‘অনলাইনে ভুয়া সংবাদ মোকাবিলাই বড় চ্যালেঞ্জ’
১৩ এপ্রিল ২০১৯ ২০:১১
ঢাকা: তথ্যপ্রযুক্তির বিপুল অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকতার ধরনেও অনেক পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন মিডিয়া বিশ্লেষকরা। তাদের ভাষ্য, ডিজিটাল পদ্ধতির ছোঁয়ায় গণমাধ্যমে নতুন রূপের সূচনা হয়েছে। ফলে বাড়ছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জও। অনলাইনে ভুয়া সংবাদ মোকাবিলাই বড় চ্যালেঞ্জ। শনিবার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়নে ‘অনলাইন সাংবাদিকতা: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানে তারা এমন অভিমত প্রকাশ করেন।
অনলাইন পত্রিকা ‘আন্দোলন ৭১ ডটকম’-এর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপক্ষে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘আন্দোলন ৭১ ডটকম’-এর সাংবাদিক আব্দুল হাকিম।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘সরকার গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের ভূমিকায় নয়, সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে। ’ তিনি বলেন, ‘অনলাইন কেউ বন্ধ করতে পারবে না। তবে এর অপব্যবহাররোধে দৃষ্টি দিতে হবে।’
ইকবাল সোবহান চৌধুরী আরও বলেন, ‘আগের সাংবাদিকতা ছিল একটা নেশা, এখন আর সেটি নেই। এখন সাংবাদিকতা হয়েছে পেশা। প্রযুক্তিই আজকের বাস্তবতা। এই বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আমাদের চলতে হবে। সভ্যতার চাকার সঙ্গে প্রযুক্তির চাকাও সামনে এগিয়ে যায়। এই প্রযুক্তির কল্যাণে স্মার্টফোনেই এখন সাংবাদিকতা। এ কারণে সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। তবে অপসাংবাদিকতা যেন না হয়, সেটি খেয়াল রাখতে হবে।’
সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ড. গোলাম রহমান বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তির কারণে সাংবাদিকতায় বহুত্ববাদিতা বেড়েছে। বিশাল জনগোষ্ঠী সম্পৃক্ত হয়েছে। তৈরি হয়েছে সম্ভাবনাও। যা আগে ছিল না। পাল্টেছে সাংবাদিকতার ধরনও। তবে এখানে নাগরিক সাংবাদিকতা ভিন্ন বিষয়।’ যদি কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপসাংবাদিকতা করে, তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
সাবেক হুইপ, অনুমতি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুস শহীদ বলেন, ‘গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। তবে তার মানে এই নয় যে, অসত্য, ভিত্তিহীন সংবাদ দিয়ে গুঞ্জন ছড়াবে।’ তিনি বলেন, ‘অনলাইনে ভুয়া সংবাদ মোকাবিলাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।’ সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব টিকিয়ে রাখতে এ ধরনের সংবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
সারাবাংলা.নেটের নির্বাহী সম্পাদক মাহমুদ মেনন খান বলেন, ‘বর্তমানে যে ক্লিকবেইজড জার্নালিজম চলছে, সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সুড়সুড়িসর্বস্ব কন্টেন্ট থেকে জার্নালিজমকে মুক্ত করতে হবে।’
সেমিনারের প্রবন্ধে ‘কম খরচে অনলাইন জার্নালিজম’ অংশের সমালোচনা করে মাহমুদ মেনন খান বলেন, ‘কম খরচে আসলে সাংবাদিকতা হয় না। ভালো বেতন না থাকলে ভালো সাংবাদিকতা হয় না বরং এতে অপসাংবাদিকতা হয়। এ ধরনের প্রবণতা থেকেও বের হয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘পর্নগ্রাফি ও মাদকসেবনের বিষয়টি যখন সাংবাদিকতায় আশ্রয় নেয়, তাহলে বলতে হয়, সাংবাদিকতা পচে গেছে। সেই পচন সাংবাদিকতাকে যদি আমরা সামনে তুলে আনতে চাই তাহলে, আমাদের কার্যকর সাংবাদিকতা নিয়ে ভাবতে হবে।’ এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।
আরও পড়ুন- তেঁতুল তত্ত্বের কারণেই নুসরাত হত্যাকাণ্ড: ইনু
প্রথম আলো অনলাইনের সাংবাদিক ড. কাবিল খান বলেন, ‘বিশ্বয়ানের যুগে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য অনলাইন সংবাদ মাধ্যমকে সপ্তাহের সাত দিন রাত দিন চব্বিশ ঘণ্টাই তরতাজা সংবাদ প্রচার করতে হয়। সংবাদ পরিবেশনে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের সরাসরি যোগাযোগ থাকায় গোটা প্রচার মাধ্যমকে আধুনিক সাংবাদিকতার প্রধান মাধ্যম হিসেবে মনে করা হচ্ছে।’
ড. কাবিল খান বলেন, ‘মিডিয়া বিশ্লেষকেরা মনে করছেন ইন্টারনেট ভিত্তিক সম্প্রচার মাধ্যমই হবে আগামীদিনের সংবাদ মাধ্যম। বিশ্বে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আগামী পাঁচ বছরে নতুন আরও একশ কোটি গ্রাহক তৈরি হবে। তাদের বড় অংশ ব্যবহার করবে স্মার্ট ফোন। এই স্মার্ট ফোনের সাহায্যে পেশাদার সাংবাদিকদের কন্টেন্ট তৈরি, ভিডিওধারণ ও সম্পাদনা করে দ্রুত সংবাদ প্রচার করতে হবে। এ ধরনের সাংবাদিকতাকে বলা হয় মোবাইল জার্নালিজম বা মোজো। সেই বিবেচনায় স্মার্ট ফোন শুধু একটি ফোনই নয়, সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে এটি হাতিয়ারও। একুশ শতকের সাংবাদিকদের এটিই হবে বড় চ্যালেঞ্জ।’
সাংবাদিক রাহুল রাহা বলেন, ‘প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে অনলাইন জার্নালিজম সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও এর জন্য প্রয়োজন নীতিমালা। তা না হলে যা ইচ্ছা, তাই হবে। ’ সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্ব না থাকলে পরিচয় সংকটে ভুগতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন ড. শেখ সফিউল ইসলাম, এবিসিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক সুভাষ সিংহ রায় প্রমুখ।
সারাবাংলা/ এজেডকে/এমএনএইচ