দিগন্ত জোড়া হলুদ মাঠে মৌচাষিদের মধু সংগ্রহ
২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০৯:২০
রিপন আনসারী, মানিকগঞ্জ
মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে ফুলে ফুলে ঘুরে। তাদের একটু একটু করে সঞ্চিত মধু এক সময় মানুষ নিজের করে নেয়। তা হয়ে ওঠে মানুষের জন্য প্রিয় খাবার।
কিন্তু এখন মৌমাছির কাজ করছে মৌচাষিরা। এতে তারা বেশ সফলতাও পেয়েছে। মানিকগঞ্জের দিগন্ত জোড়া হলুদ রঙের সাজে সেজেছে। মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের হলুদ রঙের ফুল মৌচাষিদের সফলতার প্রমাণ।
মানিকগঞ্জ জেলার ৬টি উপজেলায় এবার প্রায় একশো মৌচাষি মধু সংগ্রহে নেমেছে। তবে ঘন কুয়াশার আর শৈত্য প্রবাহের কারণে মৌচাষিদের মাঝে মধু কম পাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবুও কৃষি কর্মকর্তারা আশা করছেন এ বছর দেড় কোটি টাকার মধু সংগ্রহ হবে।
সরেজমিনে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সরিষা ফুলের মাঠজুড়ে মৌ মাছির আনা গোনা। ফুল থেকে মধু আহরণে মৌমাছির দল খেলা করে প্রকৃতির সাথে। আর সরিষা ক্ষেতের আইলে মৌবাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন মৌচাষীরা। প্রায় প্রতি বছরই মানিকগঞ্জে মধু সংগ্রহের জন্য ছুটে আসেন সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনাসহ বেশ কয়েকটি জেলার মৌচাষীরা। জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে ছুটে বেড়ান তারা।
ঘাওর উপজেলার বানিয়া-জুরী ইউনিয়নের ঠাকুর-কান্দি এলাকায় ফসলের মাঠে মধু সংগ্রহে নেমেছেন সাতক্ষীরা থেকে আসা কয়েকজন মৌচাষী। এখানকার মৌচাষীরা জানান, ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া মধু সংগ্রহের এই কাজ চলবে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। প্রতিটি খামারে মৌমাছির বাক্স রয়েছে শতাধিক। প্রতি বাক্সে মৌমাছি রয়েছে কয়েক হাজার।সারাদিন মৌমাছিরা বাক্স থেকে বেরিয়ে পুরো সরিষা ক্ষেতের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে আবার বাক্সে ফিরে আসে। সপ্তাহে একবার বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। এতে প্রতি বাক্সতে ৪ থেকে ৫ কেজি মধু পাওয়া যায়। এভাবে শতাধিক বাক্স থেকে প্রতি সপ্তাহে ১০ থেকে ১২ মন মধু সংগ্রহ হয়।
মৌচাষী আকরাম জানান, ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহের কারণে মৌমাছিরা ফুল থেকে কাঙ্ক্ষিত মধু নিতে পারছে না। এতে চাহিদার তুলনায় মধু সংগ্রহ হচ্ছে কম। তাই এবার টার্গেট পূরণ হবে না। বর্তমানে প্রতি কেজি মধু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়।
এদিকে জেলার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উত্তর পাশে শিবালয় উপজেলার ফলসাটিয়া এলাকায় মৌচাষী হাজী মোঃ ওমর ফারুক বলেন, প্রায় ২৫ বছর ধরে মধু সংগ্রহের সাথে জড়িত আছি। এ বছর পোষা মৌমাছির ২০০ টি বাক্স নিয়ে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে জন্য মানিকগঞ্জ এসেছি। গত বছরের তুলনায় এবার মধুর উৎপাদন অনেক কম। এ পর্যন্ত যে টাকার মধু বিক্রি করছি তাতে মনে হচ্ছে লোকসান হবে।
একই উপজেলার উথুলী এলাকায় মৌচাষী মোঃ মোরশেদ আলম জানান, ১৫০ টি বাক্স নিয়ে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করছেন তিনি। গত বছর সরিষা ফুল থেকে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করে তিনি ভালই লাভবান হয়েছিলেন। কিন্তু এ বছর ঘনকুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহের কারণে টার্গেট অনুযায়ী মধু আহরণ করেত পারছেন না। এদের মতো মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেই মৌচাষীরা ছুটে বেড়াচ্ছেন সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহের কাজে। ঘনকুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহের কারণে এবার মধু সংগ্রহ কম হচ্ছে বলে মৌচাষীরা জানিয়েছেন।
এছাড়া ফলসাটিয়া এলাকায় মধু ক্রয় করতে আসা মতিউর রহমান জানান, প্রতিবছরই সরিষার মধু কিনে থাকি। ক্ষেত থেকে সরাসরি খাটি মধু পাওয়া যায়। দামও হাতের নাগালেই আছে। এক কেজি মধু ৩০০ টাকায় কিনেছি।
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. নাজমুল হোসাইন বলেন, এবছর সরিষার চাষ কম হয়েছে। তবে মৌমাছির বাক্স বসানো হয়েছে গতবারের চেয়ে বেশী। এবার ৪৫ টন মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে যা দেড় কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সারাবাংলা/আরসি