সরকারি লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করলে আইন মানতে হবে : তথ্যমন্ত্রী
১১ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:২৯
ঢাকা: তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন সরকারের লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করতে হলে মানতে হবে আইন। ডাউনলিংক করা বিদেশি টিভিতে বেআইনিভাবে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথাও জানান তথ্যমন্ত্রী।
বুধবার (১০ এপ্রিল) সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এসোসিয়েশন অফ টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স-এটকো’র সঙ্গে বৈঠকে এ সব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে সাত দিন সময়ের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এই নোটিশ পাওয়ার পরে বেঁধে দেয়া সময়েই ডিস্ট্রিবিউটররা জানিয়েছেন যে তারা বিদেশি চ্যানেলগুলোকে আইন মেনে বিজ্ঞাপনমুক্ত চ্যানেল সম্প্রচার করার কথা বলেছে। উনারা বিস্তারিত কি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তা মন্ত্রণালয়কে জানানোর জন্য সময় দেয়া হয়েছে। সেই জন্য আরও ১৫ দিন সময় দেয়া হয়েছে। যদি দেখা যায় আইন কার্যকর করার জন্য আরও সময় প্রয়োজন তবে তাও দেয়া হবে। কিন্তু আইন লঙ্ঘন করে বা পাশ কাটিয়ে সময় নষ্ট করার কোণ সুযোগ নেই। বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে যদি ব্যবসা করতে হয়, তাহলে আইন মানতে হবে।
বহির্বিশ্বের কথা উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্যে যখন বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো প্রদর্শন করা হয় সেখানে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন দেখাতে পারেনা। শুধুমাত্র সেখানকার বিজ্ঞান দেখাতে পারে। বাংলাদেশের কোনো পণ্য দেখাতে হলে সেখানে ট্যাক্স দিয়ে অনুমতি নিয়ে যথাযথ আইন ও নিয়মকানুন মেনে দেখাতে হয়। ভারতেও পাকিস্তানের কোনো বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারে না। আমাদের দেশে আইন লঙ্ঘন করে এটি করা হচ্ছে। আমরা শুধুমাত্র আইন বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছি।
মন্ত্রী আরও বলেন, একটি মহল বিভিন্নভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। আমরা কোণ টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করি না। বন্ধ করার কোন উদ্দেশ্যও আমাদের নাই।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আইন যদি কেউ না মানে তবে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের দুই বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হতে পারে। এমনকি লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে।
সাংবাদিকদের স্বার্থ জড়িত উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞাপন আইন ভঙ্গ করার কারণে টেলিভিশন এবং টেলিভিশনের সাথে সংশ্লিষ্টরাই শুধু নয়, সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনখাতসহ বাংলাদেশের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নেটওয়ার্ককে ডিজিটালাইজেশন করার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন নয় বাস্তবতা। ১৭ কোটি মানুষের দেশে এখন ১৪ কোটি মোবাইল ব্যবহারকারী। বারাক ওবামা তার বাবার দেশ কেনিয়াতে গিয়ে বলেছেন, মোবাইল নেটওয়ার্কে ব্যাংকিং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছে। সেখান থেকে আফ্রিকার দেশগুলোর অনেককিছু শেখার আছে। আমাদের গ্রামের কৃষক ক্ষেতে গিয়ে পোকার ছবি তুলে সেই ছবি উপজেলা হেডকোয়ার্টারে অথবা কৃষি অফিসারের কাছে পাঠায়। কিন্তু এখনো আমাদের নেটওয়ার্কটা ডিজিটাল হয়নি। সুতরাং এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত নিয়ে একটি সময় নির্ধারণ করা প্রয়োজন। কেবল নেটওয়ার্কে দেশি টেলিভিশনের ক্রমটি এ্যাটকো যে তালিকা দেবে, সে হিসেবে সম্প্রচারের জন্য আমরা নির্দেশ দেব।
গণমাধ্যমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে একযোগে কাজ করে যাওয়ার কোথাও বলেন তথ্যমন্ত্রী।
এর আগে এটকো’র সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী বলেন, টেলিভিশন শিল্পকে বাঁচাতে আইন মেনে চলতে হবে। বিদেশী চ্যানেলে ডিস্ট্রিবিউটর ও ক্যাবল অপারেটরদের সাথে আলোচনা করে ডিজিটালাইজেশনের জন্য একবছরের সময়সীমা বেঁধে দেয়া যেতে পারে।
এটকো’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোজাম্মেল বাবু বলেন, বিদেশি মডেল এবং বিদেশে নির্মিত বিজ্ঞাপন চিত্র সম্প্রচারের জন্য প্রিমিয়াম হারে শুল্ক নির্ধারণ করা উচিত। যখন দেশে শুধু বিটিভি ছিল, তখনো এ ব্যবস্থা ছিল।
ডিবিসি টিভি’র চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী তার বক্তব্যে সরকারের এ উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, এতে করে বিজ্ঞাপনশিল্প দেশের ভেতরে থাকবে। ক্যাবল নেটওয়ার্কে সম্প্রচারে দেশি টেলিভিশনগুলো প্রথমে থাকা নিশ্চিত করতে হবে, বলেন তিনি।
সভায় অংশ নেন এ্যাটকোর সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোজাম্মেল বাবু, আরিফ হাসান, বাংলাভিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল হক, সময় টিভি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আহমেদ জোবায়ের, বাংলা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সামাদুল হক, আরটিভি’র চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম এমপি, দীপ্ত টিভি’র পরিচালক কাজী জাহিন হাসান, চ্যানেল ২৪’র চেয়ারম্যান এ. কে আজাদ, ডিবিসি টিভি’র চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আজহারুল হক।
সারাবাংলা/এইচএ/এসবি