গ্রামকে শহর বানাতে মনোযোগ দিয়েছে সরকার
১৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৯:১৫
ঢাকা: গ্রামকে শহর বানানোর নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পূরণে মনোযোগ দিয়েছে সরকার। নির্বাচনি ইশতেহারে দেওয়া এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এসব প্রতিশ্রুতির প্রাধান্য থাকবে, আবার পাঁচবছর মেয়াদী পরিকল্পনাতেও রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। এর মধ্য দিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকেই গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছানোর কাজ শুরু হবে। যেটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে আগামী ৫ বছরে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), আওয়ামী লীগ সরকারের ভিশন-২০৪১ এবং নির্বাচনি ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় থাকবে।’ সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি গ্রামকে শহর বানানোর সফল রূপায়ণ হবে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে।
গ্রামে শহরের মতো আধুনিক জীবনযাপনের অনুষঙ্গগুলো থাকবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ড. শামসুল আলম বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে এখনই বলা যাচ্ছে না। সেগুলো উল্লেখ থাকবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। তবে এটুকু বলা যায়, গ্রামে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হবে। এছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন, নিরাপদ জীবনযাপনের জন্য উন্নত আইনশৃঙ্খলার ব্যবস্থা এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মতো উদ্যোগগুলো থাকবে এটা বলা যায়।’
অন্যদিকে, আগামী অর্থবছরের এডিপি প্রসঙ্গে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নূরুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার এবং সরকারের যেসব কর্মসূচি রয়েছে সেগুলোর প্রতিফলন ঘটবে আগামী এডিপিতে। এ জন্য এডিপির জারি করা নীতিমালায় প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে গ্রামকে শহর বানানোর যে ঘোষণা সেটি বাস্তবায়নে শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছানো, এসডিজি বাস্তবায়ন এবং শত বছরের বদ্বীপ পরিকল্পনার দিকে যাতে নজর থাকে সে জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে।’
সূত্র জানায়, নির্বাচনি ইশতেহারে গ্রামকে শহর বানানোর যে ঘোষণা সেটির বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকেই। তাই এডিপি তৈরিতে এ বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং মধ্যমেয়াদী কৌশল ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকারের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)।
নতুন এডিপির অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও এসডিজি লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে অগ্রাধিকার খাতগুলোতে পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্দের মাধ্যমে উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মানব সম্পদ উন্নয়ন, কৃষি উন্নয়ন, পরিবহন, পরিবহন, ভৌত ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন, নগর উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া।
পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন জানান, এডিপি তৈরির নীতিমালায় প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ৮টি সাধারণ নির্দেশনা, বরাদ্দহীন নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ১২টি এবং প্রকল্পভিত্তিক অর্থবরাদ্দের ক্ষেত্রে ১০টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে উন্নয়নের প্রতিশ্রতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সেসব প্রতিশ্রুতির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরির কাজ করছে পরিকল্পনা কমিশন। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রধান প্রতিশ্রুতি গ্রামকে শহর বানানো এবং দেড় কোটি কর্মসংস্থান তৈরিসহ অন্যান্য বিষয়গুলো বাস্তবায়নের রূপরেখা থাকবে বলে জানা গেছে।
২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত পাঁচবছর মেয়াদে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা হবে।
পরিকল্পনাটি তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম জানান, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরির অংশ হিসেবে সামষ্টিক অর্থনীতির ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। এছাড়া, গবেষণাপত্র কী কী বিষয়ে এবং কয়টি হবে সেসব নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে একটি ধারণাপত্র তৈরির প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এটি শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া হবে বলে আশা করি। অনুমোদন পেলে এই ধারণাপত্রের আলোকে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করা হবে। আগামী ২০২০ সালের ৩১ মের মধ্যেই অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
ড. আলম আরও জানান, পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী গ্রামকে শহর বানানো। অর্থাৎ গ্রামগুলোতে শহরের নাগরির সব সুযোগ সুবিধা পৌঁছানো হবে। পাশ্চাত্যের দেশগুলোর মতো করে গ্রামগুলোকে সাজানো হবে। এক্ষেত্রে মানুষ একটি জায়গায় বসবাস করবে। যে যেটি করতে চায় করতে পারবে। কেউ কৃষি কাজ করবে, কেউ মৎস্য শিকার করবে, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চাইলে করবে তাছাড়া শিক্ষার সঙ্গে যারা যুক্ত তারা গ্রামে থেকেই সেই কাজ করবে। কারও পেশার ক্ষেত্রে কোনো বাধা আসবে না। তবে গ্রাম ও শহরের মধ্যে পার্থক্য থাকবে না। এটি কীভাবে করা হবে সেটিই থাকবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিবল্পনায়।
সারাবাংলা/জেজে/একে/জেএএম