কাজ ও দায়বদ্ধতায় একটুও কমতি থাকবে না: রুবানা হক
৭ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২০
ঢাকা: পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে জয়ী মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক বলেছেন, কাজের ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতার জায়গায় তার একটুও কমতি থাকবে না। এক্ষেত্রে তার স্বামী ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক তাকে অনুপ্রেরণা দিবে। শনিবার (৬ এপ্রিল) বিজিএমইএ নির্বাচন চলাকালে জয়ের আভাস দেখা দিলে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এসব কথা বলেন রুবানা হক।
বিজিএমইএর নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হয়েছে ড. রুবানা হকের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত-ফোরাম। উৎসবমুখর পরিবেশে দিনভর ভোটগ্রহণ ও গণনা শেষে শনিবার সাড়ে নয়টার দিকে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড। ঢাকা ও চট্টগ্রামে মোট ৩৫টি পরিচালক পদের বিপরীতে ৩৫ টিতেই জয়ী হয়েছে তার প্যানেল। এর মধ্য দিয়ে বিজিএমইএর ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী সভাপতি হচ্ছেন।
এর আগে, প্রায় সবকটি পদে জয়ের আভাস পেলে সাংবাদিকরা রুবানা হকের সঙ্গে কথা বলেন। জানতে চান জয়ের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া। তখনো চূড়ান্ত ফল ঘোষণা না হওয়ায় বিজয়ী প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে ‘যদি নির্বাচিত হন তাহলে কী করবেন’ তুলে ধরেন তার সেইসব পরিকল্পনা।
স্বামী প্রয়াত মেয়রের কথা স্মরণ করে রুবানা হক বলেন, আমার পক্ষ থেকে কথা হলো- আমার স্বামী প্রয়াত আনিসুল হক দুই বছরে সবাইকে দেখিয়েছেন কীভাবে পরিস্থিতি বদলানো সম্ভব। আমার কাজের ক্ষেত্রে, দায়বদ্ধতার জায়গায় একটুও কমতি দেখাব না। যদি কখনও ভুল করি বা অন্যায় করি ধরিয়ে দেবেন- এটা আপনাদের কাছে আমার দাবি থাকলো।
দায়িত্ব নেওয়ার পর পোশাকখাতের ভাবমূর্তি যেটুকু ঘাটতি আছে তা পূরণ করতে কাজে নেমে পড়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম কাজ হবে পোশাক খাতের ভাবমূর্তির ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা। বাংলাদেশ সস্তায় পণ্য দিচ্ছে বলে যে ন্যারেটিভ প্রচলিত আছে সেটা বদলাতে হবে। স্বস্তায় কখনও ভালো জিনিস হয় না। শব্দটি হবে ‘কম্পারেটিভলি গুড প্রাইজ’, সেই ট্রেন্ডস চালু করতে আমাদের কাজ করতে হবে। দামের ব্যাপারে দরকষাকষিতে কখনই ছাড় দেওয়া যাবে না। বিজিএমইএ থেকে আমি এবং আমার প্যানেল সেই লক্ষ্যে কাজ করার উদ্যোগ নিতে পারি।
যদি ফ্যাক্টরিগুলো মনে করে, দরকষাকষির ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য লাগবে আমরা তাহলে অবশ্যই নেগোসিয়েট করে দেব। সেটার জন্য আমরা আলাদা একটা সেল করবো- যোগ করেন রুবানা।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, ছোট ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প অনেকগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তাদের সবার কষ্ট হচ্ছে। অতিসত্বর তাদের পক্ষে আমাদের দাঁড়াতে হবে। কিছু দিন পরপর বেতন দিতে পারছেন না বলে আপনারা শুনতে পাচ্ছেন। এর ফলে অনেক ভদ্রলোক কষ্ট পাচ্ছেন। তাদের উত্তরণের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পকে কী করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
রুবানা আরও বলেন, কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে শেয়ার্ড বিল্ডিং গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু আমাদের ছোট ছোট তিন লাইন, চার লাইনের ফ্যাক্টরিগুলোর অনেক শেয়ার্ড বিল্ডিং আছে। এসব ফ্যাক্টরির ফায়ার এবং ইলেক্ট্রিক্যাল সেইফটিটা যেন নিশ্চিত হয় সেই লক্ষ্যে আমাদের করণীয় আছে।
ভবিষ্যতে পোশাক খাতে আরও বেশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গণমাধ্যমকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চান বলে জানান তিনি।
এই শিল্পে স্বচ্ছতার প্রতি গুরুত্বারোপ করে রুবানা বলেন, এই সেক্টরে একেবারেই স্বচ্ছতার প্রয়োজন আছে। গণমাধ্যম যদি আমাদের সঙ্গে থাকে এবং আমরা দুই পক্ষ যদি এক হয়ে কাজ করি তাহলে আমি নিশ্চিত এই সেক্টরের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে একেবারেই সময় লাগবে না। নিজেরা যেন একজন অন্যের বিরুদ্ধে অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হই সেটাই হবে চ্যালেঞ্জ। সঠিক দামে পৌঁছাতে না পারলেও ফ্যাক্টরির চাকা চলতে হবে বলে অল্প দামে অর্ডার নিয়ে নেওয়া ঠিক হবে না। এই জায়গাটায় আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। কারণ ক্রেতারা যতই বলুক উনারা চলে যাবেন, আসলে উনারা যেতে পারবেন না। কারণ বাংলাদেশের মতো এমন দাম অন্য কোনো দেশ অফার করতে পারবেনা।
কারখানার নিরাপত্তার বিষয়ে বিদেশি ক্রেতাদের তদারকি প্রতিষ্ঠান অ্যাকর্ড ও এলায়েন্সকে শীঘ্রই আদালতের নির্দেশ মেনে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের আহ্বান জানান তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে রুবানা আরও বলেন, অ্যাকর্ড এলায়েন্স আমাদের জন্য অনেক করেছে, সেজন্য আমরা তাদের কাছে খুবই কৃতজ্ঞ। কিন্তু এখন আমাদের ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ কারখানাই ঠিক হয়ে গেছে। ফলে এখন আমাদের নজর দিতে হবে তাদের দায়িত্ব হস্তান্তরের অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের দিকে। হাইকোর্ট অ্যাকর্ডকে আটটি শর্ত দিয়েছে। এই শর্ত মেনে যদি তারা থাকতে পারে তাহলে অল্প দিন থাকবে। কিন্তু তারা যে বলতেই থাকবে যে কারখানা এখনও প্রস্তুত না, সেটা আমরা মানতে রাজি নই।
শিল্প প্রস্তত কিনা সেটার জবাব শিল্প নিজেই তার কাজের মাধ্যমে দেবে- বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এনএইচ