Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেড়েছে অবকাঠামো-চিকিৎসক, বাড়েনি মান


৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৭:৪৮

ঢাকা: দেশে গত ১০ বছরে স্বাস্থ্য অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি। বেড়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিধিও। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি চিকিৎসক ও নার্স। প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থাপিত হয়েছে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক। কিন্তু সে তুলনায় বাড়েনি স্বাস্থ্যসেবার মান। টাকা না দিলে সরকারি হাসপাতালগুলোয় পরীক্ষার সুযোগ পাওয়া যায় না। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসার জন্য গেলে সেখানে ভোগান্তি ছাড়া চিকিৎসা মেলে না। এই অভিযোগ রাজধানী ঢাকাসহ উপজেলা, জেলা বা যেকোনও বিশেষায়িত হাসপাতালের বিরুদ্ধেই। এসব হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর স্ট্রেচার বা হুইল চেয়ার, ভর্তি হওয়া, বেড পাওয়া, বিনামূল্যর ওষুধ পাওয়াসহ চিকিৎসক-নার্সসেবা পাওয়া নিয়েও রয়েছে ভোগান্তি।

বিজ্ঞাপন

আবার বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়ার কথা অনেকেই ভাবতে পারেন না। নামে দামি হলেও এসব হাসপাতালকে অনিয়ম ও অপরিচ্ছন্নতা কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখার দায়ে  ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জরিমানা গুণতে হয়।চিকিৎসক নামের অচিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা করানোর অভিযোগ রয়েছে এসব বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে।

গত ২১ মার্চ ১০০ টাকা দিতে না পারায় লাশ নামানের স্ট্রেচার দেননি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মচারীরা। ছেলে শরিফুল চারতলা থেকে কাঁধে করে মায়ের লাশ নিয়ে নেমেছেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ৬৫ বছরের কুষ্টিয়ার মিছিরন শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাজধানীর বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসেন ভর্তি হতে। কিন্তু পরপর সাতদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বসে থাকলেও তিনি ভর্তি হতে পারেননি হাসপাতালে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সুপারিশ আসার পরও চিকিৎসা পাননি তিনি।

বাড়িতে মৃত সন্তান প্রসব করেন ২১ বছরের পলি। এরপর ভোলার বোরহানউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসক-নার্স কারও দেখাই পাননি তিনি। বরং, নানা ধরনের অনিয়মের কারণে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন মোশাররফ হোসেন। বাড়ি ফেরার পর স্ত্রী আরও অসুস্থ হলে তাকে নিয়ে বরিশালের একটি বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হন তিনি।

স্বাস্থ্যখাতের এত নিয়ম প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনো মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা থেকে দেশের ৫৫ ভাগ মানুষ বঞ্চিত। তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন গলির মুখের ওষুধ বিক্রেতা, গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার, কেউবা নিজে নিজেই খাচ্ছেন ওষুধ। দেশে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসেবাব্যয় দিনেদিনে বাড়ছে। অথচ সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলের (এসডিজি) ১৭টি উদ্দেশ্যের অন্যতম।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা দরকার। তা না হওয়ায় দেশে ধনী-গরিব সব শ্রেণীর মানুষ চিকিৎসা সেবা পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে বাধ্য হচ্ছে। আর এ ব্যয়ের জন্য দেশের ১৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে যাচ্ছে।

অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে সারাদেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বাধ্যকতা রয়েছে। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই  শতভাগ  মানুষের জন্যই মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টের (এএনএইচএ) সর্বশেষ (২০১৫ সাল) তথ্য থেকে জানা যায়, জনপ্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ৬৭ টাকা ব্যয় হচ্ছে মানুষের পকেট থেকে। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট থেকে জানা যায়, দেশের ৬৪ শতাংশ মানুষ নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করে চিকিৎসা করাচ্ছেন। চিকিৎসার জন্য যে টাকা খরচ হচ্ছে, সেখানে ৭০ শতাংশের বেশি যাচ্ছে ওষুধের পেছনে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে প্রায় ৪ কোটি ৮০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। আর প্রতি বছর শুধু অসুস্থতার কারণে প্রায় ৬৪ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছে। আর স্বাস্থ্যসেবার এই খরচ মেটাতে গিয়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিইে প্রতিবছরের মতো আজ (৭ এপ্রিল) বিশ্বজুড়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য, ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা: সবার জন্য, সর্বত্র’। এরই আলোকে বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সেবার মানে কোথাও সমস্যা থাকতে পারে। তবে দেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকসহ সেবা সংশ্লিষ্ট পদগুলোতে লোকবলের ঘাটতি রয়েছে। লোকবল না বাড়াতে পারলে, নিয়োগ না দিলে সেবার মান বাড়ানো সম্ভব নয়। তবে জনবল বাড়ানোর বিষয়টি একেবারে সম্ভব না হলেও পর্যায়ক্রমে সেবার মান নিশ্চিত করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টটিটিউটের পরিচালক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘ঢাকার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা পাচ্ছে না। তাই বিগত ৫ বছর ধরে শহর, নগর, গ্রাম থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সবার মাঝে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে কাজ করছে ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ (ইউএইচসি)।’

ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে যতটুকু সেবা দরকার, ততটুকু দিতে হবে। এমনকি এ জন্য যতটুকু খরচ, তার বেশি যেন না হয়, সেটিই কোয়ালিটি হেলথ কেয়ার। সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক যেটার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু সেখানে হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার, হেলথ অ্যাসিসটেন্টরা শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুসারে কোয়ালিটি সেবা দিতে পারছেন না।’

এদিকে, স্বাস্থ্যখাতে পর্যাপ্ত সেবার জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্ববায়ক ডা. ফয়জুল হাকিম। তিনি বলেন, ‘বরাদ্দ বাড়ানোর দরকার হলেও সরকার সেটা বাড়াচ্ছে না। আর এই সুযোগটাতেই কাজে লাগিয়েছে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত। তারা সেবার নামে দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে।’ যে কারণে মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছে বলেও তিনি মনে করেন।

সারাবাংলা/জেএ/এমএনএইচ

চিকিৎসার মান চিকিৎসাসেবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর