তৃণমূলে নজর বিএনপি’র, পুনর্গঠনের কাজ চলছে পুরোদমে
১০ এপ্রিল ২০১৯ ১৮:৫০
ঢাকা: খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ‘মধ্যবর্তী’ নির্বাচনের দাবি আদায়ে রাজপথে নামার আগে দল পুনর্গঠনের কাজ করছে বিএনপি। এরই মধ্যে ৬২টি সাংগঠনিক জেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। বেশ কয়েকটি জেলার পুরনো কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে নতুন কমিটি। অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে কয়েকটি জেলাকে।
এছাড়া দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোকেও ভেঙে নতুন কমিটি দেওয়া হচ্ছে। আংশিক কমিটিগুলোকে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রূপ দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে কৃষক দল, তাঁতীদল ও ওলামা দলের আহ্বায়ক কমিটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত ২ মার্চ থেকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করে বিএনপি। ওই বৈঠকে জেলা কমিটির ‘সুপার ফাইভ’ (সভাপতি/আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিব, সিনিয়র সহ-সভাপতি/এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদক) নেতাদের মতামত গ্রহণ করছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকরা। তাদের সঙ্গে লন্ডন থেকে স্কাইপে যোগ দিচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) পর্যন্ত বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৬২টি সাংগঠনিক জেলার ‘সুপার ফাইভ’ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রুহুল কবির রিজভী। ১৫ এপ্রিলের মধ্যে মহানগর ছাড়া বাকি সাংগঠনিক জেলার ‘সুপার ফাইভ’ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষ করবেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বৈঠকগুলোতে তৃণমূল নেতারা মির্জা ফখরুল ইসলাম ও রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শেষে স্কাইপে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন তারেক রহমানের সঙ্গে। সরাসরি এই আলোচনায় জেলার সুপার ফাইভ নেতাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে— নিয়মিত সভার মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখা, নিষ্ক্রিয়দের তালিকা তৈরি করা, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা, মেয়াদোত্তীর্ণ (ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যন্ত) কমিটিগুলো পুনর্গঠন ও আংশিক কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রূপান্তর।
এরই মধ্যে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর, লালমনিরহাট, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, বরিশাল (উত্তর ও দক্ষিণ) খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম (উত্তর ও দক্ষিণ) জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর, নরসিংদী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জসহ ৬২টি সাংগঠনিক জেলার সুপার ফাইভ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির তিন শীর্ষ নেতা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স বুধবার (১০ এপ্রিল) বিকেলে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলার সুপার ফাইভ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলের শীর্ষ তিন নেতা। এর মধ্যে শেরপুরে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। নেত্রকোনা, জামালপুর, ময়মনসিংহ জেলার কমিটি গঠনের জন্য তিন দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জেলার ‘সুপার ফাইভ’ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হচ্ছে, তা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য তিন মাস সময় বেঁধে দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যেকোনো মূল্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক কাজ শেষ করে কেন্দ্রে প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দিচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি কেন্দ্রে পাঠানো খসড়া কমিটি যাচাই করে দ্রুত অনুমোদনের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে।
একমাস ১০ দিন ধরে চলে আসা ধারাবাহিক এ বৈঠকের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এজেন্ডা এখন একটাই— দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। সেই লক্ষ্য অর্জনে দলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে এবং সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
এদিকে কাজটি দ্রুত শেষ করতে প্রতিদিন অন্তত দুই/তিনটি জেলার সুপার ফাইভ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন বিএনপির তিন শীর্ষ নেতা। সর্বশেষ মঙ্গলবারও (৯ এপ্রিল) লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর জেলা বিএনপির নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর