‘বিএনপির নেতৃত্বের মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস বিরাজ করছে’
৯ এপ্রিল ২০১৯ ২১:৪০
ঢাকা: বিএনপির পাঁচ নেতাকে যৌথভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘এতে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতারই নাম নেই। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় বিএনপির নেতৃত্বের মধ্যে অনেক সন্দেহ ও অবিশ্বাস বিরাজ করছে। বিএনপি মহাসচিবের কতৃত্ব খর্ব করতে আরও কয়েক জনকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির একে অপরের প্রতি প্রচণ্ড অবিশ্বাস থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন।
শপথ নিতে উদগ্রীব ৫ জন, ফখরুলের ‘কৌশলী’ না
হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘দেশে ভয়ের রাজত্ব কারা কায়েম করতে চেয়েছে এটা দেশের মানুষ ভালো করে জানে। ২০১৩ সালে, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি মানুষের ওপর পেট্রোল বোমা মেরেছে। হাজার হাজার মানুষকে আগুনে ঝলসে দিয়েছে। পাঁচ শয়েরও বেশি মানুষকে তারা আগুনে পুরিয়ে হত্যা করেছে। নিরহ মানুষের ওপর, অন্তঃসত্ত্বা নারীর ওপর, স্কুল ফেরত বালকের ওপর, এজতেমা ফেরত মুসল্লির ওপর, ঘুমন্ত ট্রাক ড্রাইভারের ওপর পেট্রোল বোমা মেরে হত্যা করেছে মধ্যযুগীয় বর্বরতায়। রাজনীতিতে ও দেশে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছে বিএনপি। এ কথাটি তাদের বেলায় প্রযোজ্য। রাজনীতিতে ভীতি ও অগ্নি সন্ত্রাস সংযোজন করেছে বিএনপি, এটা আমাদের রাজনীতিতে ছিলো না, এমনকি উপমহাদেশের রাজনীতিতে ছিল না।’
তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে চিঠি দেওয়া প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আমাদের বন্দি বিনিময় না থাকায় তারেক রহমানকে ফেতর পাঠাতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখানে প্রতিহিংসার কোনো বিষয় নেই। আইন আদালতের সম্মান রক্ষার্থেই তাকে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। আরেকটি বিষয় হচ্ছে তিনি যদি মনে করেন তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার সম্মুখীন হচ্ছে। তাহলে তো তার এখানে চলা আসা প্রয়োজন। তার সৎ সাহস থাকলে আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করা উচিত। কিন্তু তার সেই সাহস নেই। তার যে দুর্নীতির সেটি বাংলাদেশ সরকার উদঘাটন করেনি। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই উদঘাটন করেছে।’
২১ আগস্ট গ্রেনেট হামলার মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত, শাস্তিপ্রাপ্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা দিবালোকের ন্যায় সত্য। সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি ফৌজদারি মামলা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। বিএনপি উচিত, তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি উচিত ছিল তাকে নেতৃত্ব থেকে বাদ দেওয়া। তারা সেটি করেনি। বরং একজন দুর্নীতিবাজ ও হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে সবধরনের রাজনৈতিক সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এটা বিএনপি রাজনৈতিক দৈন্যতারই বর্হিপ্রকাশ।’
তথমন্ত্রী আরও বলেন, ‘হত্যা আর ক্যু-এর মধ্যে দিয়ে বিএনপির জন্ম, সেটি থেকে তারা বেরিয়ে আসেনি। যে বিএনপির নেতৃত্বে দেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তারেক রহমান যিনি দুটি মামলার আসামি তাকে রাজনৈতিক সুরক্ষা দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এটা ন্যায়ের শাসন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করার ক্ষেত্রে অন্তরায়।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কাগজে দেখেছি বিএনপির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে যৌথভাবে পাঁচজন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অনেক সিনিয়র নেতার নাম নেই। এটার মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় বিএনপির নেতৃত্বের মধ্যে অনেক সন্দেহ, অবিশ্বাস বিরাজ করছে। সেটারই বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে মহাসচিবের কতৃত্ব খর্ব করা এবং মহাসচিবের সঙ্গে আরও কয়েক জনকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। আমি কাগজের আরও দেখলাম ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে মহাসচিব একা যেতে পারবে না, একে অপরের প্রতি প্রচণ্ড অবিশ্বাস থেকেই এই সিদ্ধান্ত।’
বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে আন্দোলন কৌশল নির্ধারণ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এ মুখপাত্র বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণ করতে করতে ইতিমধ্যে ১০ বছর চলে গেছে। কৌশল নির্ধারণ করতে আর কতদিন লাগে এটা হলো দেখার বিষয়।’
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপকমিটির সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপসম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, আকতার হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেসসচিব আশরাফ সিদ্দিকী বিটুসহ অনেকে।
সারাবাংলা/এনআর/এমআই