Monday 21 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক


৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৯:৫৮ | আপডেট: ৭ এপ্রিল ২০১৯ ১০:০৭
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতা ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে।

চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, স্মরণকালের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কোনো নেতার বিরুদ্ধে এই প্রথম ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠল, যার অনুসন্ধানে নামতে হয়েছে দুদককেও। বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিব্রতকর বলে জানিয়েছেন তারা।

অভিযুক্ত সাহাব উদ্দিন চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার। সংসদের একাংশের মতে, মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি এখন আর কমান্ডার পদে নেই। তবে সাহাব উদ্দিনের দাবি, বিষয়টি উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকায় তিনি এখনও স্বপদে বহাল আছেন।

বিজ্ঞাপন

দুই বছর আগে ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট কমান্ডের সহ-কমান্ডার (অর্থ) মোহাম্মদ ইউসুফ জেলা কমান্ডার সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ জমা দেন দুদকে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সেই অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। বর্তমানে অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর উপসহকারী পরিচালক মো. হোসাইন শরীফ।

সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সত্যতা স্বীকার করে দুদক কর্মকর্তা হোসাইন শরীফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এরই মধ্যে অভিযোগকারীর বক্তব্য নিয়েছি। বিভিন্ন রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছি। সেগুলো মাঠপর্যায়ে গিয়ে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। আরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই অনুসন্ধান প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জমা দেবো।’

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা অভিযোগকারী মোহাম্মদ ইউসুফের বক্তব্য রেকর্ড করেন। ইউসুফ লিখিত বক্তব্যও দুদক কর্মকর্তার কাছে জমা দেন। সেই লিখিত অভিযোগের অনুলিপি সারাবাংলার কাছে সংরক্ষিত আছে।

দুদকের কাছে সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে আছে— নগরীর পাঁচলাইশে কে বি ফজলুল কাদের চৌধুরী সড়কে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ফ্লোর অবৈধভাবে ভাড়া অথবা পজেশন হস্তান্তর করে অর্থ আত্মসাৎ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নামে সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া ভূমির তথ্য গোপন করে রেলওয়ের কাছে ভূমি বরাদ্দের আবেদন, ২০১৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাত, নির্বাচিত অর্থ কমান্ডারকে অন্ধকারে রেখে তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং অডিট রিপোর্ট গোপন করা।

অভিযোগকারী মোহাম্মদ ইউসুফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ষষ্ঠ তলার পজেশন অসম চুক্তির মাধ্যমে হস্তান্তর করে সাহাব উদ্দিন ৮০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া ভবনের আরও তিনটি তলার ভাড়া থেকে ব্যক্তিগতভাবে প্রতিমাসে এক লাখ টাকা করে মাসোহারা আদায় করেন তিনি। আমরা এসব অনিয়ম-দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে এসব বিষয় আমাদের জন্য বিব্রতকর ও লজ্জার। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নাম ভাঙিয়ে কারও দুর্নীতির দায় আমরা মুক্তিযোদ্ধারা নেব না।’

এর আগে, ২০১৩ সালের ২৮ জুলাই সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে একই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ এনে তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলামের কাছে তদন্তের আবেদন করেছিলেন মোহাম্মদ ইউসুফ।

ইউসুফ সারাবাংলাকে জানান, ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তে ওই গোয়েন্দা সংস্থা ৯টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের সত্যতা পায়। সেগুলো হচ্ছে— মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্রে জুয়ার আসর বসিয়ে অর্থ আদায়; মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবন লিজ দেওয়ায় অনিয়ম; মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা থেকে আয় করা আড়াই কোটি টাকার হিসাব না দেওয়া; মুক্তিযোদ্ধাদের ম্যাগাজিন প্রকাশে দুর্নীতি; নগরীর মুরাদপুরে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের বরাদ্দ জায়গার দখলদারদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া; বিতর্কিত জমিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অর্থ আদায়; মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য ও পুর্নবাসনের নামে অনিয়ম; নিজের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে সংসদের অর্থ আত্মসাৎ এবং ব্যক্তিজীবনে চাকরিক্ষেত্রে বিভিন্ন স্খলন।

জানা যায়, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনও পৃথকভাবে সাহাব উদ্দিনের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে জেলা প্রশাসনের তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনা কোনো অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

২০১৪ সালের ২৭ মে জেলা প্রশাসনের ওই সময়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাজমুল ইসলাম সরকার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ‘অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা ত অভিযোগ তদন্তের সময় প্রাওয়া লিফলেটের অতিরঞ্জিত ভাষা, অভিযুক্তকে ব্যক্তিগত আক্রমণের প্রবণতা এবং গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে টাইপ করা কাগজে আলাদা করে হাতে লেখা মেমো নম্বর ও সইবিহীন সুপারিশসহ প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তার মনে অভিযোগের বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।’

এই তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১৪ সালের ১৩ জুলাই চট্টগ্রামের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ তানভীর আজম ছিদ্দিকী বিষয়টি লিখিতভাবে নিষ্পত্তি করেন। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘উভয় পক্ষের বক্তব্য ও রেকর্ড পর্যালোচনায় দেখা যায়, সাবেক জেলা ইউনিট কমান্ডার, চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী মো. সাহাব উদ্দিন যেসব অভিযোগ এনেছেন, সেগুলো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়নি। এ অবস্থায় তাকে আনীত অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে।’

মোহাম্মদ ইউসুফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে বিচার পাইনি। সেজন্য আমরা ২০১৪ সালের ১১ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের কাছে আবেদন করি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এরপর আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাহাব উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসন তদন্ত করে আমাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। তারা অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি। এরপর আবারও দুদকের কাছে অভিযোগ করেছে বলে শুনেছি। তবে দুদক থেকে এখনও আমাকে ডাকেনি। যদি ডাকে, অবশ্যই আমি যাব এবং আমার বক্তব্য উপস্থাপন করব। আমি কোনো অন্যায় করিনি। প্রতিবার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন ঘনিয়ে এলে আমার বিরুদ্ধে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে এসব অভিযোগ উত্থাপন করে।’

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

চট্টগ্রাম দুদক দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতির অভিযোগ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাহাব উদ্দিন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর