ভাঙনের আওয়াজ পাওয়া যায় জাপায়!
১২ এপ্রিল ২০১৯ ২৩:০০
ঢাকা: নেতৃত্বের লড়াই নিয়ে জাতীয় পার্টি (জাপা)-তে দু’টি গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। এক গ্রুপে রয়েছেন এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ, অন্যটিতে তার ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। এই দুই জনের মধ্যে দলটির নেতৃত্বে কে থাকবেন, তা নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে চলছে কোন্দল। আর এ অবস্থায় দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অনেকটাই অসহায়। কোনোভাবেই তিনি দলের ঐক্য ধরে রাখতে পারছেন না। দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতার মতে, এরশাদের অনুপস্থিতিতে জাপা ভেঙে দুই টুকরো হয়ে যাবে। এখনই সেই ভাঙনে আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে বলেও দলটির সিনিয়র নেতারা মনে করেন।
একাধিক দলীয় সূত্র জানায়, এরশাদ অসুস্থ। এবিএম রুহুল আমিনকে মহাসচিব পদ থেকে সড়িয়ে দেওয়ার পর দলের নেতৃত্বের ঘটতি দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় দলের হাল ধরতে চান জিএম কাদের। নিজের অনুপস্থিতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করার জন্য ছোট ভাই জিএম কাদেরকে আগাম মনোনয়ন দিয়ে রেখেছেন।
দল চালাতে ব্যর্থতা ও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত ২২ মার্চ গভীর রাতে জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দেন পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ। পর দিন বিরোধী দলীয় উপনেতার পদ থেকেও বাদ দেওয়া হয় জিএম কাদেরকে। এতে পার্টির সিনিয়র নেতারা খুশি হলেও বেঁকে বসেন বৃহত্তর রংপুরের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায় দলটির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা এসে তার পাশে দাঁড়ান। তিনি রংপুর জাতীয় পার্টির একটি অংশকে জিএম কাদেরের পক্ষে নিয়ে আসেন।
দুই সপ্তাহ না পার হতেই রংপুরের নেতাদের চাপের মুখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে গত বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাতে পুনরায় কো-চেয়ারম্যানেরর দায়িত্ব দেওয়া হয় জিএম কাদেরকে। এরপর শনিবার (৬ এপ্রিল) সকালে অন্য এক সাংগঠনিক নির্দেশে এরশাদ তার অনুপস্থিতিতে পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে জিএম কাদের থাকবেন বলে জানিয়ে গণমাধ্যমে প্রেসরিলিজ পাঠান। তার সর্বশেষ এই নির্দেশনা যেন আর কেউ পরিবর্তন করতে না পারেন, সে জন্য শতাধিক নেতাকর্মী দিনভর এরশাদের বাসভবন প্রেসিডেন্ট পার্কে অবস্থান করছেন। এমন পরিস্থিতিতে জাপার সিনিয়র নেতারাও এরশাদের বাসভবন এড়িয়ে চলছেন।
আরও পড়ুন: দুষ্টচক্রে জিম্মি জাপা, চলছে ‘সার্কাস’
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, এরশাদের বারবার সিদ্ধান্ত বদলের ঘটনায় গত দুই সপ্তাহে জাপায় গৃহবিবাদ তুঙ্গে ওঠে। এর ফলে দলটির সিনিয়র নেতা ও দলীয় সংসদ সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। তারা দলের অনুষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ করে দেন। পার্টির সাংগঠনিক কোনো খোঁজ-খবরও নেননি।
জাপার একজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের সিনিয়র নেতারা এখন ভিড় করছেন রওশন এরশাদের দিকে। তারা দলীয় বিষয় নিয়ে পৃথকভাবে বৈঠক করছেন রওশনের বাসভবনে। দলটির সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের গুলশানের বাস ভবনে তৃণমূল নেতাদের বৈঠক হচ্ছে প্রতিদিনই।
ওই সব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন নেতা সারাবাংলাকে জানান, এরশাদের অনুপস্থিতিতে জাতীয় পার্টি ভেঙে যাবে এটা নিশ্চিত। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে হবে জাতীয় পার্টি। সিনিয়র নেতারাও রওশন এরশাদের সঙ্গে থাকবেন।
এদিকে, এরশাদের দ্রুত সিদ্ধান্তের পরিবর্তনের বিষয়ে জাপার একজন সংসদ সদস্য বলেন, রংপুরের কয়েকজন নেতাকর্মী এরশাদকে অনেকটা জিম্মি করে জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহাল করতে বাধ্য করেছেন।
জাপার অন্য এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, দলটি সংসদে প্রধান বিরোধী দল হয়েছে, সংসদে ২২টি আসন পেয়েছে সরকারের সমর্থনেই। কিন্তু জিএম কাদের এ বাস্তবতা মানতে চান না। তিনি পার্টি চালাতে কারও সহযোগিতাও চান না। এভাবে দল চলতে পারে না।
দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের সঙ্গে জাপা সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি কোন দিকে যাচ্ছে, তা বলতে পারবো না। জিএম কাদের দলের নেতৃত্ব দিলে দলটির ভবিষ্যৎ বলতে কিছু থাকবে না। তিনি রাজনৈতিক লোক নন। কারও সঙ্গে তার সমন্বয়ও নেই।’
জানতে চাইলে জাপার ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আলম রুবেল বলেন, ‘দলটিতে বর্তমানে কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। আছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। ’ দলটি যেন ভেঙে না যায় সে জন্য তারা চেষ্টা করছেন বলেও দাবি করেন এই নেতা।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমএনএইচ/