বর্ণিল শোভাযাত্রায় রাঙ্গামাটিতে বৈসাবি শুরু
৯ এপ্রিল ২০১৯ ১৫:১৪
রাঙ্গামাটি: আনন্দ, উচ্ছ্বাস আর নানা আনুষ্ঠানিকতায় রাঙ্গামাটিতে শুরু হলো বৈসাবি উৎসব। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলোর প্রধান সামাজিক অনুষ্ঠান বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু, সাংক্রানকে একসঙ্গে বলা হয় বৈসাবি। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা ।
বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু, সাংক্রান উদযাপন কমিটি এই শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এতে অংশ নিয়ে নিজেদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি তুলে ধরেন পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে অংশ নেন। থাকে ঐতিহ্যবাহী নাচের পরিবেশনাও।
মঙ্গলবার সকালে ‘জুম্ম সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও অধিকার নিশ্চিত করুনে ঐক্যবদ্ধ হোন’ এই স্লোগানে রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে উদ্বোধন অনুষ্ঠান, ডিসপ্লে প্রদর্শন ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ঊষাতন তালুকদার। পরে নৃ-গোষ্ঠীর শিল্পীরা দৃষ্টিনন্দন ডিসপ্লেতে অংশ নেন।
এ সময় ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘পাহাড়ে আজ থমথমে পরিস্থিতি বিরাজমান। এখানকার মানুষ আজ আর্থিক অস্বচ্ছলতা, থমথমে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা উৎসব উদযাপন করছি। আমরা এই উৎসবের মধ্য দিয়ে আহ্বান রাখবো, এই উৎসব থেকেই যেন ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সৃষ্টি হয়।’
জনসংহতি সমিতির এই নেতা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যতই এমনভাবে ফেলে রাখা হবে, ততই এনিয়ে নানা ধরণের উপসর্গ তৈরি হবে। তাই আমি বলবো এ ব্যাপারে সরকার, রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।’ ঊষাতন বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে বাস্তবভাবে অনুধাবন করতে হবে, যাতে করে আমরা ভুল পথে না যাই।’
এসময় তিনি নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নূর ও লিনউড মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও সন্ত্রাসী কায়দায় অস্ত্রবাজি করে সমাধান হয় না। আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধানে আসতে হয়। পাহাড়ে অশান্তি, গোলযোগ বন্ধ না হলে উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়।’
তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে নির্বাচন দেওয়ার সুপারিশের বিষয়ে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমি দেখলাম সংসদীয় কমিটি থেকে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে নির্বাচন দেওয়ার সুপারিশ এসেছে। আমরাও চাই স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে পার্বত্য জেলা পরিষদ গুলোতে নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হোক। কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নয়।’
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে বিশিষ্ট গবেষক ও শিক্ষাবিদ মংসানু চৌধুরী ও বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু সাংক্রান উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক ইন্দ্র লাল চাকমা বক্তব্য রাখেন। শেষে রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রাঙ্গামাটি শিল্পকলা একাডেমির সামনে গিয়ে শেষ হয়।
উদযাপন কমিটির আয়োজনে বুধবার (১০ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টায় রাঙ্গামাটির চিং হ্লা মং মারী স্টেডিয়ামে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। তিনদিন ব্যাপি অনুষ্ঠানমালার শেষ দিন শুক্রবার সকাল ছয়টায় রাঙামাটি রাজবন বিহারের পূর্বঘাটে মঙ্গল কামনায় ফুল ভাসান উৎসব পালন করা হবে।
সারাবাংলা/এসএমএন