Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমার জেদে পদ্মাসেতু চার থেকে সাড়ে ৬ কি. মি. হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী


১১ এপ্রিল ২০১৯ ১৬:২৩

ঢাকা: ‘পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজের সময় কথা উঠেছিল সেতুর দৈর্ঘ্য মাত্র চার কিলোমিটারে নামিয়ে আনতে হবে। বলেছিলাম, সেটা আমি হতে দেব না। যে কারণে পদ্মাসেতু সাড়ে ছয় কিলোমিটার করা হয়েছে’—বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বিশ্ব পানি দিবস-২০১৯’ উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

এছাড়া যমুনা নদীতেও যদি ছয় কিলোমিটারের বা সাড়ে ছয় কিলোমিটারের মতো লম্বা সেতু তৈরি করা হতো তাহলে বারবার সেটি ভাঙনের মুখে পড়তো না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

নদী ব্যবস্থাপনাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের ব্যাপারে দেখেছি অনেক সরকার মিছিল করেছে, কেউ পদযাত্রা করেছে। কেউ আন্তর্জাতিকভাবে বারবার তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমি চিন্তা করি যে, দুটি প্রতিবেশি দেশের মধ্যে যে সমস্যাটা যেসটা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই তো সমাধান করতে পারি। এখানে আমাকে তৃতীয় পক্ষ টানতে হবে কেন। সেইভাবেই আমরা আলোচনা করে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গার পানি চুক্তি সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মধ্য দিয়েই।’ সেই সঙ্গে আরও ৫৪টি নদী নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে এবং আমাদের যৌথ নদী কমিশন কার্যকর আছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দীর্ঘদিন নদীগুলো ড্রেজিং হয়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতে তিনি কিছু ড্রেজার কিনে নদী খননের কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ১৯৯৬ সালে সরকারে আসার পর আমরা কতগুলি ড্রেজার ক্রয় করি। আর দ্বিতীয় দফায় এসে আমরা আরও অনেকগুলি ড্রেজার ক্রয় করি।’

বিজ্ঞাপন

পলি জমাট হয়ে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যার ফলে ভাঙনও বেশি দেখা দেয়, আমাদের ক্ষতিও হয়। যেটা আমাদের সমস্যা সৃষ্টি করে সেটাকে আমি আশীর্বাদে রূপান্তর করব কীভাবে। আশীর্বাদে রূপান্তর করার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার, আমাদের নদীগুলো নিয়মিত খনন করে নদীর গতিপথটাকে সঠিকভাবে রাখা, সেই সঙ্গে পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা।’

শুকনো মৌসুমে নদীগুলোতে পানি ধরে রাখার লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানান শেখ হাসিনা। এছাড়া তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য হলো, অধিক ফসল ফলানোর চিন্তা বা নানা চিন্তা করে জলাধারগুলোর চারদিকে বাঁধ দিয়ে এমন অবস্থার সৃষ্টি করা। এতে একসময় জলাধারগুলি নষ্ট হয়ে যায়। আর যেহেতু বর্ষাকালে প্রচুর পানি আসে তখন পানি নামার জায়গাটা পায় না, যার জন্য ভাঙনের সৃষ্টি অনেক বেশি হয়।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা যখন কোনো ব্রিজ তৈরি করি তখন সবসময় একটা প্রবণতা থাকে। নদী শাসন করে ব্রিজটা যাতে ছোট হয়, নদীকে ছোট করে ফেলা হয়, এই মতের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ ভিন্নতা প্রকাশ করি। আমি মনে করি, নদীকে কখনো ছোট করা উচিত না। স্বাভাবিকভাবে নদীর যে গতি সেটা যেন অব্যাহত থাকে। সেই সঙ্গে বর্ষাকালে যখন বেশি পানি আসবে তখন পানি যেন ধারণ করতে পারে তার জন্য জায়গা রাখা। তারপরেই কিন্তু আমাদের যেকোনো পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। নদী বাঁধ মানে না। প্রবল বর্ষার পানির জোয়ারটা পানির স্রোতটা এত বেশি যারা এই নদীতে চলাফেরা করেছেন বা বর্ষাকালে নৌকা স্পিডবোটে চড়ে থাকেন তাহলে দেখবেন যে পানির গতি বা স্রোত কত শক্তিশালী হয়।’

সেটা মাথায় রেখেই আমাদের একটা পরিকল্পনা নেওয়া দরকার। পানি আমাদের যেন ক্ষতি করতে না পারে, পানি যেন আমাদের আশীর্বাদ হয় সেইভাবে সব পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

‘আমি যখনি সরকারে এসেছি তখন থেকে সবসময় খুব বেশি জোর দিয়েছি, আমাদের সমস্ত নদীগুলি ড্রেজিং করার ওপরে, বিশেষ করে আমাদের নৌপথগুলি পুনরায় চালু করা, সারাদেশে একসময় নৌ-পথই ছিল মূল পথ।’

পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজের শুরুতে এর দৈর্ঘ কমানোর কথা উঠেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, না সেটা আমি দেব না। ঠিক যে পয়েন্টে নদীটা আছে, ওই পয়েন্টে মূল নদী কত কিলোমিটার সেটি হিসাব করে, বাফার জোন রেখেই আমাকে সেতু নির্মাণ করতে হবে। যেকারণে আপনারা দেখবেন পদ্মা সেতু সাড়ে ছয় কিলোমিটার।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু যমুনা নদীতে যে সেতুটা করা হয়েছে, ওটাও কিন্তু যদি ছয় কিলোমিটারের মতো লম্বা হত বা সাড়ে ছয় কিলোমিটারের মতো লম্বা হত; তাহলে কিন্তু বারবার এই ভাঙনের মুখে পড়ত না। কিন্তু সেখানে নদী শাসন করে, গাইড নির্মাণ করে বলা হয়েছিল একশ বছরে এটা কিছু হবে না, ফাটলও ধরবে না। কিন্তু দেখা গেল, দশ বছরও গেল না। সিরাজগঞ্জ ভাঙতে শুরু করে। এপার ভাঙতে শুরু করে, ওপার ভাঙতে শুরু করে। এই ধরনের সমস্যায় কিন্তু আমাদের পড়তে হয়।’

নদী ভাঙার আরও এক কারণ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পলি জমে ডুবোচরের সৃষ্টি হয়। যখনি কোথাও কোনো নদী ভাঙনের শুরু হয় তখন সকলের আগে নির্দেশ দেই ওখানে ডুবোচরটা কোনদিকে আছে, সেটা খুঁজে বের করে ওটা কেটে ফেলার নির্দেশনা দেই। কারণ ওটা কেটে ফেললে অটোমেটিক নদীর পানি গড়িয়ে যাবে। কিন্তু একটা কথা আছে, সবারই কিন্তু একটা নিজস্ব চরিত্র আছে। নদীরও একটা নিজস্ব চরিত্র আছে। এই নদী যখন প্রথম সৃষ্টি হয়, তখন প্রথম যে গতি তার ছিল, যেখান থেকে নদীটা বহমান ছিল হয়তো দেখা গেল, শতবর্ষ পরেও কখনো না কখনো সে হঠাৎ করে তার সেই পূর্বের জায়গাটা অর্থাৎ জন্মলগ্ন থেকে বহমান ছিল, ঠিক সেই জায়গা থেকে ফ্ল্যাশ ফ্ল্যাড হয়ে নেমে আসে। এটাও কিন্তু নদীর একটা চরিত্র। এই ঘটনা সিলেটের মনু নদীতে যেমন একবার ঘটেছিল।’

অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে শতবর্ষের ব-দ্বীপ সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ডেল্টা প্ল্যানের ওপর একটি ভিডিওচিত্রও প্রদর্শন করা হয়।

পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেন, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার।

সারাবাংলা/এনআর/এমআই

পদ্মাসেতু প্রধানমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর