শপথ নিতে উদগ্রীব ৫ জন, ফখরুলের ‘কৌশলী’ না
৯ এপ্রিল ২০১৯ ১৭:২৮
ঢাকা: আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শপথ না নিলে শূন্য হয়ে যাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপির ছয় সংসদ সদস্যের আসন। সে হিসাবে শপথের বাকি আর মাত্র ২০ দিন। এমন পরিস্থিতিতে শপথ গ্রহণের জন্য ‘উদগ্রীব’ হয়ে উঠেছেন বিএনপির পাঁচ সংসদ সদস্য। আরেক সংসদ সদস্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাকিদের মতো ‘হ্যাঁ’ বলতে পারছেন না, কৌশলে ‘না, না’ করছেন।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিজয়ী হন আট জন। এর মধ্যে দু’জন গণফোরাম ও বাকি ছয় জন বিজয়ী হন বিএনপি থেকে। এরই মধ্যে গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান দল ও জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয় জনের মধ্যে পাঁচ জন-ই শপথ গ্রহণের পক্ষে। কেবল দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ গ্রহণের ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে চাচ্ছেন না। আবার যারা শপথ নিতে চাচ্ছেন, তাদের ‘চাওয়া’কেও স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন।
সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত সরকারের প্রথম অধিবেশন শুরুর দিন থেকে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে শপথ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ হিসাবে আগামী ৩০ এপ্রিলের আগেই শপথ নিতে হবে বিএনপির বিজয়ী প্রার্থীদের। নইলে বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বগুড়া-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মো. আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে মো. হারুন অর রশীদ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাহিদুর রহমান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে শূন্য হয়ে যাওয়া এসব আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।
ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে বিজয়ী বিএনপি প্রার্থী জাহিদুর রহমান সম্প্রতি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সেই ১৯৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ধানের শীষ বিজয়ী হয়নি। এবারও আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ওয়ার্কাস পার্টির সাবেক তিন সংসদ সদস্যের সঙ্গে প্রদিদ্বন্দ্বিতা করে আমি বিজয়ী হয়েছি। এলাকার ৯০ ভাগ কর্মী-সমর্থক শপথ গ্রহণে পরামর্শই দিচ্ছেন। তারা মনে করছেন, শপথ না নিলে এ আসনটি ফের আওয়ামী লীগের হয়ে যাবে।’
শেষ পর্যন্ত দল শপথ না নিলে কী করবেন— এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদুর রহমান বলেন, ‘কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে তাকিয়ে আছি। আশা করি সেখান থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত আসবে। সংসদে গিয়ে জনগণের পক্ষে কথা বলার সুযোগ পাব।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচিত আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন, আমার জন্য কাজ করেছেন, তারা চান— সংসদে গিয়ে কথা বলি, ম্যাডামের মুক্তির বিষয়টি সংসদে তুলে ধরি। রাজপথের পাশাপাশি সংসদেও যুগপৎ আন্দোলন চলুক। কিন্তু দল এখনো শপথ না নেওয়ার পক্ষে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।’
বগুড়া-৪ আসন থেকে বিজয়ী মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত চাওয়া এখানে মুখ্য নয়, স্থানীয় নেতাকর্মীদের অনেকে চায় শপথ নিয়ে সংসদ গিয়ে আমি কথা বলি। আবার অনেকে মনে করেন, শপথ নেওয়া ঠিক হবে না। এখন দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত মো. হারুন অর রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা যারা নির্বাচিত হয়েছি, তারা সবাই সংসদে যেতে চাই। কথা বলতে চাই জনগণের পক্ষে। কিন্তু বিষয়টিকে নিছক সংসদ সদস্যপদ বাঁচানোর ব্যাপার হিসেবে নেওয়া যাবে না। আগেও নির্বাচিত হয়ে সংসদে গেছি। সুতরাং এমপি পদ টেকানো আমার কাছে মুখ্য নয়। যারা ভোট দিয়েছে, তাদের পক্ষে কথা বলতে চাই। অবশ্য সেটা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নয়।’
নিজের শপথ গ্রহণ এবং শপথে সহকর্মীদের আগ্রহের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির মহাসচি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা শপথ নিতে চাইবেন— এটাই স্বাভাবিক। তবে শপথ না নেওয়ার ব্যাপারে দলের যে সিদ্ধান্ত, সেটা এখনো অটুট আছে। এখন পর্যন্ত বলতে পারি, আমরা শপথ নিচ্ছি না।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, অন্য যেকোনো বিষয়ের মতো শপথ গ্রহণ নিয়েও বিএনপিতে পক্ষে-বিপক্ষে মত আছে। কেউ কেউ মনে করছেন, সংসদে গেলে অন্তত জয় পাওয়া ছয়টি আসন বিএনপির থাকবে। তাছাড়া যে কথাগুলো বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বিএনপি নেতারা বলছেন, সেই কথাগুলো দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদে গিয়ে বলার সুযোগ পাবেন। দলের হয়ে বলা তার বক্তব্যগুলো সংসদের কার্যবিবরণীতে লিপিবদ্ধ থাকবে।
আবার অনেকে বলছেন, এত কম সংখ্যক সংসদ সদস্য নিয়ে সংসদে গিয়ে তেমন কোনো লাভ হবে না। বরং সংসদকে বৈধতা দেওয়া হবে। ফের নির্বাচন দেওয়ার যে দাবি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে তোলা হচ্ছে, সেটির সুযোগ আর থাকবে না।
জানা গেছে, শপথ গ্রহণ ইস্যুতে বিএনপি নেতাদের মধ্যে পক্ষ-বিপক্ষ যে দু’টি ভাগ রয়েছে, সেখানে বিপক্ষ-ই শক্তিশালী। তিনশ আসনে নির্বাচন করে ২৯২ আসনে পরাজিত প্রার্থীদের কেউই শপথ গ্রহণের পক্ষে মত দিচ্ছে না। কিছু যৌক্তিক কারণের সঙ্গে পরাজিতদের ব্যক্তিগত ইগোও এখানে কাজ করছে বলে মনে করেন কেউ কেউ।
শপথ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লার দুইটি আসনে নির্বাচন করে হেরে যাওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘কারাবন্দি চেয়ারপারসন এবং বিদেশে চিকিৎসাধীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে শপথ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সম্মিলিতভাবে। নির্বাচিতরাও এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। এখন যদি তারা নিজেদের ইচ্ছায় কিছু করে, সেটা তাদের ব্যাপার।’
ঢাকা-১৩ আসনে নির্বাচন করে হেরে যাওয়া বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচিতদের মধ্যে কেউ যদি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নিতে চান, সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত শপথ না নেওয়ার পক্ষে। কারণ, এই নির্বাচনের ফল আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি।’
সারাবাংলা/এজেড/টিআর
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ সংসদ নির্বাচন