‘ওপরওয়ালা না বাঁচালে এবারও হাবুডুবু খাব’
৬ এপ্রিল ২০১৯ ২০:৪৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা মেগাপ্রকল্প নেওয়া হলেও চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গত এক বছরে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি আসেনি বলে অভিযোগ এসেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-চট্টগ্রাম আয়োজিত এক সভায়। এর ফলে আগামী বর্ষায় আবারও জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করে বাপা সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ‘ওপরওয়ালা না বাঁচালে এবারের বর্ষায়ও আমরা জলাবদ্ধতায় হাবুডুবু খাব।’
শনিবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে বাপা-চট্টগ্রামের সভাপতি ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মু. সিকান্দার খান বলেন, ‘চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ ধরণের প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে অনেক সমন্বয় দরকার যা সিভিল সোসাইটি করতে পারে। অন্যরা পারে না। বেশি টাকা দিলেই ভালো সমাধান হবে না।’
নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ‘মেগাপ্রকল্প নিয়ে কি করা হচ্ছে তা জনগণকে জানাতে হবে। না হলে পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচ করে দুই বছর পরও আগের অবস্থা হবে। চলমান মেগা প্রকল্পের কোনো যথাযথ ডিজাইন নেই। খাল পরিষ্কারের কোনো মেথডলজি নেই। পরিকল্পনা বা ডিজাইন কিছু করা হয়েছে? সেটা কী জনগণ জানে?’
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ‘মেগা প্রকল্পে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি এক বছরে নেই। রাখঢাক করে কাজ চলছে। রাখঢাকের নেপথ্যে কোনো সদিচ্ছা থাকে না। ওপরওয়ালা না বাঁচালে এবারও আমরা জলাবদ্ধতায় হাবুডুবু খাব। একটাই আবেদন প্রধানমন্ত্রীর যে সদিচ্ছা তা অপচয় যেন আমরা না করি।’
জরুরি ভিত্তিতে চট্টগ্রাম শহরের খালগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার তাগিদে দিয়ে পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘বর্ষায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হিসাব করে মূল ও বড় খালগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। পানির গতিপথ বাধাহীন করা দরকার। না হলে হাজার কোটি টাকা খরচ করেও সুফল আসবে না।’
নাগরিকের মতামতহীন ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া প্রকল্পে কোনো সুফল আসবে না বলেও মত দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
সিকান্দার খান বলেন, ‘বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে যেভাবে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা দরকার তার কোনোটাই হয়নি। তাই এগুলোর সুফল আসে না।’
স্থপতি জেরিনা হোসাইন বলেন, ‘সিটি করপোরেশন, সিডিএ বা ওয়াসা যে-ই হোক প্রকল্প নেওয়ার আগে টাউন হল আলোচনা করতে হবে। নাগরিকের মতামতহীন প্রকল্পের ভিত্তিতে কোনো বাসযোগ্য নগরী গড়া সম্ভব নয়।’
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরের এই খালগুলো কারা দখল করেছে? আপনি-আমি মিলেই তো দখল করেছি, যেখানে খালি পেয়েছি ভবন তুলেছি। চট্টগ্রামে সরকারি সংস্থাগুলোর ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। তা না হলে ভালো উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব না।’
ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন প্রকৌলী এম আলী আশরাফ এবং অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাপার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ বি এম আবু নোমান।
সিডিএর প্রধান পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামাল হোসেন, অধ্যাপক চৌধুরী মনজুরুল হক, চেম্বার পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, সিদ্দিকুল ইসলাম, বাপার সদস্য মো. বখতেয়ার, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এম এ জব্বার এবং জাবেদ নজরুল ইসলামও সভায় বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই