতেও রাষ্ট্র নিজে বাদি হয়ে মামলা করে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আসামি গ্রেফতার করে। তারমানে কি রাষ্ট্র তার চিকিৎসকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা দিতে আন্তরিক না, নাকি ব্যর্থ?’

চিকিৎসকের ওপর হামলার এ ঘটনায় কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কক্সবাজার বিএমএর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছি।’

বিএমএ মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আগামীকাল রোববার স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বসবো। সেখানে, এ বিষয়ে আলোচনা হবে। আর কক্সবাজার বিএমএর সঙ্গে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করছি। চিকিৎসা সুরক্ষা আইন নিয়ে বলতে বলতে আমরা ক্লান্ত। আগামী ৮ এবং ৯ এপ্রিল আমরা মন্ত্রণালয়ে যাবো। বিভিন্ন বিষয়ে সেখানে আলোচনা হবে। তার মধ্যে এটিও একটি।’

তবে সাধারণ চিকিৎসকদের অভিযোগ বিএমএ কেবল একাত্মতা জানিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করে, এমন প্রশ্নে ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা তো মারদাঙ্গায় যেতে পারি না। একটা ডিসিপ্লিন ওয়েতে যেতে হবে। এখন সারা বাংলাদেশে একটা আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’ তবে এর আগে মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সারাবাংলা/জেএ/এমও

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর