আদালতে যা বললেন গ্রিনলাইনের মালিক
১০ এপ্রিল ২০১৯ ২০:৩৩
ঢাকা: দুর্ঘটনায় পা হারানো রাসেল সরকারকে পাচঁ লাখ টাকার চেক দিয়ে তার চিকিৎসাসহ সব কিছু করার সাধ্যমত চেষ্টা করবো বলে আদালতকে জানিয়েছেন গ্রিনলাইন পরিবহনের মালিক মো. আলাউদ্দিন। বুধবার (১০ এপ্রিল) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে তিনি এসব কথা বলেন।
শুনানির এক পর্যায়ে মালিক আলাউদ্দিনকে সামনে ডেকে নেন আদালত। পরে তার মুখ থেকেই শুনেন তিনি কী করতে চান।এক পর্যায়ে গ্রিনলাইনের মালিক আলাউদ্দিন আদালতকে বলেন, ‘আপনারা বিচারক, আল্লাহর পরেই আপনাদের স্থান। আমার কিছু কথা যদি আপনারা আল্লাহর ওয়াস্তে শুনেন কেমনে, কীভাবে দুর্ঘটনা হলো।’ তখন আদালত বলেন, সেইটাও আমরা শুনবো। আপনাদের বক্তব্য থাকতে পারে সেটা আমরা অবশ্যেই শুনবো।
দুপুরের মধ্যেই রাসেলকে ক্ষতিপূরণ দিতে গ্রিনলাইন মালিককে নির্দেশ
গ্রিনলাইনের মালিক আলাউদ্দিন তখন বলেন, ‘এইটা আপনি শুইনেন। আজকে আমি যেইটা দিয়ে গেলাম।’
এ সময় আদালত বলেন, ‘দেখেন আপনারা ব্যবসা-বাণিজ্য করবেন। মানুষের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেটাও তো দেখতে হবে। এই যে ধরেন আপনি বিদেশে গেছেন চিকিৎসার জন্য আমরা কোন আদেশ দেয়নি ‘
মালিক তখন বলেন, ‘আমি চিকিৎসা রেখেই চলে এসেছি।’
আদালত বলেন, ‘সুতরাং আপনাদের কোনো কথা থাকলে বলবেন অবশ্যই আমরা শুনবো। মামলাটাতো পেন্ডিং আছে। সাভারের সিআরপি আছে ওখানে নাকি খরচ কম। ভালো চিকিৎসা হয়। সেখানে নিয়ে একটা পা লাগানোর ব্যবস্থা করেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।’
তখন মালিক বলেন, ‘আমি ওনাদের (রাসেল) সঙ্গে যোগাযোগ করে যতটুকু আমার সাধ্যে কুলায় আমি করবো।’
আদালত বলেন, ‘মনেরও একটা প্রশান্তি আছে। দেখেন ইদানিং মানুষ বাড়ছে, গাড়ি-ঘোড়াও বাড়ছে। চালকেরাও বেপরোয়া হয়েছে। একজন চালককে আট ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালানোর সুযোগ না দেওয়াই উচিত। এই জিনিসগুলেঅ আপনারা মালিকদের দেখা উচিত। আপনারা যদি একজন চালককে প্রোপারলি (সঠিকভাবে) ঘুমাতে না দেন। তারও তো ক্লান্তি আছে। এখন তারে যদি মানসিক বিশ্রাম না দেন। তাকে বিশ্রম না দিয়ে তাকে যদি আবারও গাড়ি চালাতে বলেন অথবা বেশি টাকার জন্য সেও গাড়ি চালায়। এতে তার মানসিক অবস্থা ভালো থাকছে না। দুর্ঘটনা তো ঘটবেই।’
‘এই যে ঘটনা ঘটেছে তা কিন্তু দুর্ঘটনার পর্যায় পড়ে না। সে গাড়ি থামাতে গেল অথচ আপনার চালক তার ওপর দিয়ে চালিয়ে দিল—ফ্যাক্টে যা এসেছে। তবে যেহেতু মামলাটি পেন্ডিং আছে সেহেতু আমরা মন্তব্য করলাম না। কিন্তু এই যে বিষয়গুলা এটি বিবেচনা করে দেখা উচিত।’
বিচারপতি আরও বলেন, ‘আপনারা—আমরাও কিন্তু এদেশের মানুষ। আপনি মুরুব্বি হয়েছেন। আপনাদেরও দায়িত্ব আছে। বাস মালিক সমিতিরও দায়িত্ব আছে। এই যে দেখেন সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটলো। বাচ্চারা রাস্তায় নামলো। পুলিশেরও অবহেলা আছে। আপনাদেরও কিছু অবহেলা আছে। আপনারা জানেন আমি আর কারণ উল্লেখ করলাম না। এরা এদেশেরই সন্তান। একটি ছেলে মারা গেলে শুধু তার বাপ মারই গেল না। তারা দেশেরও সম্পদ।’
বিচারপতি আরও বলেন, ‘আমরা এ জায়গায় বসেছি আমার বাপের টাকায় না। এখানে ট্যাক্সের টাকা আছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রিকশা ওয়ালার টাকাও আছে। শুধুমাত্র একজন রিকশাওয়ালা নয় একজন ফকিরকেও ভ্যাট দিতে হয়, সবাইকে ভ্যাট দিতে হয়। সুতরাং সমস্ত পাবলিক প্রতিষ্ঠানে এদেশের জনগণের টাকা আছে। এইগুলা একটু মাথায় নিয়েন। আর তাদেরও এগুলো নিয়ে চিন্তা করা উচিত। একজন মানুষ মারা গেলে সে কিন্তু আর ফিরে আসে না। আবেদনে এক কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল আমরা কিন্তু তা দেয়নি। আমরা সেটি কমিয়ে ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’
এ সময় মালিক বলেন, ‘এটি আপনাদের বিবেচনার মধ্যে রইলো। আমার সাধ্যে যা কুলায় মানবতার খাতিরে তাকে সবকিছু করবো। যতটুকু আমার সাধ্যে কুলায়। আমার একশ কোটি টাকার একটা দায়বদ্ধতা আছে। গত দুই বছর ধরে আমার সব সম্পত্তি ব্যাংকে। গত তিনমাসে সাড়ে তিন কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। আমার বাপের কেনা সম্পত্তি থেকে আমি ব্যয় করছি। এটি আপনাদের বিবেচনার মধ্যে রইলো।’
এর আগে তিনি রাসেলের দুর্ঘটনার পরে তার পরিবারে তিনটি দুর্ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার বড় ছেলে চিরদিনের জন্য অন্ধ হয়ে গেছে। আমি নিজে অসুস্থ, আমার স্ত্রী অসুস্থ। অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে বলেও তিনি আদালতকে জানান।
পরে আদালত পাচঁ লাখ টাকার চেক রাসেল সরকারকে প্রদান করে বাকি টাকা পরিশোধে একমাস সময় দিয়ে আদেশ দেন আদালত।
সারাবাংলা/এজেডকে/এমআই