Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিদায়ের পরও সিডিএ’র প্রকল্প তদারকের ক্ষমতা চান ছালাম


১০ এপ্রিল ২০১৯ ২২:০৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিদায়ের পরও চলমান উন্নয়ন প্রকল্প তদারকির ক্ষমতা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আবদুচ ছালামের কাছে রাখতে একটি প্রস্তাব উত্থাপন হয়েছে সংস্থাটির বোর্ড সভায়। এ সংক্রান্ত একটি মনিটরিং কমিটি করে সেখানে বোর্ডের বর্তমান সদস্যদের অর্ন্তভুক্ত করার কথাও বলা হয়েছে ওই প্রস্তাবনায়।

বুধবার (১০ এপ্রিল) সিডিএ চেয়ারম্যান মো. আবদুচ ছালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এই প্রস্তাব উত্থাপনের পর সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

টানা ১০ বছর ধরে সিডিএ চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রথম এই পদে আসা নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আবদুচ ছালাম। ২২ এপ্রিল তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

এরপর নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পাচ্ছেন বলে আলোচনা চলছে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক মহলে। তবে এ বিষয়ে এখনও সরকারি কোনো আদেশ জারি হয়নি। ছালামের বিদায়ের গুঞ্জনের মধ্যেই বুধবার বসে বোর্ড সভা।

সূত্রমতে, সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন প্রস্তাব দেন, ছালামের অবর্তমানে বোর্ড সদস্যদের যেন প্রকল্প মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রস্তাবের পক্ষে গিয়াসের যুক্তি- প্রকল্পগুলো গ্রহণ এবং চলমান কার্যক্রম নিয়ে বোর্ড সদস্যদের অভিজ্ঞতা আছে। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখতে চান তারা।

গিয়াসের প্রস্তাবের জবাবে ছালাম বলেন- যদিও এটা আইনে নেই, তবুও এটা দরকার। তবে শুধু বোর্ড সদস্যরা নন, প্রকল্পের কাজগুলো যেহেতু আমি ভালো বুঝি, আমারও থাকা দরকার। এছাড়া আমার দায়িত্বে না থাকা নিয়ে চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে একটা ক্ষোভ আছে। সেটা বিবেচনায় নিয়েও আমার থাকা দরকার।

জানতে চাইলে বোর্ড সদস্য কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিডিএ একসময় শুধু নকশা প্রণয়নের কাজ করত। ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের হাতে নেওয়ার পর প্রথম রাজনৈতিক বিবেচনায় একজনকে সিডিএ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন। একইভাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় আমরাও বোর্ড সদস্যের দায়িত্ব পাই। আমাদের কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে প্রকল্পের কাজে যুক্ত থেকে চট্টগ্রামের উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব আমি দিয়েছি।’

আরেকজন বোর্ড সদস্য স্থপতি আশিক ইমরান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মনিটরিং কমিটির মতো একটা কিছু করার প্রস্তাব এসেছে। তবে এটা চূড়ান্ত হয়নি। বোর্ড সদস্যদের মধ্য থেকেই প্রস্তাব এসেছে- চেয়ারম্যানকে যেন কমিটির প্রধান করা হয়। এটা মূলত উনি (ছালাম) চলে যাবার পর প্রকল্পের কাজে যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য বলা হয়েছে। কিন্তু সিডিএ তো একটি সরকারি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। আইনে এটা আছে কি-না সেটা যাচাই-বাছাই করতে হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বোর্ড সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘মূলত গিয়াস ভাইয়ের প্রস্তাবটিই ছালাম ভাই লুফে নেন। তিনি নিজেই বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে প্রকল্প মনিটরিংয়ে যুক্ত হবার আগ্রহ প্রকাশ করেন। যেহেতু তিনি বিদায়ী চেয়ারম্যান, সেজন্য তাকে প্রধান করে মনিটরিং কমিটি করার কথা বলা হয়েছে।’

সূত্রমতে, বৃহস্পতিবার ও আগামী মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) আরও দু’টি বোর্ড সভা হবে। সেই সভায় প্রস্তাবটি আরও বিশদ আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আলোচনার পর সেটি চূড়ান্তভাবে গৃহীত হলে, তারপর রেজুলেশন আকারে সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিডিএ চেয়ারম্যান মো. আবদুচ ছালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজের তদারকের বিষয়টি আমি প্রস্তাব করিনি। এটা বোর্ড সদস্যরা করেছেন। তারা আমাকে রাখার কথা বলছেন। কিন্তু আমি বলেছি-এটা যদি করতে হয়, শতভাগ আইন মেনেই করতে হবে। প্রস্তাবটি যাচাইবাছাই করে দেখব, তারপর পদক্ষেপ নেব।’

সূত্রমতে, বোর্ড সভা শেষ হওয়ার পরই সদস্যদের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিমত দেখা দেয়। কয়েকজন সদস্য নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে আলোচনায় থাকা জহিরুল আলম দোভাষের বাসায় গিয়ে তাকে বিষয়টি জানান। এসময় দোভাষ নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। সেখান থেকেই কয়েকজন সদস্য সিডিএ’র সচিবকে ফোন করে এই প্রস্তাবে তারা একমত নন বলে জানিয়ে দেন।

এ বিষয়ে জানতে জহিরুল আলম দোভাষকে ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল সিডিএ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন ব্যবসায়ী আবদুচ ছালাম। ফ্লাইওভার নির্মাণ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, আউটার রিং রোড, জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগাপ্রকল্পসহ কয়েক হাজার কোটি টাকার বেশ কয়েকটি প্রকল্প এসেছে তার হাত ধরে।

তবে বিশেষজ্ঞ মতামত ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিযোগে সমালোচিতও হয়েছেন ছালাম।

সারাবাংলা/আরডি/এমএইচ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর