Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘প্যারোল নয়, খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে’


৭ এপ্রিল ২০১৯ ১৮:০১

ঢাকা: প্যারোল নয়, কারাবন্দি খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চান বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় ঐক্যজোটের নেতারা। তারা বলেছেন, প্যারোলে মুক্তি খালেদা জিয়া এবং গণতন্ত্রের মৃত্যুর শামিল। তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য অচিরেই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন যাবে বিএনপি, ২০ দলীয় ঐক্যজোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

রোববার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে আয়োজিত গণঅনশনে বিএনপি এবং জোট নেতারা এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এই কর্মসূচির আয়োজন করে বিএনপি। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে গণঅনশন।

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা কোনো প্যারোলের কথা বলিনি। আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি জামিন পাওয়াটা খালেদা জিয়ার অধিকার। কারণ, যে মিথ্যা মামলায় তাকে জোর করে সাজা দেওয়া হয়েছে, সেই মামলা অন্যান্য ব্যক্তিরা জামিনে রয়েছেন।”

খালেদা জিয়াকে সরকার বাইরে আনতে ভয় পায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের জন্য সারাজীবন তিনি ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং মানুষকে গণতন্ত্র উপহার দিয়েছেন নব্বই সালে এবং একই সঙ্গে তিনি সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন।”

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “দেশটাকে এরা একেবারে কারাগারে পরিণত করেছে। আমাদের সমস্ত অর্জনগুলোকে এরা ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই দেশকে বাঁচাতে হলে দেশনেত্রীকে বাইরে এনে তার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে— এটাই আমাদের লক্ষ্য।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়া হয়নি, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র খালেদা জিয়ার মতোই এ সরকারের বাক্সে বন্দি— আমাদের এই কথা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রমাণ হয়ে গেছে।”

বিজ্ঞাপন

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, “আমাদের একমাত্র প্রত্যয় হবে গণতন্ত্রকে মুক্ত করা। আর গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হলে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র মুক্তি পাবে।”

সরকার আর বেশি দিন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখতে পারবে না দাবি করে তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাস গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটি অংশ। পৃথিবীর অনেক নেতা কারাবাসের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে মুক্ত করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, এ দেশের জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে।”

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, “যে মিত্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে, তারপরও গতানুগতিকভাবে অন্য যে কোনো সাধারণ নাগরিকদের জন্য যেভাবে আইন প্রয়োগ করা হয়, সেভাবে আইন প্রয়োগ করা হলে সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি পেতেন।”

সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, “আমাদের আপ্রাণ প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও এবং মাঠে ময়দানে দাবি ও আন্দোলন থাকা সত্ত্বেও আমরা তাকে মুক্ত করতে পারিনি। কারণ, আদালতের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ আছে। একজন আইনজীবী হিসেবে বলছি, আইনের প্রক্রিয়া বেগম খালেদা জিয়াকে দ্রুত মুক্ত করা সম্ভব হবে না। আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।”

জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, “এখানে এক হাজার লোক জীবন দিলেও খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। কারণ, ব্রিটিশদে পৌনে ২শ’ বছর, পাকিস্তানের ২৪ বছর এবং বাংলাদেশের ৪৭ বছরে এ রকম সিভিল ডিকটেটর আর আসেনি। আপনারা যদি একা আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারেন, তাহলে সবার আগে আপনাদের নেতার গলায় আমি মালা দেবো।”

ঘরের মধ্যে স্লোগান দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের একটি মহল কৌশলে প্রচার-প্রপাগাণ্ডা চালাচ্ছে। খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তির নামে নাটক করছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি দয়া নয়, অধিকার।

তিনি আরও বলেন, “খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে রাজপথে যেতে হবে এবং রাজপথের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তাকে মুক্ত করে আনতে হবে। যদি এক লাখ লোক জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকেন, তবেই খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন।”

বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, “আজকে গণতন্ত্র এবং বেগম খালেদা জিয়া, ন্যায় বিচার আর খালেদা জিয়া এক হয়ে গেছে। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট হারেনি, বিএনপি হারেনি, হেরেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব, হেরেছে আওয়ামী লীগ। ভবিষ্যতে আর কোনো দিন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে পারবে না।”

খালেদা জিয়ার প্যারোলের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, “প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাওয়ালপিন্ডিতে আইয়ুব খানের সঙ্গে মিটিং করতে যাননি। দ্বিতীয় নজির হবে বেগম খালেদা জিয়া কোনো প্যারোলে যাবেন না। প্যারোলে মুক্তি হবে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু, গণতন্ত্রের মৃত্যু।”

গণঅনশনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দীন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমদ আজম খান, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, গোলাম আকবর খন্দকার, আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, মজিবুর রহমান সারোয়ার, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম, কৃষিবিদ শামিমুর রহমান, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ অন্যরা।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু।

২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (একাংশ) মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও মুসলিম লীগের মহাসচিব শেখ জুলফিকার চৌধুরী বুলবুল বক্তব্য দেন।

কেন্দ্র ঘোষিত এই কর্মসূচি পালনের জন্য সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা আইইবি মিলনায়তনে আসতে শুরু করেন। সে সময় মিলনায়তনটির গেট বন্ধ ছিল। সকাল ১০টার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত হলে মিলনায়তনের গেট খুলে দেওয়া হয়। টানা সাড়ে ছয় ঘণ্টা অনশনের পর বিকেল পাঁচটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বিএনপি নেতাদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান।

সারাবাংলা/এজেড/এটি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর