বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলার প্রথম শুনানি ২৭ এপ্রিল
১১ এপ্রিল ২০১৯ ২১:৫১
ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলার প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী ২৭ এপ্রিল। এরআগে, গত ২ এপ্রিল মামলাটি শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। তবে, মামলা দায়েরের পর ইতোমধ্যে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট। এদিকে, মামলার পাশাপাশি রিজার্ভ চুরির অন্যতম দায়ী প্রতিষ্ঠান ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি)কে বিকল্পভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটি রাজি হয়নি। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলা দায়ের করার পর কোর্টে কার্যক্রম চলছে উল্লেখ করে আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো শুনানি হয়নি। প্রথম অবস্থা্য় শুনানির সময় পার্টিকে ডেকে শুনানি করবে না, আইনজীবীদের উপস্থিতিতে শুনানি করবেন কোর্ট।’ তিনি বলেন, ‘গত ২ এপ্রিল রিজার্ভ চুরির ঘটনায় শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে আগামী ২৭ এপ্রিল করা হয়েছে। তবে মামলার অনুষ্ঠানিক শুনানি এখন পর্যন্ত শুরু না হলেও আসামিদের নোটিশ দেওয়াসহ অনুষ্ঠানিক কার্যক্রম আদালত শুরু করছেন। মামলা দায়েরের পরপরই ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনসহ (আরসিবিসি) আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছের আদালত। ফিলিপাইনের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সমন জারির নোটিশ পেয়েছে, সেটাও আমরা জেনেছি।’
মামলা দায়েরের পাশাপাশি বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজি হাসান বলেন, ‘মামলার পাশাপাশি আমরা বিকল্পভাবে রিজার্ভ চুরির বিষয়টি নিষ্পত্তি করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা করতে ফিলিপাইন গিয়েছিলাম।আমাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইর্য়ক (ফেড) এবং ফিলিপাইনে গিয়েছিল। সেখানে আরসিবি‘র সঙ্গে একটি বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে ফেড বলেছে, এই মামলায় বাংলাদেশকে তারা সাপোর্ট দেবে। মামলার রায় হলে বাংলাদেশের পক্ষে রায় বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।’ তিনি বলেন, ‘ফিলপাইনের বৈঠকে আরসিবিসি বিকল্পভাবে সমাধানের বিষয়ে তেমন কোনো আগ্রহ দেখায়নি। শুধু বলেছে কিছু করলে তারা জানাবে, তবে এখন পর্যন্ত আরসিবিসি বাংলাদেশকে কিছু জানায়নি।’
আবু হেনা আরও বলেন, ‘রিজার্ভ চুরির মামলায় সহায়তা করতে দেশি আইনজীবীর পাশাপাশি আমেরিকান আইনজীবী রয়েছেন। আমেরিকান একটি রিগ্যাল ফার্মকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা মামলার বিষয়ে আইনি সহায়তা করছেন ‘
এরআগে, গত এক ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা দায়ের করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১০৩ পৃষ্ঠার দায়ের করা মামলায় ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি সাতটি প্রতিষ্ঠানসহ ২৫ জন অজ্ঞাতনামা লোককে বিবাদী করা হয়েছে। এরমধ্যে ফিলিপাইনের ম্যানিলাভিত্তিক রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) এবং আরসিবিসি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং ফিলিপাইনের মানি এক্সচেঞ্জ, ক্যাসিনোসহ যেসব স্থানে টাকা গেছে, সেসব প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও তাদের মালিককেও আসামি করা হয়েছে। রিজার্ভ চুরির অর্থ ক্ষতিপূরণসহ ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে দায়ের করা মামলা নিষ্পত্তিতে তিন বছর সময় লাগবে বলেও ইতোপূর্বে জানিয়েছেন মামলার আইনজীবী আজমাউলুল হোসেন কিউসি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি মামলার প্রতিবেদন ১৭ এপ্রিল
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইর্য়ক (ফেড) সঙ্গে মামলার বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। তারা মামলার জন্য বিভিন্ন নথি, তথ্য সরবারহসহ সাক্ষ্য দেবে। ইতোমধ্যে রিজার্ভ চুরির মামলা করতে গিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে নেয় হ্যাকাররা। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোডের মাধ্যমেবাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই অর্থ চুরি করা হয়। চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২ কোটি ডলার এবং বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার প্রথমে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় অবস্থিত রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) একটি শাখায় পাঠানো হয়। পরে এই অর্থ আরসিবিসি থেকে চলে যায় ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হওয়ার ১০ মাসের মধ্যে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ফেরত আনা হয়। এর মধ্যে রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার আগেই ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শ্রীলংকা থেকে ২ কোটি ডলার ফেরত আনা হয়। একই বছরের ১২ নভেম্বর ফিলিপাইন থেকে আরও ১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ফেরত আনা হয়েছে। পরবর্তী ২বছরের বেশি সময়ে আর কোনো টাকা উদ্ধার করা যায়নি। ফলে ফিলিপাইনে থাকা অবশিষ্ট ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার (৫৫৭ কোটি টাকা) এখনো ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। কবে আনা যাবে কিংবা আদৌ আনা যাবে কি না, তা নিয়েও নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করার মাধ্যমে এই অর্থ ফেরত পাওয়ার পথ তৈরি হয়েছে।
সারাবাংলা/জিএস/এমএনএইচ