নুসরাতের খুনিদের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল চট্টগ্রাম
১১ এপ্রিল ২০১৯ ২১:৫৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহানকে পুড়িয়ে হত্যার বিচার দাবিতে আজ উত্তাল হয়ে উঠেছিল চট্টগ্রামের রাজপথ। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে মানববন্ধন, মিছিল-সমাবেশে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের পেশাজীবী, রাজনৈতিক কর্মী ও ছাত্র-যুব-জনতা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছে।
এদিন বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে ‘চট্টগ্রামের ছাত্র যুব জনতার’ ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণ, খুন ও হত্যার ঘটনা বেড়েই চলছে। তাই নুসরাত জাহানের মৃত্যুর ঘটনাটি এড়িয়ে না গিয়ে সবাইকে প্রতিবাদ করতে হবে। প্রতিবাদের মাধ্যমেই নুসরাতের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
নুসরাত, তনু, আফসানা, পূজাসহ সকল নারীর ধর্ষক ও খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে বক্তারা বলেন, যদি যৌন নিপীড়নকারীদের শাস্তি না পায় তাহলে এসব ঘটনা চলতেই থাকবে।
নগর ছাত্রলীগের সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক খোরশোদ আলম জুয়েলের সভাপতিত্বে এবং সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা এম ইউ সোহেলের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন সেকান্দর চৌধুরী, সুচিন্তা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক জিন্নাত সোহানা চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মনসুর, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য নাজিম উদ্দিন ও আমিনুল করিম, নগর ছাত্রলীগের উপ সম্পাদক মিজানুর রহমান, এম আর হৃদয়, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিমসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
একইস্থানে চট্টগ্রামস্থ ফেনী জেলার বাসিন্দারাও নুসরাত হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেন।
এদিকে নগরীর চেরাগির মোড়ে প্রগতিশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা মানববন্ধন করে নুসরাতকে যৌন নির্যাতনে জড়িত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও হত্যাকারীদের বিচার চেয়েছেন। এতে ছাত্রনেতারা বলেন, নুসরাত হত্যার বিচার নিয়ে কোনো প্রহসন জাতি মেনে নেবে না। অতীতেও অনেক ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার বিচার হয়নি। এ রাষ্ট্রে যদি ধর্ষকেরা শাস্তি না পায়, তাহলে ধর্ষণ এভাবে চলতেই থাকবে। দেশের আনাচে-কানাচে যেভাবে ধর্ষণ বেড়ে চলেছে তার দায় বিচারহীনতার সংস্কৃতির এবং রাষ্ট্র-যন্ত্রের।
চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আতিক রিয়াদের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন বিপ্লব দাশ, এস এম শাহীন রেজা, জাহেদ, আসমা সাদাত, পুষ্প গুপ্তা, রকি ইসলাম, নিশান রায় ও শোভন দাশ। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সংগঠকরা নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এছাড়া, কোটা সংস্কার-বাদীদের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও নগর কমিটির উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে নগরীর ষোলশহর বিপ্লব উদ্যানের পাশে। সেখানে যোগ দেওয়া শিক্ষার্থীদের কারও হাতে ছিল ব্যানার, কেউ ফেস্টুন বুকে ঝুলিয়ে এসেছে।
কেউ লিখে নিয়ে এসেছেন, ‘আমার বোন মরল কেন? প্রশাসন জবাব চাই।’ কেউ লিখেছেন ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস।’ কেউ কেউ লিখেন, ‘বিচারহীনতার এই দেশে হেরে গেছে মানবতা, খুনি-ধর্ষকেরা উদ্যম নৃত্যে করে যায় পাশবিকতা।’ সবার মুখে মুখে একটিই স্লোগান—নুসরাত জাহানের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই।
পরিষদের নগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন, নগর কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আমির হোসেন, আরিফুল হক, মো. মুনতাসির, মো. আরমান ও চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রী নাজনিন সুলতানা।
মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ষোলশহর স্টেশন ঘুরে পুনরায় দুই নম্বর গেট এলাকায় এসে শেষ হয়।
নুসরাত জাহান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বিবৃতিতে শিক্ষকরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। সমিতির সভাপতি মো. জাকির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন কুমার চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই নিন্দা ও দাবি জানানো হয়।
সারাবাংলা/আরডি/এনএইচ